ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই;###;অবৈধভাবে স্টপেজ তৈরি করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ

হানিফ ফ্লাইওভারে যাত্রী ওঠানামা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১১ মার্চ ২০১৭

হানিফ ফ্লাইওভারে যাত্রী ওঠানামা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে

আরাফাত মুন্না ॥ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) ফ্লাইওভারে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা চলছে। ফ্লাইওভারের নক্সায় যাত্রী ওঠানামার কোন স্টপেজ না থাকলেও অবৈধ স্টপেজ তৈরি করে দিয়েছে ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ। ফলে ব্যস্ত ফ্লাইওভারটি ব্যবহৃত হচ্ছে বাস-লেগুনাস্ট্যান্ড হিসেবে। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। ফ্লাইওভারের ওপর এই অবৈধ স্টপেজ বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নাগরিকদের। সরেজমিন যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার ঘুরে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের ওপর অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে বাস বে। এছাড়া যাত্রীদের ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ৪টি স্থানে লোহার সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। ফ্লাইওভারে ওঠানামার র‌্যাম্পগুলোর সংযোগস্থলে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই এই সিঁড়ি দিয়েই নিয়মিত যাত্রীরা ওঠানামা করছে। বাস ছাড়াও হিউম্যান হলারে যাত্রীরা ওঠানামা করছে স্টপেজগুলোতে। এসব স্থানে বাসে ওঠার জন্য যাত্রীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ফ্লাইওভারের ওপর। এতে একদিকে যেমন যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে পথচারীদের এলোমেলো চলাচলের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব অবৈধ বাস স্টপেজের কারণে অনেক সময় ফ্লাইওভারের ওপরও ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হতেও দেখা গেছে। আরও দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের ওপর থাকা স্টপেজগুলোতে থামা গাড়িতে উঠতে যাত্রীরা একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এজন্য অবশ্য ডিভাইডারের মাঝে সামান্য ফাঁকা জায়গাও রাখা হয়েছে। এছাড়া যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তার দুই পাশের ফ্লাইওভারের ওপর যাত্রী ওঠানামা হয়। এখানে ফ্লাইওভার থেকে নিচে নামার জন্য তৈরি করা হয়েছে দুটি সংযোজন সিঁড়ি। সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, রাজধানীর সুপার মার্কেটের আগে র‌্যাব-৩ অফিসের সামনে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভেতরে, সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে, ধোলাইপাড় যাওয়ার পথে এভাবে বাস স্টপেজ তৈরি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় স্টপেজ তৈরি করা হয়েছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভেতরে। এখানে নিচ থেকে ফ্লাইওভারের ওপর ওঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিদিন যাত্রীরা সিঁড়ি দিয়ে উঠে সিলেট ও কুমিল্লাগামী বাসে যাতায়াত করে। আর বাসগুলো সায়েদাবাদ টার্মিনালের ভেতরের ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের ওপর সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। এতে টার্মিনালের ভেতরের বাসগুলো র‌্যাম্প ব্যবহার করে ফ্লাইওভারে উঠতে পারে না। তাই অনেক আন্তঃজেলা বাস টিকাটুলি ও গুলিস্তানের র‌্যাম্প দিয়ে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে দেখা যায়। জানা গেছে, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) ফ্লাইওভার উদ্বোধন করা হয় ২০১৩ সালের অক্টোবরে। চার লেনবিশিষ্ট এই ফ্লাইওভার বকশীবাজার মোড় থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে এই ফ্লাইওভার নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ফ্লাইওভারের ওপর অপরিকল্পিতভাবে যাত্রী ওঠানামার কারণে এটি যাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক স্থাপনা হয়ে উঠেছে। দুই বছরে এই ফ্লাইওভারের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন মারা গেছেন। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী চালক ও কয়েক যাত্রী জানান, এই ফ্লাইওভারের ওপর দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও রাজধানী সুপার মার্কেটের প্রান্তগুলোতে বাস বা অন্য গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীতে নিচের রাস্তা থেকে উপরে পথচারী ওঠানামার জন্য সিঁড়িও সংযুক্ত করা হয়েছে। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে মানুষের চলাচলের কারণে চালক-পথচারী উভয়ই ঝুঁকিতে পড়েছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল হাসান বলেন, ফ্লাইওভারের ওপর যাত্রী ওঠানামা করানো নিরাপত্তার দিক থেকে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এটি ফ্লাইওভারের বেসিক কনসেপ্টের বাইরে। এটি ফ্লাইওভারের ডিজাইনের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, ফ্লাইওভার হলো যানজট এড়িয়ে দ্রুত পারাপারের জন্য। ব্যস্ত ইন্টারসেকশন ক্রস করার জন্য এটা করা হয়েছে। সেখানে বাস স্টপেজ করার কোন সুযোগ নেই। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, এরকম একটি রানিং ফ্লাইওভারের ওপর বাস স্টপেজ করা কোনভাবেই উচিত নয়। দুই লেনের ফ্লাইওভারের ওপর বাস স্টপেজ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, যখনই একটি গাড়ি যাত্রী তোলার জন্য থেমে থাকবে তখন চলমান গাড়ির জন্য এটি বাধা সৃষ্টি করবে। দুর্ঘটনা ঘটবে। ফ্লাইওভারের ওপরও যানজটের সৃষ্টি হবে। এভাবেই দুর্ঘটনা ঘটছে।
×