ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুটি স্বাধীনতা এনে দেন বঙ্গবন্ধু ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ মার্চ ২০১৭

দুটি স্বাধীনতা এনে দেন বঙ্গবন্ধু ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণার ম্যান্ডেট একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। জাতির পিতার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ অত্যন্ত সুচিন্তিত ছিল বলেই দুটি স্বাধীনতা এনে নিতে সক্ষম হন। মাত্র ৫৪ বছর বয়সেই বঙ্গবন্ধু প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশ এই দুটি স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা মনগড়া ইতিহাস দিয়ে পঁচাত্তর পরবর্তী প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করেন। দীর্ঘ ২১ বছর দেশবাসীকে বিকৃত ইতিহাস শুনতে হয়েছে। এই সময়ে দেশে বঙ্গবন্ধুর নাম, ছবি প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। আসলে পঁচাত্তরের খুনী, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের মধ্যে কোন তফাত নেই। ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার বিকেলে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর আয়োজিত সেমিনারে সভাপতির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এই সেমিনারের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেই আপনারা ইতিহাস পাবেন। মূলত ভাষণটি ছিল ২৩ মিনিটের। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই সময় মাঠে উপস্থিত ছিলাম। মঞ্চের সামনে নয়, ঠিক পাশেই। যেটা রেকর্ড করা হয়েছিল সেটা ১৯ মিনিটের রেকর্ড। সেই ভাষণে গেরিলা যুদ্ধের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয় ছিল। এমনকি তিনি যদি না থাকতে পারেন বা হুকুম দিতে নাও পারেন তখন কি করতে হবে সেই কথাগুলোও তিনি বলে গেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। তারপরও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেখানে সুযোগ পেয়েছে তারা প্রতিবছর ৭ মার্চের এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল এবং অনেককে জীবনও দিতে হয়েছিল। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা। ৪৬টি বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি জনগণকে উজ্জীবিত করে যাচ্ছে। পৃথিবীর আর কোন ভাষণ নেই যে ভাষণটি এতো বছর ধরে মানুষ শুনছে, যার আবেদন এখনও এতটুকুও কমেনি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর সংখ্যাগরিষ্ঠরা কখনও বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং এই ভূ-খ-ের নাম যে বাংলাদেশ হবে সেটাও বঙ্গবন্ধু ঠিক করে দিয়েছিলেন। জয় বাংলা স্লোগান মাঠে নিতে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জাতির পিতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর দেশবাসী স্বাধীনতার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। পৃথিবীর কোন দেশ এত সফল অসহযোগ আন্দোলন করতে পারেনি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটানা কখনও ২ বছর জেলের বাইরে থাকেননি। তার মহান আত্মত্যাগ সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরির্তনের জন্য ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলেন। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে তা পরবর্তীতে অনেকে উপলব্ধি করেন। আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। তবে তিনি অমর, অব্যয়, অক্ষয়। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে বঙ্গবন্ধু কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: রাষ্ট্র ও সামজ কাঠামো পরিবর্তনের দিকদর্শন’ শীর্ষক এই সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী মাসরুবা হোসেন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মোঃ এ আরাফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিন্নাত হুদা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব কবি শেখ হাফিজুর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ মশিউর রহমান।
×