ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চারুকলার প্রাচ্যকলা বিভাগে ফ্রেস্কো ও টেম্পারা কর্মশালা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১০ মার্চ ২০১৭

চারুকলার প্রাচ্যকলা বিভাগে ফ্রেস্কো ও টেম্পারা কর্মশালা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চারুশিক্ষার্থীরা ভীষণ কৌতূহল নিয়ে পাথর ঘষছিলেন। জলের ছোঁয়ায় নানা বর্ণের পাথর থেকে বের করে আনছিলেন রং। প্রকৃতি থেকে খুঁজে নেয়া এ রং দিয়েই সৃজিত হবে প্রাচ্যকলা রীতির চিত্রকর্র্ম। আর পাথর ঘষে রং তৈরির করণকৌশল এবং শিল্প সৃষ্টিতে সেগুলোর ব্যবহার শিখিয়ে দিচ্ছিলেন ভারতের স্বনামধন্য শিল্পী নন্দদুলাল মুখোপাধ্যায়। কলকাতার শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা বিভাগের এ অধ্যাপকের পরিচালিত কর্মশালাটি নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে ধরা দেয় আগামীর শিল্পীদের কাছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের আয়োজনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ফ্রেস্্কো ও টেম্পারা বিষয়ক কর্মশালা। নয় দিনের এ কর্মশালা পরিচালনা করছেন নন্দদুলাল মুখোপাধ্যায়। তাঁর কাছ থেকে প্রাচ্যকলা রীতির অনুষঙ্গ ফ্রেস্কো ও টেম্পারা বিষয়ে শেখার সুযোগ পেয়েছেন বিভাগটির নির্বাচিত ২৫ জন চারুশিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কয়েকজন শিক্ষকও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-শান্তিনিকেতন শিক্ষাবিনিময় কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চলমান এ কর্মশালা চলবে ১৭ মার্চ পর্যন্ত। কর্মশালা থেকে সৃষ্ট শিল্পকর্ম নিয়ে পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে প্রদর্শনী। বিকেলে অনুষদের লেকচার থিয়েটার হলে ফ্রেস্কো ও টেম্পারা এ কর্মশালার উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দীন। অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন। কর্মশালা প্রসঙ্গে নন্দদুলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, আমি সারাটা জীবন এ শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে এসেছি। এতেই আমার আনন্দ। এখানে এসে দেখলাম শিক্ষার্থীদের শেখার অনেক আগ্রহ। অবশ্য প্রথম প্রথম সবারই আগ্রহের মাত্রাটা অধিক থাকে। তবে আশা করব শেষ পর্যন্ত এ আগ্রহ থাকবে। ফ্রেস্কো ও টেম্পারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে আমরা যে শিল্পের সন্ধান পাই সেটাই হচ্ছে ফ্রেস্কো। কোন স্থাপনাকে বিকৃত না করে সমতা স্থাপন করে সেখানে শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলাই হচ্ছে এ শিল্প-কৌশলের মূল বিষয়। সেই সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে ফ্রেস্্কো মাধ্যমে সৃষ্ট শিল্পকর্মটি যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়। আর টেম্পারার মাধ্যমে ধরে রাখতে হবে পাথর কিংবা অন্য কোন খনিজ থেকে বের করে আনা রঙের যথার্থ প্রয়োগটি। এসব কৌশলই শেখানো হবে কর্মশালার শিক্ষার্থীদের। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাচ্যকলা রীতি হচ্ছে এ ভূখ-ের নিজস্ব শিল্প সৃষ্টির মাধ্যম। তাই আপন শিল্পকে বাঁচাতে হলে শিকড় নিয়েই বাঁচতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাচ্যকলানির্ভর শিল্পচর্চায় বেশ ভাল কাজ হচ্ছে। কর্মশালা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। কর্মশালায় আঁকা ছবিগুলো নিয়ে আগামী ২৩ ও ২৪ মার্চ জয়নুল গ্যালারিতে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। দিলীপ দাসের চিত্রকর্মে নিসর্গের নান্দনিকতা ॥ তৎকালীন পূর্ব বাংলার মাদারীপুরে জন্মেছিলেন দিলীপ দাস। বাংলার নদী-নালা, খাল-বিল ও সবুজ-শ্যামলেই কেটেছে তাঁর শৈশব। এরপর পরিস্থিতির কারণে কৈশোরে পাড়ি জমান কলকাতায়। সেখানেই শুরু হয় তাঁর চিত্রকর হয়ে ওঠার যাত্রা। তবে তাঁর ক্যানভাসজুড়ে এখনও উঁকি দেয় আবহমান বাংলার রূপময় প্রকৃতি। নাগরিক জীবনকে পাশ কাটিয়ে চিত্রপটে সৃজনে ঘুরেফিরে আশ্রয় নেন নিসর্গের সন্নিকটে। জলরঙের পেলব সজীবতায় প্রাণ দেন প্রকৃতির। কলকাতার এ প্রখ্যাত নিসর্গনির্ভর শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী চলছে রাজধানী ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে ঠাঁই নিয়েছে এ চিত্রকরের ২৪তম একক প্রদর্শনীটি। নদীমাতৃক জীবনের কথা বলেছেন শিল্পী তাঁর ক্যানভাসে। নদীতীরে ভিড় করা সারি সারি নৌকার দৃশ্যময় ছবি বলে যায় নদীকে ঘিরে প্রাণ প্রবাহের কথা। আছে পাহাড়ের খাঁজের ভেতর থেকে ভেসে ওঠা বসতভিটার ছবি, যে ছবি বলে যায় প্রকৃতি ও জীবন একে অপরের পরিপূরক। এভাবেই নদীতীর, অরণ্য, মাঠ-ময়দান, ফুল, লতাপাতাসহ নিসর্গের নানা অনুষঙ্গ উঠে এসেছে প্রকৃতিপ্রেমী এ শিল্পীর ক্যানভাসে। নিজের শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে দিলীপ দাস বলেন, আধুনিক সভ্যতায় এই নগরায়নের যান্ত্রিকতা আমাকে যন্ত্রণা দেয়। তাই স্বস্তির খোঁজে বারবার ছুটে যাই নিসর্গের কাছে। অবারিত সৌন্দর্য বিছিয়ে রাখা প্রকৃতি আমাকে ভীষণ টানে। সে কারণেই ঘুরেফিরে আমার চিত্রপটে উঠে আসে নিসর্গের নান্দনিকতা। জলরঙে আঁকা ২৮টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো প্রদর্শনীর সূচনা হয় বুধবার। সপ্তাহব্যাপী শিরোনামহীন প্রদর্শনীটি শেষ হবে ১৪ মার্চ। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যায় ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দনিয়া পাঠাগারের বর্ণ অঙ্কন প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ॥ শেষ হলো দনিয়া পাঠাগার আয়োজিত ‘এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে’ শীর্ষক মাসব্যাপী বর্ণ অঙ্কন প্রতিযোগিতা। এক মাসে ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাত সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয় এ প্রতিযোগিতায়। বৃৃহস্পতিবার শেষ দিনে এ কে হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজের দিবা ও প্রাতঃ শাখার ৪৫৩ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। দনিয়া পাঠাগারের সভাপতি শাহনেওয়াজ জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি দনিয়ার রসুলপুরের শিশুমেলা প্রিপারেটরি স্কুলে পাঠ্যবইয়ের কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী বর্ণ অঙ্কন প্রতিযোগিতার সূচনা হয়। প্রাণ গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিযোগিতায় সহায়তা দিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। মাসব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, দনিয়া বর্ণমালা গ্রীন গার্ডেন স্কুল, শেরেবাংলা আইডিয়াল স্কুল, সরকারী ঢাকা বধির হাই স্কুল, দনিয়া সরকারী প্রাথমিক স্কুল, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার অংশ নেয়ার আগে শিশুদের পাঠ্যবই থেকে কবিতা-ছড়া আবৃত্তি করে শোনান সঞ্জনন ও তামান্না সারোয়ার। স্কুলে স্কুলে মাতৃভাষার চর্চা, বায়ান্নর ইতিহাস এবং দেশের প্রতি ভালবাসার কথা তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আগামী ২৪ মার্চ শিল্পকলা একাডেমিতে বিজয়ী ৬ বিভাগের ১৫০ শিশুকে পুরস্কৃত করা হবে।
×