ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১ এপ্রিল থেকে ঢাকায় ৫ দিনের বিশাল আয়োজন

আইপিইউ সম্মেলনে দেশের সাফল্যগাথা তুলে ধরার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ মার্চ ২০১৭

আইপিইউ সম্মেলনে দেশের সাফল্যগাথা তুলে ধরার উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সাফল্য ও অগ্রযাত্রা তুলে ধরা হবে। গত আট বছরে দারিদ্র্য জয় করে মধ্য আয়ের দেশে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সময়ে দেশের রফতানি, প্রবৃদ্ধি, রেমিটেন্স, শিল্পায়নে অবকাঠামো উন্নয়ন, এমডিজি অর্জন, কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং নিজস্ব অর্থায়নে বড় বাজেট দেয়াসহ অগ্রযাত্রার যে গল্প তৈরি হয়েছে তা প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ঢাকার শেরেবাংলা নগরের যে জায়গায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা হয়ে থাকে সেখানেই একটি মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। মূলত, রূপকল্প-২১ ও ভিশন-৪১ অর্জনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সফলগাঁথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরাই এই মেলার মূল লক্ষ্য। এর ফলে আইপিইউর সদস্য ১৭১ দেশের অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানরা একযোগে বাংলাদেশের সাফল্য অর্জনের গল্প জানতে পারবেন। আগামী ১ থেকে ৫ এপ্রিল ঢাকায় পাঁচদিনব্যাপী ১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ সভায় আইপিইউর ১৭১ সদস্য রাষ্ট্রের স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার এবং পার্লামেন্টেরিয়ানরা অংশগ্রহণ করবেন। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এই সম্মেলনের জন্য ইতোমধ্যে প্রতীকী বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন সফল করতে ইতোমধ্যে ব্যাপক আয়োজনের প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের পক্ষ থেকেও আইপিইউ সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, উদ্যোক্তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা করবেন আইপিইউ সদস্যদের সঙ্গে। ওই আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, আইপিইউ হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সংসদীয় সংস্থা, ১৮৮৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এর সদস্য রাষ্ট্র ১৭১ এবং সহযোগী সংস্থা ১১। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এই সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। সংস্থার বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। গত বছর জেনেভায় ১৩৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংসদীয় সংলাপে ও মানুষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা প্রদান, পার্লামেন্ট এবং পার্লামেন্ট মেম্বারদের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়, যোগাযোগ ও সহযোগিতা প্রদান, আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে মতামত প্রকাশ, সংসদীয় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের স্বার্থে মানবাধিকার রক্ষণ ও উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করা আইপিইউর অন্যতম উদ্দেশ্য। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট ঘোষণায় জানিয়েছেন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ সব সময় ছিল। বর্তমান সরকার এই সম্পর্ক জোরদারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসবাদ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের সঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন, আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক সহযোগিতা ও বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন ও অংশগ্রহণের জন্য সরকার বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রেখেছে। জানা গেছে, মাত্র দশ বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রায় তিনগুণ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার কমে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। এই সময়ে রফতানি বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ এবং সোয়া তিনগুণ বেড়েছে প্রবাস আয়। প্রায় ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ববাসীকে জানাতে চায় সরকার। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় গত আট বছরে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্য আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রূপকল্প-২১-এর মধ্যে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এ স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দশটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ১০ বিশেষ উদ্যোগ হচ্ছেÑ ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচী, সকলের জন্য বিদ্যুত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ। মেলায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার স্টল রাখা রাখা হবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাটপণ্য, হস্তশিল্প, নিটপণ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন করা হবে। মেলায় রূপালি ইলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মৌসুমি ফলমূলও প্রদর্শন করা হবে। এ প্রসঙ্গে এফবিবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আইপিইউ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় দুই শ’ দেশের স্পীকার ও অভিজ্ঞ সংসদ সদস্যরা অংশগ্রহণ করবেন। সরকার এত বড় আয়োজন করতে পারছে এটাই বড় সাফল্য। তিনি বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিরাট অর্জন রয়েছে। বিশ্ববাসীকে এটা জানানোর প্রয়োজন আছে। আশা করছি, এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। শুধু তাই নয়, বিদেশী উদ্যোক্তারা এ দেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। জানা গেছে, জঙ্গীবাদ-বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মুখেও বর্তমান সরকার উন্নয়নের পথে হাঁটছে। আগামী ২০২১ সালে এ উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রাথমিক ধাপ শেষ হবে। কিন্তু ২৬ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য মধ্য মেয়াদে যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তা হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কর্মসৃজন, দক্ষ উৎপাদনশীলতা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং টেকসই পরিবেশবান্ধব নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। এসব বিষয় মেলার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হবে।
×