ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনগণ ও দেশের জন্য কাজ করছি বলেই অনেকের পছন্দ হয় না

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১০ মার্চ ২০১৭

জনগণ ও দেশের জন্য কাজ করছি বলেই অনেকের পছন্দ হয় না

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, প্রত্যেক দেশেই নির্বাচন হয় রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে। আর আমরা নির্বাচন চাই কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে। কারণ আমরা একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করি না। আমরা যদি একজন আরেকজনকে বিশ্বাস না করি তবে জনগণ আমাদের বিশ্বাস করে ভোট দেবে কী করে? তাই একসঙ্গে বসে মিলেমিশে কথা বলতে হবে। জনগণ ও দেশের জন্য যেটা ভাল সেটাই করতে হবে। যদি যে কোন বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি তাহলে উন্নয়নকাজে কোন ব্যাঘাত ঘটবে না। বৃহস্পতিবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে তিনি আরও বলেন, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তখন বিরোধী দল একটা না একটা সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করে। সরকারী দল তার পেছনে ছোটে। এতে উন্নয়নকাজে ব্যাঘাত ঘটে। সরকারী দল বিরোধী দলকে দমাতে ব্যস্ত থাকে, এজন্য উন্নয়নকাজে ব্যাঘাত ঘটে। জনগণের জন্য যত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই হোক না কেন, কোন সময়ে আমরা (রাজনীতিবিদ) একমত পোষণ করি না। এটাই আমাদের রাজনৈতিক বিশেষত্ব। এটা আমাদের ছাড়তে হবে। একসঙ্গে মিলেমিশে কথা বলতে হবে। দেশের ও জনগণের জন্য যেটা ভাল সেটাই করতে হবে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ করে রওশন এরশাদ বলেন, অনেকে আমাদের গৃহপালিত বিরোধী দল বলার চেষ্টা করে। আমি তাদের প্রশ্ন করতে চাই, সংসদে থাকতে আপনারা (বিএনপি) কী করেছেন? সংসদে যাননি, জনগণের কথা না বলে কী করেছেন? তিনি বলেন, আমরা সংসদে থেকে দেশের জন্য কাজ করছি বলেই অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। আমরা যদি মিলেমিশে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাই, তবে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। আমাদের যতটুকু সম্ভব সে সহযোগিতা অবশ্যই আমরা দেব। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে সুশাসন ও আইনের শাসন থাকবে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি সারাবিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, দেশের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ এখন রফতানি করলেও ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মায়ের মন আছে। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। ভেজালযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে আগামী প্রজন্ম ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখবে কিভাবে? তাই নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে পারেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী। তিনি চেষ্টা করলেই তা পারবেন বলে আমি আশাবাদী। যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় রাস্তাঘাট কম হলেও গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কর্মঘণ্টা যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে, কালো ধোঁয়ায় রাজধানীর বায়ুদূষণ করছে। রওশন এরশাদ আরও বলেন, আমাদের শিক্ষা জ্ঞাননির্ভর না হয়ে সনদনির্ভর হয়ে পড়ছে। জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত ভর্তি হতে পারছে না। পরীক্ষায় এখনও নকল বন্ধ হয়নি। কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে তারা বিপথে যাবে। হকারদের বিকল্প পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ মোটেই ঠিক নয়। তিনি বলেন, মাদক দেশে যেভাবে ছড়িয়ে গেছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। মাদকের ছোবল থেকে ছেলেমেয়েদের বাঁচাতে হলে এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জঙ্গীবাদের মতো বিপথে তারা যাতে না যায় সেজন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পর্যন্ত জঙ্গীবাদে জড়াচ্ছে। কারা এদের বিপথে ঠেলে দিচ্ছে তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। বিরোধীদলীয় নেতা দেশের সকল বিভাগে হাইকোর্টের একটি করে বেঞ্চ স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, এটা হলে জনগণকে ঢাকায় আসতে হবে না, ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তিনিও এ বিষয়ে রাজি আছেন। তিনি সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনেরও দাবি জানান।
×