ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় আটককৃতরা ৭ দিনের রিমান্ডে, মামলা ডিবিতে

পুলিশকে হামলাকারী ২ জঙ্গী অস্ত্র চালনা ও বোমা তৈরিতে দক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১০ মার্চ ২০১৭

পুলিশকে হামলাকারী ২ জঙ্গী অস্ত্র চালনা ও বোমা তৈরিতে দক্ষ

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ কুমিল্লার চান্দিনায় যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশিকালে হাইওয়ে পুলিশের ওপর বোমা হামলাকারী ২ জঙ্গী হাসান ও জহিরুল ইসলাম ওরফে জসিম আধুনিক অস্ত্র চালনা ও শক্তিশালী যে কোন ধরনের ডিভাইস-বোমা প্রস্তুতে পারদর্শী। বুধবার রাতে চান্দিনা থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর ফিরোজ হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গী হাসান অস্ত্র চালনাসহ পুলিশের ওপর হামলায় ব্যবহৃত উদ্ধারকৃত বোমাগুলো তাদের তৈরি বলে জানায়। এ ছাড়াও রিমান্ডে জঙ্গী তদন্তকারী সংস্থাকে আরও চাঞ্চল্যকর গুরত্বপূর্ণ নানা তথ্য প্রদান করছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অপর জঙ্গী জহিরুল ইসলাম প্রকাশ জসিম কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে জঙ্গী হাসান ও জসিম চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে ফেনী আসে। পরে ওইদিন ঢাকা অভিমুখী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে করে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে তারা রওয়ানা করে। বাসটি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর এলাকায় পৌঁছলে অধিক গতির কারণে হাইওয়ে পুলিশ বাসটিকে ধাওয়া করে আটকের পর তল্লাশি শুরু করে। এ সময় ২ জঙ্গী বাস থেকে নেমে পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে পালাতে থাকে। পুলিশও ২৪ রাউন্ড পাল্টা গুলি ছুড়ে। পুলিশ-জনতা ধাওয়া করে জঙ্গীদের আটক করে এবং ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে। আটককৃতদের তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওইদিন রাতেই পুলিশের একটি দল জঙ্গী হাসানকে নিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২৯টি গ্রেনেড, চাপাতি, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। পৃথক ঘটনায় চান্দিনা থানায় একটি ও মিরসরাই থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করে কুমিল্লার পুলিশ। পুলিশের ওপর বোমা হামলা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর ফিরোজ হোসেন বৃহস্পতিবার জানান, আটক জঙ্গীদের মধ্যে হাসানকে নিয়ে মিরসরাইয়ে অভিযান শেষে ৭দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জঙ্গী হাসানসহ তার সহযোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জঙ্গী জহিরুল ইসলাম প্রকাশ জসিম অস্ত্র নিখুঁতভাবে চালনাসহ যে কোন ধরনের আধুনিক ডিভাইস-শক্তিশালী বোমা প্রস্তুতে পারদর্শী। কুমিল্লায় পুলিশের ওপর ব্যবহার করা ও উদ্ধার হওয়া বোমাগুলো তারা নিজেরাই তৈরি করেছে বলে পুলিশকে জানায়। তারা জেএমবির সদস্য, ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতার সৃষ্টির উদ্দেশে এসব বোমা নিয়ে যাচ্ছিল। রিমান্ডে থেকে হাসান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে বলে পুলিশ জানায়। মামলার এজাহার অনুযায়ী হাসানের গ্রামের বাড়ি বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত হোসাইন। অপর জঙ্গী জহিরুল ইসলাম প্রকাশ জহির টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা গ্রামের (৩ রাস্তার মোড়, বাইপাস) আব্দুল মজিদের পুত্র। কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন জানান, তাদের দেহ ও শরীরের গঠন দেখে মনে হয় তারা বিশেষ বাহিনীর মতো ট্রেনিং প্রাপ্ত, অস্ত্র চালনা, বোমা প্রস্তুত ও আইটিতেও তারা উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের নেপথ্যে থাকা কারিগর ও হোতাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। বাড়ির মালিক বিএনপি নেতাসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা ॥ চট্টগ্রাম অফিস/মিরসরাই সংবাদদাতা জানায়, বুধবার চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জঙ্গী আস্তানা থেকে গ্রেনেড ও বোমা উদ্ধারের ঘটনায় বাড়ির মালিক বিএনপি নেতা রিদওয়ানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর আগে তিনিসহ ১০ জনকে আসামি করে মিরসরাই থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। মিরসরাইয়ের ওই ঘটনায় পুরো উপজেলাজুড়ে বৃহস্পতিবার দিনভর আতঙ্ক বিরাজ করে। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা রুজু করেছেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ওঠা দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তদন্ত করা হবে বলে জানান পুলিশের এএসপি মাহবুবুর রহমান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, উদ্ধার করা ২৯টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রেনেড, ৪০টি পাওয়ার জেল, ২৮০ প্যাকেট কার্বন স্টিল বল, ১১ কেজি বোমা তৈরির সরঞ্জাম চট্টগ্রাম থেকে আসা মেট্রোপলিটন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ টিমের সাহায্যে নিষ্ক্রিয় করার পর তা আলামতের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাড়ির মালিক রিদওয়ানকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। একই মামলায় কুমিল্লায় আটক করা হাসান (৩০) এবং জসিমকেও (৩২) আসামি করা হয়েছে। এই বিষয়ে এএসপি সার্কেল (মিরসরাই) মাহবুবুর রহমান জানান, মিরসরাই পৌরসভার সকল কাউন্সিলরের মাধ্যমে পৌর এলাকায় ভাড়াটিয়ার তথ্য সরবরাহ ও সকল আগন্তুকদের বিষয়ে কাউন্সিলরদের ব্যাপক খোঁজ খবর রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এই বিষয়ে উদাসীন কেন ছিলেন তাও তদন্ত করে দেখা হবে।
×