ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অংশ নিতে পারে দেশী-বিদেশী প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ॥ আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১০ মার্চ ২০১৭

অংশ নিতে পারে দেশী-বিদেশী প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ॥ আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার আশঙ্কা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে বড় ধরনের আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। হামলায় অংশ নিতে পারে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দেশী-বিদেশী জঙ্গীরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষের যাতায়াতের ওপর অত্যধিক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এক প্রকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে একটি বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করা এমন বয়সী শিক্ষার্থীদের পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াসহ জঙ্গী তৎপরতা থাকা দেশগুলোতে যাতায়াত। জঙ্গীবাদের বিস্তার রোধসহ নানা বিষয়ে একটি কৌশলপত্র ঠিক করতে আগামী ১২ মার্চ থেকে দেশে চৌদ্দ দেশের প্রতিনিধিদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবশ্য এতে অংশ নিচ্ছে না পাকিস্তান। বাংলাদেশের তরফ থেকে পাকিস্তানকে লিখিতভাবে আমন্ত্রণ জানানোর পরও তাতে সাড়া দেয়নি বলে বৃহস্পতিবার পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক আনুষ্ঠানিকভাবেই সংবাদ সম্মেলনে জানান। পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করায় বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে গিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না। তারা ছদ্মবেশে স্থল সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়। এদিকে নির্বাচনের আগেই দেশের ভেতরে থাকা জঙ্গীদের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিতে সারাদেশেই চলছে কৌশলী অভিযান। এমন পরিস্থিতিতে দেশে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে। জঙ্গীদের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক যথেষ্ট সচল। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত সোমবার টঙ্গীতে মুফতি হান্নানকে বহনকারী প্রিজনভ্যানে এবং মঙ্গলবার কুমিল্লায় পুলিশের ওপর জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে চালানো গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার পর আর কোন জঙ্গী হামলায় আন্তর্জাতিক চক্রের জড়িত থাকার তথ্য মেলেনি। এমনকি গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায়ও না। একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে নানা জঙ্গী হামলার বিষয়ে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার অপচেষ্টা করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন হয়। এর প্রেক্ষিতে সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের কর্মকা- থামিয়ে দিতে অপতৎপরতা শুরু করে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সহযোগীরা। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে ওই বছরই সরকার পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াসহ জঙ্গী তৎপরতা থাকা দেশগুলোতে যাতায়াতের ওপর ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করে। বিশেষ করে পাকিস্তানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বহু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। যাতায়াতকারীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, নাগরিকত্ব, আত্মীয়স্বজনসহ যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা এবং তদন্তের আওতায় আনা হয়। বিশেষ করে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের যাতায়াতের ওপর আরোপ করা হয় ব্যাপক কড়াকড়ি। এর পর থেকে এ বয়সসীমার নারী-পুরুষের পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়। এর মধ্যে বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের পাকিস্তান যাতায়াত এক প্রকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানী, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান যাতায়াতকারীদের পৃথক পৃথক তালিকা করা হয়। সেই তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে স্থান পেয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ পাকিস্তানী। তারা গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। এছাড়া এনজিও এবং গার্মেন্ট ব্যবসার সূত্র ধরে বাংলাদেশে যাতায়াতকারীর অনেকেই রয়েছেন সন্দেহের তালিকায়। র‌্যাবের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তিন বছর আগে বান্দরবানের থানচিতে জঙ্গীদের একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প আবিষ্কৃত হয়। ওই সময় গ্রেফতার জঙ্গীরা টিএফআই সেলে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। তারা জানায়, দুই শতাধিক বাংলাদেশী জঙ্গী পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মারাত্মক অস্ত্র ও বিস্ফোরক চালনা এবং তৈরির কলাকৌশল শিখছে। তারা দেশে ফিরে বাংলাদেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে সশস্ত্র জিহাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সাবেক সদস্য ও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের মেয়ের দুই জামাতা মোহাম্মদ ইজাজ হোসেন ওরফে কারগিল ও সাখাওয়াতুল কবির (গ্রেফতারকৃত) জড়িত। ইজাজ পাকিস্তান থেকে আর সাখাওয়াতুল কবির পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য কাজ করছিল। এমন জঙ্গী তৎপরতার মধ্যেই ইজাজসহ বাংলাদেশী চার জঙ্গী এক অভিযানে পাকিস্তানে নিহত হয়। এর পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বাংলাদেশী জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং দেশ দুটি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশী জঙ্গীদের বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়ে। এমন কার্যক্রমে ভাটা পড়ে ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পাখতুনখোয়া প্রদেশে পেশোয়ারের সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মি পাবলিক স্কুলে ৬ জঙ্গী সশস্ত্র হামলা চালানোর পর। জঙ্গীরা শিক্ষকদের পুড়িয়ে হত্যার দৃশ্য খুদে শিক্ষার্থীদের দেখতে বাধ্য করে। পরে শিক্ষার্থীদেরও ব্রাশফায়ারে হত্যা করে জঙ্গীরা। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চার জঙ্গী: আব্দুস সালাম, হজরত আলী, মুজিবুর রেহমান ও সাবিল ওরফে ইয়াহিয়ার ফাঁসি খাইবারপাখতুনখোয়া কোহাটে অবস্থিত একটি কারাগারে কার্যকর করা হয়। হামলার দায় স্বীকার করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। সংগঠনটির দাবি, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তালেবানের ঘাঁটি জার্ব-ই-আজবে সেনা অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে স্কুলটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এমন ঘটনার পর থেকে পাকিস্তানে জঙ্গী আস্তানাগুলোতে অভিযান চালাতে থাকে পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি এমনই এক অভিযানে জেএমবির কারাবন্দী আমির মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের জামাতা ইজাজ ওরফে সাজ্জাত ওরফে কারগিল, জেএমবি আমিরের আরেক জামাতা গ্রেফতার সাখাওয়াতুল কবিরের ভাগ্নিজামাই অভি ও জঙ্গী আব্দুল বাতেনের বোন পাকিস্তানে অবস্থিত ফাতেমার স্বামী সায়েম এবং সায়েমের ভগ্নিপতি শামীম নিহত হয়। নিহতরা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিভিন্ন জঙ্গী হামলায় অংশ নিয়েছিল। অভিযানকালে নিহতরা একটি জঙ্গী আস্তানায় অবস্থান করে ভারি আগ্নেয়াস্ত্র চালনা ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পাখতুনখোয়া প্রদেশেই শতাধিক বাংলাদেশী জঙ্গী ওই সময় অবস্থান করছিল; যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তবে অধিকাংশই জেএমবি সদস্য। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে জঙ্গী প্রশিক্ষণে পাঠানোর আগে তাদের বান্দরবানের থানচির জঙ্গী প্রশিক্ষণক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। ইজাজের প্রত্যক্ষ মদদ আর আর্থিক সহায়তা ও বুদ্ধি-পরামর্শে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জন্ম। নিহত ইজাজের ভায়রা গ্রেফতার সাখাওয়াতুল কবির পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আইএসের হয়ে কাজ করছিল। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশী অনেক জঙ্গী সাখাওয়াতুল কবিরের মতো বাংলাদেশে ফিরে দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিশের একটি বিশেষ শাখার দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এমন ঘটনা প্রকাশের পর বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে দুই দেশের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষের পাকিস্তানে যাতায়াত এক প্রকার বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলোতে আত্মঘাতী হামলা চালানোর কলাকৌশল, শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরি, গাড়িবোমা তৈরি করে তা রিমোটে বিস্ফোরণ ঘটানো, রকেটলঞ্চার ছোড়া, স্বল্পমাত্রার বিস্ফোরক দিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বাংলাদেশের দুই শতাধিক জঙ্গী পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জনের হদিস নেই। তারা বিভিন্ন সময় অভিযানে মারা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাকি জঙ্গীদের মধ্যে শতাধিক জঙ্গী আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এসব জঙ্গী যাতে দেশে ঢুকতে না পারে, এজন্যই পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এমন সর্তকর্তা জারি রয়েছে বাংলাদেশÑভারত ও ভারত-পাকিস্তান স্থল সীমান্তেও। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জঙ্গী আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণের পর ভারতের কাশ্মীর সীমান্ত এক প্রকার সিল করে দেয় ভারত সরকার। এছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আঠারো থেকে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী শিক্ষিত-অশিক্ষিত নারী-পুরুষ, বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করা শিক্ষার্র্থীদের যাতায়াত এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন পুলিশের গোপনীয় শাখার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তবে মানবিক, পারিবারিকসহ বিশেষ করে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশে পাকিস্তান দূতাবাসের কূটনীতিক মাযহার খান এবং ওই বছরের শেষদিকে একই অভিযোগে আরেক কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান। এমন ঘটনায় বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। ফারিনা আরশাদকে প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ-ভারত ও ভারত-পাকিস্তান স্থল সীমান্তে অত্যধিক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এমনকি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ ও ভারতে জঙ্গীবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটানোর অভিযোগ ওঠে। এছাড়া গত বছরের শেষদিকে ঢাকায় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে ছাড়া পেয়ে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সমন্বয়ক পাকিস্তানের নাগরিক মুবাশ্বের শরীফ ওরফে মুবিন ওরফে ইয়াহিয়ার লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও রহস্যের জন্ম দেয়। ইয়াহিয়া ২০০৬ সাল থেকে বায়িং ব্যবসার আড়ালে বাংলাদেশে অবস্থান করে লস্কর-ই-তৈয়বার হয়ে জঙ্গী কর্মকা- পরিচালনা করছিল। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে পাকিস্তানভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন, জৈইশ-ই-মোহাম্মদ, জইশ-ই-মোস্তফা, ভারতের কামতাপুর লিবারেশন ফ্রন্ট, অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা, ভারতের কাশ্মীরের আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সসহ বহু জঙ্গী ও উগ্রপন্থী দল ঘাঁটি গেঁড়েছিল। এসব সংগঠনের সঙ্গে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর, আল্লাহর দল, সচেতন সমাজসহ সব জঙ্গী ও উগ্রপন্থী সংগঠনের যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে লস্কর-ই-তৈয়বার পাকিস্তানী জঙ্গী সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম আজহারী ওরফে সুফিয়ান, মোহাম্মদ আশরাফ ওরফে জাহিদ, মোহাম্মদ মনোয়ার আলী ওরফে মনোয়ার, মোহাম্মদ দানিশ, মোহাম্মদ সাব্বির আলী, ভারতীয় জঙ্গী মুফতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞ মনসুর আলী ও মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানির অন্যতম সহযোগী ও বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব গুলশান কুমার হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও দাউদ ইব্রাহিমের অন্যতম সহযোগী আব্দুর রউফ দাউদ মার্চেন্ট ও তার সহযোগী জাহিদ শেখ, ভোলায় মাদ্রাসার আড়ালে জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলা ব্রিটিশ নাগরিক ফয়সাল মোস্তফা, ঢাকার কমলাপুর থেকে আরেক ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন হামদানসহ শতাধিক বিদেশী জঙ্গী ও অর্ধশত ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতা গ্রেফতার হয়। উদ্ধার হয় বিপুল অস্ত্রগোলাবারুদ। এর পর থেকেই বাংলাদেশে জঙ্গীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক প্রায় পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পাকিস্তানী কূটনীতিক ফারিনা আরশাদ ইদ্রিস শেখের মাধ্যমে জেএমবির কার্যক্রম বাড়ানো, রোহিঙ্গাদের জেএমবিতে ভেড়ানো এবং তাদের ট্রেনিং দিতে পাকিস্তানে পাঠানোর কাজের তদারকি করত। তারই ধারাবাহিকতায় বহু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বানিয়ে পাকিস্তান পাঠানো হয়েছে। যাদের অনেকেই আবার পাকিস্তান থেকে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। পাকিস্তানে অবস্থিত রোহিঙ্গা আবদুল করিম টুন্ডা বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য জঙ্গীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট বানিয়ে পাকিস্তান পাঠিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ দিয়ে পাকিস্তান থেকে অন্যান্য দেশে পাঠানোর সঙ্গে আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) জড়িত। আব্দুল করিম টুন্ডা বহু রোহিঙ্গাকে পাকিস্তান থেকে জঙ্গী ট্রেনিং দিয়ে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছে। জঙ্গী তৎপরতার আন্তর্জাতিক এই সিন্ডিকেটে রয়েছে ২৬ সদস্য; যার মধ্যে ১০ হাইপ্রোফাইলের বাংলাদেশী।
×