ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রম অভিবাসনে পাঁচ ধাপে ১৬ দুর্নীতি, অনিয়ম হয় ॥ টিআইবি

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১০ মার্চ ২০১৭

শ্রম অভিবাসনে পাঁচ ধাপে ১৬ দুর্নীতি, অনিয়ম হয় ॥ টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার পাঁচটি ধাপে ১৬ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে শ্রম অভিবাসন খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইনের সংস্কার দাবি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বৈধ শ্রম অভিবাসনের বিভিন্ন বিষয়সংবলিত তথ্যের প্রচারসহ নয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বৃহস্পতিবার সংস্থার ধানম-ির কার্যালয়ে ‘শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন-সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর-ই-খোদা। এই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদনে বলা হয়, মুখ্য তথ্যদাতাদের সাক্ষাতকার, নিবিড় সাক্ষাতকার এবং দলগত আলোচনা ছাড়াও শ্রম অভিবাসন-সংশ্লিষ্ট নীতিমালা, আইন ও বিধি, প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গবেষণা, প্রবন্ধ, সরকারী- বেসরকারী তথ্য ও দলিল এবং সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনাপূর্বক ২০১৬ সালের মে থেকে জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত সময়কালে এ গবেষণার তথ্য সংগৃহীত, বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসন খাতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগের মধ্যে সেবার বিকেন্দ্রীকরণে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে সরাসরি বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড প্রদান, অনলাইন ভিসা চেকিংয়ের ব্যবস্থা, অভিবাসনের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান অন্যতম। এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, রংপুর, যশোর ও বরিশাল থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রমের প্রকল্প, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসন বন্ধ ছিল এমন দেশ সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় নতুন করে শ্রম অভিবাসন শুরু, অনলাইন ভিসা চেকিংয়ের ব্যবস্থা, অভিযোগ দাখিলের জন্য- হটলাইন ও বিশেষায়িত ওয়েবসাইট চালু, প্রবাসী নারীকর্মী অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সেলসংক্রান্ত কার্যক্রমের প্রচলন, বিএমইটির ওয়েবসাইটে ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অনলাইন ভিসা যাচাইয়ের সুবিধাকে ইতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন ২০১৩‘র কিছু আইনী ও প্রায়োগিক সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনে শ্রম অভিবাসন খাতে সক্রিয় ‘দালাল’দের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আইনের অনেক ধারা নির্দেশনামূলক, বাধ্যতামূলক নয় (যেমন অভিযোগ উত্থাপন, কর্মী বাছাই, ক্ষতিপূরণ আদায়); এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে অভিবাসনকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। অন্যদিকে মোবাইল কোর্টে বিচারের ক্ষেত্রে শাস্তি দেয়ার এখতিয়ারসংক্রান্ত অস্পষ্টতা, রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাজেয়াফত ও ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীর ক্ষতিপূরণের বাধ্যবাধকতা না রাখা, ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ ও ডেটাবেজ থেকে কর্মী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মত নয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। সুশাসনবিষয়ক ঘাটতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা-বাজেট ও জনবল (বিএমইটি, টিটিসি, গন্তব্য দেশে শ্রম উইং) স্বল্পতা-প্রক্রিয়ায় বিকেন্দ্রীকরণের ঘাটতি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ, রিক্রুটিং এজেন্টদের কার্যক্রম, বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি, একাধিকবার বায়োমেট্রিক আইডেন্টিটি বা আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি দেয়া (জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিএমইটি ডেটাবেজ), নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির ঘাটতি, গন্তব্য দেশে ভিসা কেনা-বেচা, গন্তব্য দেশে কর্মসংস্থানের বৈধতা যাচাই ও বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির ক্ষেত্রে জটিল ও দীর্ঘ অভিবাসন প্রক্রিয়া। এছাড়া বিএমইটি হতে বহির্গমন ছাড়পত্র প্রাপ্তিতে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে এজেন্সি-নির্ভরতা, দলীয় ভিসা ও অপ্রচলিত দেশের ভিসার ক্ষেত্রে বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি উভয়ের কাছে আবেদন, অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীলতা, দালালনির্ভর সেবাব্যবস্থা, সকল দেশের জন্য সরকারীভাবে ভিসার মূল্য নির্ধারিত না থাকার ফলে ভিসা-অভিবাসনের প্রকৃত ব্যয়সংক্রান্ত দালিলিক প্রমাণের ঘাটতি, ভিসার অতিরিক্ত চাহিদা, ভিসা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভিসা ব্যবসায়ীদের অসাধু প্রতিযোগিতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা অন্যতম। এছাড়াও অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ভিসার মূল্য বেশি, অভিবাসী কর্মীর শিক্ষা, দক্ষতা ও সচেতনতার ঘাটতি; সামাজিক যোগাযোগের কারণে দালালদের ওপর আস্থা ও নির্ভরতা, কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের সুযোগ, তৃণমূল পর্যায়ে উপস্থিতি, তথ্যসংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা; বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রচার ও প্রকাশে ঘাটতিকে গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত দালালনির্ভরতা, সক্ষমতার ঘাটতি, চাহিদার তুলনায় অধিক গমনেচ্ছু এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে শ্রম অভিবাসনে ইচ্ছুক ও প্রবাসী শ্রমিকরা আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
×