ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তি বিশ্বে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১০ মার্চ ২০১৭

প্রযুক্তি বিশ্বে তোলপাড়

উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে জানা যায়, সিআইএ বিভিন্ন সাইবার অস্ত্র ও ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে উইন্ডোজ, এন্ড্রয়েড, আইওএস, ওএস, এক্স, লিনাক্স কম্পিউটার ও ইন্টারনেট রাউটার হ্যাক করে নজরদারি চালাচ্ছে। উইকিলিকস মঙ্গলবার এই নথি ফাঁস করে। বিষয়টি যে এই প্রথম জনসম্মুখে এলো তা নয়। চার বছর আগে মস্কোয় আশ্রয়প্রাপ্ত এ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার দেশের শীর্ষ স্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর গোপন তথ্য চুরি করছে। বিভিন্ন কায়দায় এসব তথ্য চুরি করা হয় বলে জানা গেছে। সিআইএ স্মার্টফোন ও স্মার্ট টেলিভিশনে মাইক্রোফোন স্থাপনের মাধ্যমে সুকৌশলে শুধু তথ্য নয় একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় জেনে নেয়ার কৌশল বের করেছে। এবার উইকিলিকস ও স্নোডেনের বক্তব্য মিলে দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গেল। যাদের মনে এতদিন সন্দেহের দোলাচল ছিল তারাও এবার ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হলো। কিন্তু সরকার পক্ষ অর্থাৎ সিআইএ এফবিআই ও হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা শুধু বলেছেন, এসব নথি কীভাবে উইকিলিকসের কাছে গেল তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। কেউ যদি সিআইএর তথ্য বাইরে পাঠায় অথবা বাইরে থেকে কোন এক্সপার্ট হ্যাকার সিআইএর তথ্য বের করে নেয়Ñ উভয় ক্ষেত্রেই বিপদের সম্ভাবনা আছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। তাদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সেনাবাহিনী ও অস্ত্র ভা-ার থাকা সত্ত্বেও শুধু তথ্য পাচারের কারণে দেশটির সমর পরিকল্পনা ও সামরিক অভিযান ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। এছাড়া শীঘ্রই আরও বহুবিদ জটিলতার উদ্ভব হতে যাচ্ছে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। সিআইএ নিশ্চিন্তে এতদিন যাদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল- তারা সাবধান হয়ে আরও কৌশলী হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ বিষয়ে খুবই সোচ্চার। তারা মানুষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ব্যাপারে আদালতের দারস্থ হতে পারে। অন্যদিকে এ্যাপল, গুগুল ও মাইক্রোসফটসহ প্রধান প্রধান প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কোম্পানিগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ভাবমূর্তির যতটুকু ক্ষতি হওয়ার তা হয়েছে- এখন তারা নিরূপণ করার চেষ্টা করছেন যে, গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পণ্যগুলোর ক্ষতির মাত্রা কত ব্যাপক। সরকারী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সিলিকন ভ্যালিকেন্দ্রিক সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিশ্বাস ভঙ্গ জনিত আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে মার্কেটিং টেকনোলজি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ডেভিড গোটেলিয়াস বলেছেন, এই তথ্য ফাঁসের ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে কিছুটা দূরত্বের সৃষ্টি হবে। তবে আমার ধারণা, দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের মারাত্মক কোন অবনতি হবে না। সরকার পক্ষ ও সফটওয়্যার শিল্পের মধ্যে সম্পর্ক এমনই যে, একজন অপরজনের কাছে অপরিহার্য। কন্ট্রাকটররাই তথ্য ফাঁসের উৎস ॥ সিআইএর হ্যাকিং কৌশল নিয়ে উইকিলিকসে প্রকাশিত সাম্প্রতিক নথিগুলো সংস্থাটির কন্ট্রাকটরদের হাত দিয়েই ফাঁস হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বিষয়ক দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুধবার তারা জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিআইএর বিভিন্ন হ্যাকিং কৌশল নিয়ে উইকিলিকস যেসব নথি প্রকাশ করেছে সেগুলো ‘নির্ভরযোগ্য’। উইকিলিকসের এই হাজারখানেক নথি মঙ্গলবার প্রকাশিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত বছরের শেষ দিক থেকে এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল বলে দাবি এই দুই কর্মকর্তার। তাদের একজন বলেছেন, সিআইয়ের ঠিকাদারি করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের সঙ্গে উইকিলিকসের সাম্প্রতিক ফাঁসের বিষয়বস্তুর যোগ আছে, তাদের কম্পিউটার, ই-মেইল এবং অন্যান্য যোগাযোগ যন্ত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভার্জিনিয়ার আলেক্সান্দ্রিয়ায় উইকিলিকস ও এর কর্মকর্তাদের নিয়ে বছরখানেক ধরেই তদন্ত চলছে। তবে সেই তদন্তের সঙ্গে এই নতুন ফাঁসও যুক্ত হবে কী না তা নিশ্চিত নয়। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, সিআইএর হ্যাকাররা চাইলে এ্যাপলের আইফোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। এছাড়া যেসব ডিভাইস গুগলের এ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেগুলো এবং অন্যান্য গেজেটে ঢুকে ব্যবহারকারীর ভয়েস ও টেক্সট মেসেজ পড়তে পারে। সিআইএর এ বিস্তৃত হ্যাকিং কৌশলের আওতায় স্যামসাংয়ের স্মার্ট টিভিগুলোও আছে বলে উইকিলিকসের প্রকাশিত নথিতে জানা গেছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, সিআইএর তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়া বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। যে বা যারাই গোপন তথ্য ফাঁস করেছে তাদেরকে সর্বোচ্চ আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে, বলেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার। -নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসি
×