ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১০ মার্চ ২০১৭

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

২ লাখ মৌমাছি চুরি! যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানাতে এক ব্যবসায়ীর দুই লাখের মতো মৌমাছি চুরি হয়ে গেছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে সংবাদ সংস্থা এক খবর প্রকাশ করে বলেছে, মৌমাছির মালিক এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। মৌমাছিগুলো চুরি হয়েছে কয়েকদিন আগে। কে বা কারা ওগুলোকে চুরি করে পালিয়েছে, তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, সেখানকার কাছের এক এলাকার বাদাম উৎপাদন খামারে বাদাম গাছের পরাগায়নের জন্য মৌমাছিগুলো পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চোরদের কারণে সেটা পারা গেল না। মৌমাছির মালিক আক্ষেপ করে বলেছেন, তার মৌমাছিগুলো দিয়ে চোরেরা অন্তত লাখ ডলার কামিয়ে নেবে! মানব সমাজে চুরির ব্যবস্থাটি কবে কোন্কালে শুরু হয়েছিল তার ইতিহাস জানা না গেলেও এটা বোঝা যায়, এটি বহু বহু কাল ধরে চলে আসছে। দেশে বিদেশে এখনও নানা কিসিমের চুরির বিষয়টি রয়ে গেছে। পরের দ্রব্য না বলিয়া লইলে সেটাকে চুরি বলা হয়। না বলিয়া লইলে যেমন চুরি করা হয়, তেমনি ‘বলিয়াও’ অনেক কিছু চুরি করা হয়। কবি গুরুর ‘দুই বিঘা জমি’র ঘটনাটিও কিন্তু চোখ রাঙিয়ে ধমক দিয়ে, মিথ্যা দলিল তৈরি করে অসহায় মানুষের সম্পত্তি কেড়ে নেয়ারই ঘটনা। কবি ওখানে চোর সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা চিরকালীন সত্য : ‘এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’ এ দেশে এককালে ছিল সিঁধেল চোর। সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে চুরি করা হতো তখন। এখন মোটামুটি সবখানে বাড়ির ভিটে পাকা হওয়ায় সিঁধেল চুরি কমে গেছে। এখন রয়েছে বহু রকম চুরি। পুকুর চুরি এখন দেশে হয়ে গেছে অনেক চুরির কাছে। এখন খাল-বিল-নদী-নালা এসবও চুরি হওয়ার ঘটনা শোনা যায়। কয়েক দশক আগে দেশে গরু চুরির হিড়িক পড়েছিল। তখন খবরের কাগজের পাতায় প্রায় প্রতিদিনই থাকত গ্রাম থেকে গরু চুরির খবর। আমেরিকায় উল্লিখিত মৌমাছি চুরির ঘটনাটি বলে দিচ্ছে, যা কিছু লাভজনক তা কোন দ্রব্য বা গরু-ছাগলই নয়, কীটপতঙ্গ হলেও চুরি যায়। মৌমাছি পরাগায়নে সাহায্য করে। এটা কৃষির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া মৌমাছি আহরণ করে মধু। ‘মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই। ঐ ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’ এই মৌমাছি আমাদের মধু দেয়। মধু উৎপাদনের জন্য দেশে এখন মৌমাছি চাষও হচ্ছে। বহু গ্রামের মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ফুটে থাকে সরষের ফুল। মৌমাছি ছুটে যায় এ ফুল থেকে ও ফুলে। আহরণ করে মধু। তারপর চাকে এসে বসে। ভাল মধু পাওয়ার জন্য মৌমাছি পালনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও সহযোগিতা করা উচিত। যাতে আরও বেশি করে খাঁটি মধু পেতে পারে দেশের মানুষ। আমেরিকায় ওই মৌমাছি চোরদের এখনও ধরা যায়নি, ধরা পড়বে কি পড়বে না, কে জানে! তবে যাই হোক এর মধ্যে ওরা যে মোটা রকমের কিছু কামিয়ে নেবে। এটা ধারণা করা যায়।
×