ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নারী পরিচালনায় ফ্লাইট

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১০ মার্চ ২০১৭

নারী পরিচালনায় ফ্লাইট

নিরন্তর গতিতে এগিয়ে যাওয়া দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধিতে নারীর সফল কর্মযোগ বিস্ময়ের ব্যাপার হলেও এটাই বাস্তব। অর্থাৎ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলোতে নারীরা যে মাত্রায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছে তা যেমন অভাবনীয় একইভাবে যুগান্তকারী। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য বিবেচনায় বিভিন্ন সূচকে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অংশীদারিত্ব উল্লেখ করার মতো। স্বপ্ন পূরণের বিভিন্ন মাত্রা পার হয়ে আকাশ ছোঁয়ার বাস্তবতাও আজ সফল নারীর হাতের মুঠোয়। উন্নয়নের সর্বক্ষেত্রে যেমন তেমনি বিমান চালনার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জেরও মোকাবেলা করছে আজ নারীরা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় এনে সম্পূর্ণ নারী পরিচালিত একটি ফ্লাইট চালু করে ৮ মার্চ। ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি উড়োজাহাজে ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে সমস্ত ক্রু নারী। বিমান চালনার ক্ষেত্রে নারীদের আরও উৎসাহী এবং আগ্রহী করার লক্ষ্যে এধরনের একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বিমানের এক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ। ইতোমধ্যে নারীরা বিমান চালনায় তাদের দক্ষতা এবং পারদর্শিতার প্রমাণ দিয়েছেন। সম্পূর্ণ নারী পরিচালিত এই প্রথম ফ্লাইটির উদ্বোধনী যাত্রাকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন ২০০০ সালে বাংলাদেশ বিমানে যোগ দেয়া ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা। এই বিমানে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে তানিয়াকে সহযোগিতা করছেন অন্তরা। এ ছাড়াও আছেন দুজন ককপিট ক্রু এবং ৬ জন কেবিন ক্রুর দায়িত্বে থাকা নারী। নারী নিয়ন্ত্রিত এই প্রথম ফ্লাইটের অভিযাত্রায় অভিভূত ক্যাপ্টেন তানিয়া বলেন- আকাশে ওড়াটাই স্বপ্নময়। আর এই আকাশছোঁয়া স্বপ্ন যখন বাস্তবে রূপ নেয় তা কল্পনাকেও হার মানায়। এমন একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা তাকে সব সময়ই অনুপ্রাণিত করতে থাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। তানিয়া মনে করেন মেয়েদের এই বিমান চালনা পেশায় আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়া সময়ের দাবি। সবকিছুতে যখন মেয়েরা সমানতালে অগ্রসর হচ্ছেÑ সেখানে আকাশপথেও তাদের পদচারণা। বিমান বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই নতুন অভিযোজন নারীর অগ্রযাত্রার আরও একটি বিশিষ্ট পর্যায়। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীদের সফল অংশগ্রহণ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জোয়ারের অন্যতম স্রোত। বিমান চালনার ক্ষেত্রেও এই অবাধ গতিধারাকে জোরালোভাবে যুক্ত করতে হবে। তাহলে দেশের উন্নয়নের কোন ক্ষেত্রে নারীরা পেছনে থাকবে না। ইতোমধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে নারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট চালু করেছে। এই উড়োজাহাজটি দিল্লী থেকে সানফ্রান্সিসকো গেছে। এখানেও ক্যাপ্টেন, ফার্স্ট অফিসার, ককপিট ক্রু, কেবিন ক্রু থেকে আরম্ভ করে চেক ইন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং স্টাফ, উড্ডয়নের ছাড়পত্র দেয়ার প্রকৌশলী এবং ট্রাফিক কন্ট্রোলারের দায়িত্বে থাকবেন নারীরা। সম্পূর্ণ নারী পরিচালিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমানটি ঢাকা থেকে আকাশপথে সিলেটে অবতরণ করে ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের দিনটিতে। সিলেট থেকে পুনরায় ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজার নেতৃত্বে ফ্লাইটটি ঢাকায় নিরাপদে ফিরেও আসে। ফলে নারীর অভিনব ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পথপরিক্রমায় বিমান চালনার পর্যায়টিও নারীদের নানামাত্রিক উদ্বুদ্ধ এবং অনুপ্রাণিত করবে এই আশা ব্যক্ত করাই যায়। এভাবে সামনে এগিয়ে চলার গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনার যে ইঙ্গিত তুলে ধরে তা আরও উৎসাহ আর উদ্দীপনায় নারীদের নতুন উদ্যমে জাগিয়ে তুলবে। এই আশা দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর।
×