ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুরুতেই কঠোর হোন

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১০ মার্চ ২০১৭

শুরুতেই কঠোর হোন

র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দাবাহিনীসহ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নিয়মিত নজরদারির পরও দেখা যাচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। গত ৮ দিনে তিনটি সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে জঙ্গীরা। সর্বশেষ হামলাটি হয়েছে কুমিল্লার চান্দিনায়। যাত্রীবাহী একটি বাস থেকে নেমে দুই জঙ্গী বোমা হামলা চালায় হাইওয়ে প্যাট্রোল পুলিশের ওপর। পুলিশ প্রতিরোধ করলে জঙ্গীরা বোমা হামলা করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় জনগণ ধাওয়া দিয়ে তাদের ধরে ফেললে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এর আগে গত সোমবার টঙ্গীতে কুখ্যাত জঙ্গী নেতা বহু অপরাধের অপরাধী ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজনভ্যানে হামলা চালানো হয়। এখানেও চাপাতি ও হাতবোমাসহ এক জঙ্গীকে গ্রেফতারের খবর আছে। তারও আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়িতে পুলিশ কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাতে আহত করে জঙ্গীরা। এ থেকে বোঝা যায় যে, জঙ্গীরা যেন হঠাৎ করেই আবারও আগ্রাসী ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার তাদের টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার মানে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও তাদের অপতৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও তা স্বীকার করেছেন। সরকার ইতোমধ্যে আনসার আল ইসলামসহ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাতবোমা, অস্ত্রশস্ত্র, জিহাদী বইসহ জঙ্গীদের ধরাও হচ্ছে। গোলাগুলিতে নিহত ও আহত হওয়ার খবরও আছে। এতকিছুর পরও তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বর্তমান সরকার উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে তাদের দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোট-বড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, আলশামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ ও মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনই প্রমাণিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয় বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী ও কুমিল্লায় জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়। দেশ যদি আধুনিক শিক্ষা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে শনৈঃশনৈঃ গতিতে অগ্রসর হতে পারে, তাহলে এমনিতেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হতে বাধ্য।
×