ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানী থেকে ২৪ মানব পাচারকারী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৯ মার্চ ২০১৭

রাজধানী থেকে ২৪ মানব পাচারকারী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্দেহভাজন ২৪ মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণের ছয় লাখ টাকা, জাল ভিসা ও ভিসা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর সময় ১০ জন এবং পাচারের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে ফেরত আসা ২৭ জনকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। আটক ২৪ জন হলেন- শরিফুল ইসলাম ওরফে গুরু (৩৮), মোঃ আবুল বাশার (২৯), মোঃ ফরহাদ হোসেন (২৬), সোহাগ হোসেন (২১), তানজিল আহমেদ শোভন (২৪), মোঃ ইসমাইল হোসেন (৩৫), মোঃ জাবেদ আলী (৪৫), মোঃ আল তামজিদ (২৭), হেলাল উদ্দিন শেখ (৪৫), মোঃ আছির উদ্দিন (৩৫), সমেশ শেখ (৩৩), মবিন মিয়া (১৮), নিজামুল ইসলাম পলাশ (৪৪), মোঃ ইমরান (২৯), মোঃ কপিল উদ্দিন (৫৫), দেলোয়ার হোসেন (৪৭), রাজিব (২৫), আব্দুর রশীদ (৫৮), মোঃ শওকত আলী (৪৫), মোঃ শাহাদৎ হোসেন (৫০), মোঃ বরিউল আলম (৩৮), মোঃ শফিউলাহ (৩৪), রফিকুল ইসলাম (৫০), মোঃ শরীফ হোসেন সোহান (৫০)। অবৈধভাবে মানুষকে বিদেশে পাঠিয়ে পরে তাদের জিম্মি করে এই পাচারকারী চক্র অর্থ আদায় করত বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মিজানুর। এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক তুহিন মুহাম্মদ মাসুদ জানান- গত সপ্তাহে মানবপাচারকারী চক্রটির হাতে পড়ে অবৈধভাবে বিদেশগামী ১০ বাংলাদেশীকে উদ্ধারের পর অনুসন্ধান চালিয়ে চক্রের এ সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। মালিন্দো এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ১ মার্চ রাতে ওই ১০ জনকে স্বল্পকালীন ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া পাঠানো হবে বলে আগে থেকে জানতে পারে র‌্যাব। তাদের পরে অবৈধভাবে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল চক্রটির। তাদের উদ্ধার করার কথা জানিয়ে র‌্যাব অধিনায়ক তুহিন বলেন, সেই ভিকটিমদের উদ্ধারের পর মঙ্গলবার মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম নেতা শরিফুল ইসলাম গুরু ও আবুল বাশার নামের দুজনকে মতিঝিল ও মিরপুর ডিওএইচএস থেকে আটক করে র‌্যাব। পরে অভিযান চালিয়ে বাকিদের আটক করা হয়। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন-এক চক্র থেকে আরেক চক্রের হাত ঘুরে বাংলাদেশীদের মালয়েশিয়ায় পাচার করা হতো। মানবপাচারকারী বাংলাদেশী চক্রটির সদস্যদের আটকের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা তাদের বিদেশে লোক পাঠানোর কোন বৈধ কাগজপত্র নেই বলে স্বীকার করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশে লোক পাচার করে আসছে। চক্রটি প্রথমে সাধারণ মানুষকে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে ট্যুরিস্ট ভিসায় তাদেরকে ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যায়। এরপর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে বাসে করে নর্থসুমাত্রা প্রদেশের রাজধানী মেদান নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আরেকটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তাদের মেদান থেকে সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ার সেলানগর প্রদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য আরেকটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করে। মানবপাচারকারী দলের সদস্যরা টাঙ্গাইল, পাবনা, মাগুরা, নওগাঁ, যশোর ও ঢাকার আশপাশে নিজস্ব এজেন্ট নিয়োগ করে লোকজনকে প্রতারিত করে বলেও র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়। এসব এজেন্ট বিদেশে যাওয়ার লোক সংগ্রহ, কৌশলে ট্যুরিস্ট ভিসা তৈরি, বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হয়ে তৃতীয় কোন দেশে লোক পাঠানোর পরিকল্পনা, অবৈধভাবে সমুদ্র পথে ওই দেশে লোক পাঠানোর কাজ করে থাকে। পাশাপাশি তারা বিদেশে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতারণা ও জিম্মি করা এবং সব শেষে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তার পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায় এবং অবৈধ অভিবাসী হিসেবে শ্রমদাসে পরিণত করে। এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে র‌্যাবের একটি দল লিবিয়া ফেরত প্রতারিত ২৭ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এবং লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় বুধবার ভোর ৫টায় তার্কিস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওই ২৭ জন দেশে আসেন বলে। র‌্যাব কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, উন্নত জীবনের আশায় থাকা এই বাংলাদেশীদের বিদেশে পাঠিয়ে একটি প্রতারক চক্র লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে জিম্মি করে টাকা আদায় করেছে। তাদের পরবর্তীতে কয়েকটি চক্রের কাছে বিক্রি করে অবৈধভাবে সমুদ্র পথে ইতালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেখানে লিবিয়ার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে ও অবৈধ অনুপ্রবশের দায়ে ছয় মাসের দ- দিয়ে কারাগারে পাঠায়। পরে র‌্যাব আইওএম ও লিবিয়ার দূতাবাসের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়।
×