ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী দিবসের বিশেষ আয়োজন

নারীর হাতেই সব দায়িত্ব-এভাবেই আকাশে উড়ল বিমান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৯ মার্চ ২০১৭

নারীর হাতেই সব দায়িত্ব-এভাবেই আকাশে উড়ল বিমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারীদের বিশেষ ফ্লাইট বেশ স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদেই উড্ডয়ন ও অবতরণ করেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে চলাচল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই ফ্লাইট। ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা ও ফার্স্ট অফিসার সারওয়াত সিরাজ অন্তরা’র পরিচালনায় সকল নারী কেবিন ক্রুদের নিয়ে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিজি-৬০৩ ফ্লাইটটি দুপুর পৌনে ২টায় ৮০ জন যাত্রী নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে। আবার বেলা চারটার দিকে ঢাকায় ফিরে আসে। এ ফ্লাইটের সব ককপিট ও কেবিনক্রুসহ গ্রাউন্ড সার্ভিসেরও সব দায়িত্বে ছিলেন নারীরা। এ জন্য বুধবার বিমানবন্দরে দেখা যায় এক ভিন্ন ধরনের আমেজ। এ উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ ও পরিচালক প্রশাসন মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, বিমানে ফ্লাইট পরিচালনাসহ, গ্রাউন্ড সার্ভিস, প্রকৌশল এবং বিভিন্ন বিভাগে নারীকর্মীরা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশের নারীরা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে, এটি তুলে ধরতেই নারী দিবসে এই বিশেষ ফ্লাইট। তিনি এই বিশেষ দিনে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা নারী সহকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন- ২০৩০ সালের মধ্যে বিমানে ৫০ শতাংশ নারীকর্মী নিয়োগের কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। শুধু নারী দিবস বলে নয়, বছরের অন্যান্য কর্মদিবসেও বিমানে নারীকর্মীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সরকার নারীদের ক্ষমতায়নে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিমান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুরুষকর্মীদের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। জানা যায়- একটা সময় পর্যন্ত দেশে নারী পাইলটের দেখা না মিললেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৪০ জন পাইলটের মধ্যে এখন নারী পাইলটের সংখ্যা নয় জন। পুরুষদের মতোই তারাও সাফল্যের সঙ্গে পালন করছেন পেশাগত দায়িত্ব। বিমানের এই নয়জন নারী পাইলট হলেন- ক্যাপ্টেন তাসমিন, তানিয়া রেজা, আলিয়া, শাহানা, ফার্স্ট অফিসার আনিতা রহমান, মুনজারিন রাইয়ান, শুমায়লা সিদ্দিকা হোসেন, ফারিয়েল রহমান ও অন্তরা। তাদের একজন ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা বিমানে যোগদিয়েছেন ২০০০ সালে। এফ ২৮, ডিসি-১০, এয়ারবাস ৩১০, বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ চালিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করছেন। পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরুটা কিভাবে জানতে চাইলে তানিয়া বলেন- মামাদের অনেকেই বিমান বাহিনীতে কাজ করতেন। ছোটবেলায় তাদের দেখে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। ১৯৯৩ সালে ফ্লাইং একাডেমিতে ভর্তি হই। এরপর আমেরিকায় গিয়ে কোর্স সম্পন্ন করি। এরপর ২০০০ সালে দেশে এসে বিমানে যোগ দিয়েছি। যে মামাদের দেখে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, তাদের অনেকের সঙ্গেই ফ্লাই করার সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার বড় একটি সৌভাগ্য। পাইলট হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে তানিয়া বলেন- প্রথম ফ্লাইটের অনুভূতিটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। এখনও বিমান চালাতে রোমাঞ্চ বোধ করি। বিমানের দীর্ঘ সময়ের যাত্রায় নারী বলে কখনও প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি। পরিবারের সবার সমর্থন পেয়েছি বলেই ফ্লাইটে উঠে ১১ বছর ও ৬ বছরের দুই মেয়ে রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। দেশের অনেক নারীই পাইলট হতে চাইলেও তাদের এই লক্ষ্য পূরণের উপায় জানা নেই বলে মনে করেন তানিয়া। অনেকে পাইলট হতে চাইলেও জানেন না কিভাবে এই পেশায় আসতে হয়। তাদের সামনে সেই পথের কথা তুলে ধরতে হবে। আর সবার আগে প্রয়োজন নিজের দৃঢ় ইচ্ছা। এর সঙ্গে পরিবারের সমর্থন পেলেই এই পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়বে।
×