ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ের হার দুই বছরে অর্ধেকে নেমে আসবে ॥ চুমকি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৯ মার্চ ২০১৭

বাল্যবিয়ের হার দুই বছরে অর্ধেকে নেমে আসবে ॥ চুমকি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি মাইলফলক। নারী আন্দোলনের ইতিহাসে গৌরবগাঁথা এক মহান অর্জন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এই দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়। মানব সভ্যতার সকল অগ্রগতি ও উন্নয়নে নারী সমঅংশীদার। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে নারী-পুরুষের সমঅধিকার সংবিধান স্বীকৃত। ২০১৭ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা/ বদলে যাবে বিশ্ব, কর্মে নতুন মাত্রা।’ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে দিনটি। মহিলা ও শিশু অধিদফতরের আয়োজন ॥ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু অধিদফতর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সময় তিনি নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ব্যবহৃত হেল্পলাইন নম্বর ১০৯২১- এর পরিবর্তে ১০৯ করার ঘোষণা দেন। ২০১২ সালের জুন মাস থেকে ১০৯২১ হেল্প লাইন নম্বরটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা হয়। কিন্তু পাঁচ সংখ্যাবিশিষ্ট হওয়ায় অনেকে মনে রাখতে পারেন না। এজন্য নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সকলে যেন সহজেই হেল্পলাইন নম্বরটি ব্যবহার করতে পারে এজন্য নম্বরটির শেষের দুটি সংখ্যা বাদ দিয়ে ১০৯ রাখা হবে বলে জানান তিনি। মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ১৯৭২ সালেই সংবিধানে নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হয়েছিল। নারীকে সুযোগ দিলে তারা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেন। বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী থেকে খেলাধুলা কোথায় নারী নেই? সবক্ষেত্রে নারী কাজ করছে। ৮টি ট্রেডে নারীকে প্রশিক্ষণ দিতে ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নারীর প্রতি সহিসংসতা এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। কোন নারী বিপদে পড়ে ১০৯ নম্বরে ফোন করলেই প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন। দারিদ্র্য বাল্যবিয়ের বড় কারণ। আমরা যে আইন-পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি তাতে আগামী ২ বছরের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার অর্ধেকে নেমে আসবে। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিন, ইউএন উইমেন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন হান্টার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পাঁচ নারীকে ‘জয়িতা’ সম্মাননা দেয়া হয়। পুরস্কৃতদের ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং ৫০ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্ত পাঁচ নারী হলেন শার্লী মেশৈপ্রু, হোসনে আরা, ফিরোজা বেগম, মর্জিনা বেগম, আরিফুল ইসলাম ময়ুরী। জাতীয় নারী শ্রমিক জোটের আয়োজন ॥ নারীর মর্যাদা, সমঅধিকার, কর্মস্থলে নারী শ্রমিকের নিরাপত্তা, সমমজুরি, নারীর সার্বিক নিরাপত্তার দাবি জানায় বিভিন্ন নারী সংগঠন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশ এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে চেতনার মূলে ছিল নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং শোষণ-বৈষম্যহীন সাম্য সমাজ গড়ার আহ্বান। যত দ্রুত সম্ভব নারীর সমঅধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। সর্বপ্রথম নারী শ্রমিককে মর্যাদা দিতে হবে, কর্মস্থলে নারীর নিরাপত্তা দেয়াসহ নারী পুরুষের সহ-অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সে সঙ্গে গার্মেন্টসসহ সকল বেসরকারী সেক্টরে কর্মরত নারী শ্রমিকের জন্য সরকারি সেক্টরের ন্যায় ৬ মাস মাতৃত্বকালীন বৈতনিক ছুটি ঘোষণা করতে হবে। এছাড়া, শ্রমিকের মজুরি সর্বনিম্ন দু’শত ডলার দিতে হবে। লা মেরিডিয়ান ঢাকা উইমেন লিডারশিপ সামিট ২০১৭ ॥ বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের (বিবিএফ) একাটি প্রোজেক্ট উইমেন ইন লিডারশিপ (ডব্লিউআইএল) আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৭ উদযাপনে দিনব্যাপী লা মেরিডিয়ান ঢাকা উইমেন লিডারশিপ সামিট ২০১৭ অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে এই সম্মেলনের সূচনা হয় সকাল ৯ টায় এবং সমাপ্তি ঘটে বিকেল ৫টায়। সম্মেলনের সূচনা হয় হোটেল লা মেরিডিয়ান ঢাকার জেনারেল মেনেজার আশওয়ানি নায়ারের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে। সূচনা বক্তব্যের পর ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট এবং ডব্লিউআইএলের সভাপতি নাজিয়া আন্দালীব প্রিমা সম্মেলনটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং সমস্ত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে নারী কিভাবে আমাদের সমাজে অবদান রাখছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মমিনুল ইসলাম নারীর ক্ষমতায়ন এবং আইপিডিসির অংশগ্রহণ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ছিল ৪ টি কি নোট সেশন, ২ টি প্যানেল ডিসকাশন এবং ১ টি অধিবেশন। উদ্বোধনী মূল প্রবন্ধ সেশনে জাতীয় সংসদ সদস্য ড. দিপু মনি উপস্থিত থেকে বলেন, নারীরা এখন সর্বক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নারী ও পুরুষ নিজ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেরণায় পুরুষের সঙ্গে সমান্তরালে বাংলাদেশের সকল নারী আরও এগিয়ে যাবে সুন্দর আগামীর দিকে।’ এর পর শুরু হয় প্রথম প্যানেল ডিসকাশন। আলোচনার বিষয় ছিল ‘চেঞ্জিং দ্যা উইমেন ডায়ালগ - এ হলিস্টিক পার্সপেক্টিভ’। আলোচনার মোডারেটর ছিলেন ম্যাগনাম ম্যানেজমেন্ট কন্সাল্টিংয়ের অর্গানাইজেশনাল ডেভেলপমেন্ট এ্যাডভাইজরি সার্ভিস ডিরেক্টর দেনেব জীনাত লতিফ। প্যানেলে ছিলেন আমির ও আমিরুল এ্যাসোসিয়েটসের হেড অব চেম্বার্স ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, দি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. ফাহমিদা খাতুন, ডোহাটেকের স্বত্বাধিকারী লুনা শামসুদ্দোহা এবং পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট প্রফেসর ড. রওনক জাহান। এ সময় তারা নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে স্ব স্ব বক্তব্য রাখেন। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির আয়োজন ॥ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির (৭০টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম) উদ্যোগে আজ ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘কর্র্মে-অর্থনীতিতে নারীর সমঅধিকার সমতাভিত্তিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার’ সেøাগান সামনে রেখে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের সামাজিক ফোরাম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি দুই দশক ধরে বাংলাদেশের নারীর জন্য নিরাপদ ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে ও বিশ্ব মানবাধিকার রক্ষার লক্ষ্যে পালন করছে। শতাব্দীর ইতিহাসকে ধারণ করে ১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুরু হয়। ধীরে ধীরে শতাব্দীর ক্রমবিবর্তনে নারীর অধিকার মানবাধিকারের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর বিশ্বে নারী দিবস নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। এই দিনে নারী সমাজ, পুরুষ সমাজ একত্রিত হয়ে দিনটি উদ্যাপন করেন। তিনি বলেন এই উপলক্ষে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি একেক বছর একেক কর্মসূচী নেই। তিনি বলেন এই সমাবেশ থিকে আমরা কিছু কর্মসূচীর ঘোষণনা দেব। বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ নারী শ্রমিক বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করে তুলেছে। এসময় বক্তারা বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য কমে গিয়েছে। অর্থনীতির চাকা সচল করেছে নারী। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নারী এগিয়ে গেছে। পুরো বিশ্ব নারীরা এগিয়ে নেবে। আমরা নারীরা ঘরে-বাইরে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাব, আমরা অধিকার অর্জন করব। নারীকে বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
×