ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের নারীদের অবস্থান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুদৃঢ় হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ মার্চ ২০১৭

দেশের নারীদের অবস্থান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুদৃঢ় হয়েছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং এদেশের নারীদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা ও ত্যাগের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ অবস্থানে। বুধবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই সরকার গঠন করেছে দেশের নারী সমাজের উন্নয়নে কাজ করেছে। ২০১১ সালে যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে তা এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে উন্নীত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতি, প্রকল্প ও কর্মসূচীতে নারীর অংশগ্রহণ ও জাতীয় শিক্ষানীতিতে নারী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, নারীর ক্ষমতায়নে ও জেন্ডার সমতা নির্ধারণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৪টি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যথা : নারীর সামর্থ্য উন্নীতকরণ, নারীর অর্থনৈতিক প্রাপ্তি বৃদ্ধিকরণ, নারীর মত প্রকাশ ও মত প্রকাশের সম্প্রসারণ এবং নারীর উন্নয়নে একটি সক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টিকরণ। তিনি জানান, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারী উন্নয়নে আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০১৬’ অনুযায়ী ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২তম, যা দক্ষিণ এশিয়ার যে কোন দেশের চাইতে ভাল অবস্থান নির্দেশ করছে। নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন বাংলাদেশের সকল নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ। অর্জিত সাফল্যে নারীরা আজ সমাজকে আলোকিত করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ইসির কাছে ॥ সরকারী দলের আয়েন উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমানে দায়িত্বরত নির্বাচন কমিশন ভবিষ্যতে তাদের উপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম গ্রহণ করবে। তিনি জানান, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জন নির্বাচন কমিশনারের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে শপথের মাধ্যমে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। বিনা অপরাধে আটকরা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে ॥ সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, যারা কারাগারে আটক রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে। এসব মামলা তদন্তাধীন পর্যায়ে থাকতে পারে বা বিচারিক পর্যায়েও থাকতে পারে। বিচারিক পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতা থাকলে এসব মামলায় কারাগারে আটক ব্যক্তিদের জামিনে মুক্তি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা সংশ্লিষ্ট বিচারকের এখতিয়ারাধীন। শেখ হাসিনা আরও জানান, আমি জেলে থাকা অবস্থায় জানতে পারি যে, অনেক মানুষ বিনা অপরাধে জেলে আটক অবস্থায় আছে। এ সকল আটক ব্যক্তিকে অবিলম্বে জেল থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। কিছু এনজিও এবং সরকারী জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে এসব আটক ব্যক্তিদের কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান আছে। তিনি জানান, যারা বিনা অপরাধে আটক রয়েছে তারা সংশ্লিষ্ট আটককারী কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। তাছাড়া যদি কেউ রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তবে আইনে সে বিধানও রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১০ মেগা প্রকল্প ॥ সরকারী দলের অপর সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্য হতে ১০টি প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। ১০টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, রামপাল মৈত্রী সুপার থারমাল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (মেট্রো রেল), এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি আল্টা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ও দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্রাক নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। রেলপথ উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা ॥ সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের আওতায় রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী, নিরাপদ, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, নির্ভরযোগ্য ও যাত্রী সেবামূলক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ সেক্টরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক প্রণীত মহাপরিকল্পনা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। মহাপরিকল্পনা ৪টি পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩৫টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে। বর্তমানে মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করার কার্যক্রম চলমান আছে। রেলওয়ে কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে নাগরিকত্ব ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করাসহ বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি জানান, কোন বিদেশী বিনিয়োগকারী ১০ লাখ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে বা সমপরিমাণ অর্থ কোন স্বীকৃত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন।
×