ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলের মরা নদীতে জোয়ার আনার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৯ মার্চ ২০১৭

ফুটবলের মরা নদীতে জোয়ার আনার উদ্যোগ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত বছরও একবার পদত্যাগ করেছিলেন ক্ষোভে। তবে সেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এবারও পদত্যাগ করলেন। তবে এবার আর ক্ষোভে নয়, স্বেচ্ছাতেই। দেশের শীর্ষ সারির ফুটবল ক্লাব শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের নেতৃত্বের পালাবদল হয়েছে। সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মনজুর কাদের। দীর্ঘ নয় বছর সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলেন তিনি। বুধবার সকালে ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক সাধারণ সভা। সেখানেই গঠিত হয় দশ সদস্যের নতুন কমিটি। ক্লাবটির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সাফওয়ান সোবহান। উল্লেখ্য, সভাপতি পদে সাফওয়ানের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। একই অবস্থা অন্যদের বেলাতেও। কমিটি গঠনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে মনজুর কাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন সাফওয়ান সোবহানের কাছে। এরপর নতুন সভাপতিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন মনজুর কাদেরের সহধর্মিণী সাদিয়া মনজুর। তবে মনজুর কাদের যে দৃশ্যপট থেকে একেবারেই উধাও হয়ে যাচ্ছেন তা নয়। তিনি থেকে যাচ্ছেন ক্লাবটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে। সভাপতি হয়ে সাফওয়ানের প্রতিক্রিয়া, ‘আমার বাবার মতো খেলাধুলা নিয়ে আমারও দারুণ আগ্রহ আছে। আমার পরিবারে খেলাধুলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমি নিজে বহু লোকাল ফুটবল ম্যাচ দেখেছি। এই পদে নির্বাচিত হয়ে আমার লক্ষ্য থাকবে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবকে আবারও শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে দেশের ফুটবলকে আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। শেখ জামাল ধানম-ির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ফুটবলের জাগরণ সৃষ্টি করাই আমার স্বপ্ন।’ সাফওয়ান আরও বলেন, ‘আমি চাপ নিতে পছন্দ করি। ভালবাসি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে। সত্যি কথা বলতে কি, চাপ ছাড়া আমার ভালই লাগে না।’ সাফওয়াত ইঙ্গিত দেন ইউরোপীয় স্টাইলে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং ক্লাবকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবেন। এ নিয়ে অচিরেই তিনি নতুন কমিটির সঙ্গে এক বৈঠকে বসে কর্মপন্থা স্থির করবেন। শুধু ফুটবল নয়, ক্রিকেট, হকি এবং অন্য খেলাতেও শেখ জামাল ক্লাবের ভাল করার ব্যাপারে এবং সেই সঙ্গে ক্লাবের যুব দলের উন্নয়নেরও ইচ্ছা ও পরিকল্পনার কথা জানান সাফওয়ান। ক্লাবের আয়ের উৎস প্রসঙ্গে তার অভিমত, ‘এ ব্যাপারে আমার নিজস্ব একটা পরিকল্পনা আছে। খুব শীঘ্রই তা জানতে পারবেন।’ বিদায়ী সভাপতি মনজুর কাদের বলেন, ‘আমি নিজেই এই পদ ছেড়ে দিলাম। নয় বছর তো ছিলাম। আর কত? আমি মনে করি এই পদে সাফওয়ান যোগ্য ব্যক্তি এবং অবশ্যই তিনি সবকিছু সামলাতে সফলতার পরিচয় দেবেন বলে বিশ্বাস করি। নতুন সভাপতি আমার সন্তানের মতো। আমি সবসময়ই তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।’ কাদের আরও যোগ করেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমি অনেক সাফল্য এনে দিয়েছি। যা অন্য কোন ক্লাবের ইতিহাসে ঘটেনি। তারপরও আমি সভাপতির পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইনি। আসলে ফুটবলের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে আমার জন্য পদ কোন বিষয় নয়।’ মনজুর কাদের। তার নামটিই যেন চমকময়। যেখানেই স্পর্শ করেন, সোনা ফলিয়ে ছাড়েন সেখানেই। একজন সফল, জনপ্রিয় ও দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিরাজমান। ১৯৯৩ সালে তখনকার সাদামাটা ফুটবল ক্লাব মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের দায়িত্ব নিয়ে সে ক্লাবটিকে পরিণত করেছিলেন শীর্ষ ক্লাবে। ছিলেন ঢাকা আবাহনী লিমিটেডেরও ম্যানেজার। সে সময়কার ফুটবলের জোয়ারের তোড়ে একঝাঁক তারকা ফুটবলারকে নিয়ে গঠন করেছিলেন ‘ড্রিম টিম’ মুক্তিযোদ্ধা। এনে দিয়েছিলেন নজরকাড়া সাফল্য। কয়েক বছরের বিরতি দিয়ে আবারও নতুন দায়িত্ব, নতুন চ্যালেঞ্জ। ধানম-ি ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নিরন্তর সুকঠিন সাধনায় ফলও পান ঈর্ষণীয়। গত নয় বছরে শেখ জামাল ফুটবলে দেশী-বিদেশী মিলে মোট ১৫ ট্রফি জিতেছে, যার মধ্যে ১০টি চ্যাম্পিয়ন এবং ৫টি রানার্সআপ ট্রফি। এর মধ্যে আছে মহিলা ফুটবলে প্রথম পেশাদার ফুটবল লিগের শিরোপাও। এখন দেখার বিষয়, নতুন সভাপতি হিসেবে কতটা সাফল্য পান সাফওয়ান।
×