ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুদীপ্ত ধ্রুব

কনসার্টে মুখর ৭ মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৯ মার্চ ২০১৭

কনসার্টে মুখর ৭ মার্চ

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, ওই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবন্ধুর এই তেজোদীপ্ত ঘোষণাই ছিল বাংলাদেশের জন্ম বৃত্তান্তের প্রথম ভিত্তি। কখনও কখনও একটি ভাষণ লিখে দেয় শোষিত-নিপীড়িত একটি জাতির ভাগ্য। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে আদায় করে নিতে শেখায় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ঠিক তেমনই একটি। বিশ্বখ্যাত সেই ভাষণটির চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সেন্টার ফর রিসার্চের (সিআরআই) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দেশের সবচেয়ে বড় ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম ‘ইয়ং বাংলা’ তৃতীয়বারের মতো এ কনসার্টের আয়োজন করে। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ কনসার্টে যেন তারুণ্যের বাঁধভাঙা ঢল নামে। দুপুর থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তরুণ-তরুণীদের প্রবেশ করতে দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের চেতনায় যেন উজ্জীবিত ছিল পুরো স্টেডিয়াম। এই কনসার্টে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের গানের পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত মুক্তির প্রেরণা জাগানিয়া গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন এ সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পীরা। বরাবরের মতো এবারও কনসার্ট মাতান দেশের বিখ্যাত ব্যান্ড ওয়ারফেজ, চিরকুট, আর্বোভাইরাস, লালন, ক্রিপটিক ফেইট, নেমেসিস, শিরোনামহীন ও শূন্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে সুজেয় শ্যাম ও তার সহ-সঙ্গীতশিল্পীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র্র্রের জন্য গান তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দানের পাশাপাশি চেতনায় ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলাকে স্বাধীন করার প্রেরণা। আর তাই স্বাধীনতার ছেচল্লিশ বছর পর সেই প্রেরণাদায়ী গানগুলোর মধ্য থেকে দুর্লভ পাঁচটি গানের এক নতুন সংস্করণ নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হয় এবারের জয়বাংলা কনসার্টে। কনসার্টের ফাঁকে ফাঁকে বড়পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের রঙিন সংস্করণও দেখানো হয়। তখন যেন মনে হচ্ছিল সাদাকালো সেই অতিপরিচিত ঘটনাটি চোখের সামনে ঘটছে! শ্রোতা-দর্শককে এই দিকটিও আলোড়িত করেছে। অনেক বিদেশী অতিথিকেও দেখা গেছে এই আয়োজনে। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বিকেল পৌনে পাঁচটা অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পূর্ণ ঠিক যেন ৭ মার্চে যেমন ছিল। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ দিয়ে শুরু হয় কনসার্টের মূল পরিবেশনা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। হাজার হাজার তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কনসার্টটি উপভোগ করেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ও নাতি রাদওয়াদ মুজিব সিদ্দিক ববি। এছাড়া দর্শক সারিতে বসে গান শুনেছেন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন এ প্রজন্মের অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা এর মধ্যে অন্যতম তারিন, তানভীন সুইটি, হিল্লোল, অরুণা বিশ্বাস, দীপা খন্দকার, শাহেদ আলী, মৌসুমী নাগ, স্বাগতা, শামীমা তুষ্টি, শানারেই দেবী শানু, সাবরিক সাকা মীমসহ অনেকে। গ্যালারিতে তাদের মাঝে ছিলেন এক সময়ের অভিনেত্রী ও বর্তমান মন্ত্রী তারানা হালিম। প্রথমে মঞ্চে আসে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ ছেলে শেখ কামালের প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড স্পন্দন ৭২। ‘জয়বাংলা বাংলার জয়’ গান নিয়ে শুরু হয় তাদের পরিবেশনা। এরপর একে একে দলটি গেয়ে শোনায় ‘স্কুল খুইলাছেরে মওলা স্কুল খুইলাছে’ ও ‘ওই পাগলা তোর পাগলি কই’। সন্ধ্যায় মঞ্চে ওঠে ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ড। দলটি পরিবেশন করে ‘ওঠো বীর বাঙালী’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে’, ‘চোখের জল’, ‘রাঙিয়ে দাও আমার স্বপ্নকে’, ‘আক্রমণ’ প্রভৃতি গান। এরপর একে একে মঞ্চে আসে আর্বোভাইরাস ব্যান্ড, শূন্য ব্যান্ড , চিরকুট, শিরোনামহীন এবং ওয়ারফেজ ব্যান্ড। তাদের সঙ্গে গেয়েছেন এলিটা করিম। নেমেসিসের সঙ্গে জেফার সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছবি : ইবনুল আসেফ জাওয়াদ
×