ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্যানারি বন্ধের নির্দেশ!

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৯ মার্চ ২০১৭

ট্যানারি বন্ধের নির্দেশ!

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার রাজধানীর হাজারীবাগ ছাড়তে ব্যর্থ ট্যানারিগুলোকে অবিলম্বে বন্ধ করে দেয়ার এক নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আইন অনুসারে এসব ট্যানারির বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার নির্দেশও রয়েছে। এসব আদেশ-নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হয়েছে কিনা, তা তদারকি করতে বলা হয়েছে পরিবেশ অধিদফতরকে। সর্বশেষ পরিস্থিতি শুনানির জন্য ১০ এপ্রিল পরবর্তী দিন ধার্য করেছে আদালত। উল্লেখ্য, ২০০৩ সাল থেকে গত ১৩ বছরে দফায় দফায় সময় বেঁধে দেয়ার পরও অধিকাংশ ট্যানারি সরানো যায়নি হাজারীবাগ থেকে। ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের ব্যাপারে ট্যানারি শিল্প মালিকরা যা করছেন, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে শেষ সময়সীমা বেঁধে দেয়া ছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। তবে দুঃখজনক হলো, একশ্রেণীর চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিক সরকার ও আদালতের নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়েই যাচ্ছেন। সত্যি বলতে কি রাজধানী তথা বুড়িগঙ্গার অসহনীয় ও তীব্র ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে বেশ কয়েক বছর আগেই হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। হাজারীবাগে ছোট-বড় ১৫৪টি শিল্প ইউনিট রয়েছে, যেখানে কাঁচা চামড়া রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রক্রিয়াজাত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এর কোনটিতেই কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা ইটিপি নেই। ফলে এসব ট্যানারির যাবতীয় কঠিন ও তরল বর্জ্য গিয়ে পড়ে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে। এসব বর্জ্যে প্রধানত থাকে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত লবণ, সালফিউরিক এসিড, ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক, যা মানবদেহ, পশুপাখি সর্বোপরি প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে হাজারীবাগ ও এর চারপাশের ভয়াবহ পরিবেশ দূষণসহ জনস্বাস্থ্য হুমকিতে রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। তদুপরি প্রধানত হাজারীবাগের একক দূষণে, যার পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ, রাজধানীর প্রাণ বুড়িগঙ্গা তার নাব্য হারিয়েছে অনেক আগেই। এই নদীতে এখন মৎস্য প্রজাতি তো দূরের কথা, এমনকি মশককুলও বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। ফলে জনসাধারণ, পরিবেশ সংগঠনসমূহ, সরকারসহ দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের। উচ্চ আদালতও এ বিষয়ে জরিমানা নির্ধারণসহ চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছে। সেই মোতাবেক অর্ধশতাধিক ট্যানারি ইতোমধ্যে সাভারে স্থানান্তরের কাজ শুরু করলেও বাকিগুলোর কোন হেলদোল আছে বলে মনে হয় না। ট্যানারি মালিকরা বলছেন তারা আবারও আপীল করবেন। ট্যানারি শিল্প মালিকদের দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত প্রায় সবই মেনে নিয়েছে। সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে জমি বরাদ্দসহ কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা ইটিপি স্থাপন করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণেরও কোন সমস্যা নেই। কিছু ট্যানারি সেখানে কাজ শুরুও করেছে। তবু বাকিরা কেন যেতে চাচ্ছেন না, তা বোধগম্য নয়। অথচ সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পুরোপুরি চালু হলে অনেকটাই সহজসাধ্য হয়ে উঠবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার আরও সম্প্রসারণ করা। তবে কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে সাভারে। এই যেমন, সেখানে বর্জ্য শোধনাগারে লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। ফলে দূষিত লবণপানি গিয়ে পড়বে ধলেশ্বরীতে। তবে অচিরেই সে সমস্যা সমাধান করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন শিল্পসচিব। সুতরাং কোন অবস্থাতেই আর টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ নয়। প্রয়োজনে চূড়ান্ত আলটিমেটাম দিয়ে হলেও হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প উচ্ছেদ করা জরুরী। একই সঙ্গে চামড়া শিল্প শ্রমিকদের পুনর্বাসনও অত্যাবশ্যক।
×