ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৮ মার্চ ২০১৭

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা

পরিচালক, শিকড় একাডেমি (একাডেমিক কেয়ার), ১২২, মনেশ্বর রোড, ঝিগাতলা, ঢাকা। মোবাইল: ০১৯১৪২০৪২৯৩ প্রিয় শিক্ষার্থী, শিকড় একাডেমির পক্ষ থেকে তোমাদের জানাই অসংখ্য শুভেচ্ছা। কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর করার জন্য কবিতাটি যত বেশি বিশ্লেষণ করে মূলভাব বা কবির মনোভাব ও বক্তব্য আয়ত্তে আনতে পারবে, মানম্মত উত্তর লিখা তত সহজ হবে। এক কথায়, মান সম্মত উত্তর লিখে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তিতে কবিতার মূলভাব ও বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আয়ত্তে আনার বিকল্প নেই। আজ তোমাদের জন্য ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার সামগ্রিক পর্যালোচনা করা হল, যা তোমাদের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে বিরাট সহায়ক হবে। আঠারো বছর বয়স -সুকান্ত ভট্টচার্য বাংলা কবিতার বিশাল দিগন্তে ধূমকেতুর মতো হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে মূহূর্তেই হারিয়ে যাওয়া এক কবির নাম সুকান্ত ভট্টচার্য(১৯২৬-১৯৪৭)। স্বল্প পরিসরের কবি জীবনে সুকান্ত রেখে গেছেন তার সৃজনশীল প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর। তিনি ছিলেন রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের বিদ্রোহী তরুণ কবি, যিনি নজরুলের মতোই তার কাব্যে উচ্চারণ করে গেছেন একদিকে অন্যায় অবিচার, শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও সংগ্রামের আহ্বান এবং অন্যদিকে তারুণ্যের জয়গানে ছিলেন মুখর। চির তারুণ্যের প্রতীক কবি সুকান্ত তার সংগ্রামী তুলির আঁচড়ে অতিশয় বাস্তবতায় তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যকে চিত্রিত করেছেন তার ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়। আলোচ্য ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় যৌবন সন্ধিক্ষণে উপনীত তারুণ্যের স্পর্ধিত অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে । কবি নিজেই নিজের অভিজ্ঞতাকে প্রয়োগ করেছেন এই কবিতায়। বাধ ভাঙা জোয়ার আর যৌবনের অবাধ্য উচ্ছ্বাসের মত মানবজীবনের এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য চিত্রিত হয়েছে এ কবিতায়। নবসৃষ্টির উদ্দীপনায় যৌবনে জেগে উঠে অন্তর, এক ধরনের অস্থিরতায় তারুণ্যকে তাড়া করে নবসৃষ্টির প্রেরণা। একেই কবি ‘দুঃসহ’ বিশেষণে ভূষিত করেন। যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার দুঃসাহসে মাথা তুলে দাঁড়াবার মতো ঝুঁকি নেওয়ার বয়স আঠারো বছর। পরনির্ভর শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে আত্মনির্ভর যৌবনের মহাসমুদ্রে অবগাহনের জীবন সন্ধিক্ষণ আঠারো বছর বয়সে। প্রগতির পথে এগিয়ে চলার দূর্বার গতি জীবনে নেমে আসে তারুণ্যের অভিষেকের মধ্য দিয়ে। সে কারণে তারুণ্য ‘পদাঘাতে চায় ভাঙতে পথের বাঁধা’। দেশ ও জাতির মধ্যে রক্তদানের তীব্র নেশা শিরায় শিরায় ছলকে উঠতে পারে তারুণ্যেই। বাষ্পের বেগে স্টীমার যেভাবে দূর্বার গতিতে ছুটে চলে, তারুণ্যেও মানুষকে অফুরান প্রাণ শক্তিতে কেবলই সামনে এগিয়ে নেয়। পথ চলতে এই বয়স কখনোই থেমে যায় না, এগিয়ে চলে দূর্বার গতিতে। জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময় তারুণ্য। তারুণ্যের দুঃসাহসী স্বপ্ন ও কল্পনার উপলব্ধি আসে কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণ আঠারো বছর বয়সে। অসুন্দরকে তাড়িয়ে সুন্দরকে আহবানের জন্য অন্তর আকুল হয়ে ওঠে। এই বয়সেই দূর্র্বিনীত যৌবনের পদার্পনের মধ্য দিয়েই মানুষ হয়ে ওঠে স্বাবলম্বী এবং আতœপ্রত্যয়ী। তারুণ্যের নানামাত্রিক বৈশিষ্ট্যে আঠারো বছর বয়স এক অনন্য অনুভবের দুয়ার খুলে দেয়। নব কল্পনার ঝড়ে তারুণ্য থাকে অস্থির। অপূর্ণ স্বপ্নের দুঃসহ যন্ত্রণায় “এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরো থরো”। এই অতৃপ্তি বেদনা দূর্যোগের মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস যোগায়। অজানাকে জানার অভিযানে তারুণ্য থাকে সর্বদা অস্থির। দেশ ও জাতির মুক্তি ও কল্যাণে শুভ্র ও সুন্দরের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে একমাত্র তারুণ্যই। স্থবিরতা, নিশ্চলতা আর জরাজীর্ণতা স্পর্শ করতে পারে না তারুণ্যকে, তাইতো পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনখচিত তারুণ্য। অজেয়কে জয় করার শ্রেষ্ঠতম সময় যৌবন। মানব সভ্যতার সমগ্র সাফল্যের নেতৃত্ব দিয়েছে যুগে যুগে তরুণরাই। জীবনের এই শ্রেষ্ঠতম সময়ের বন্দনায় মুখর কবি সুকান্তের সাথে আমিও একমত যে, “এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয় পথচলতে এ বয়স যায়না থেমে এ বয়সে তাই নেই কোন সংশয়।” পরিশেষে বলতে পারি- নবজীবন রচনার চাবিকাঠি যৌবনের আনন্দ-বেদনার অনুভবে অবগাহনই তারুণ্যের প্রাণশক্তি। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দূর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত-এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন নানা সমস্যা পীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রত্যাশা থেকে কবি তাঁর কবিতার সর্বশেষ পঙ্ক্তিতে বলেছেন- ‘এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।’ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় চিরতারুণ্যের দূর্বারগতি বহু মাত্রিক বৈশিষ্ট্যে দেদীপ্যমান।
×