ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্দান্ত জয়ে সমতা ফেরাল ভারত

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৮ মার্চ ২০১৭

দুর্দান্ত জয়ে সমতা ফেরাল ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লোকেশ রাহুলের ব্যাটিং দৃঢ়তা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ঘূর্ণিবলে ব্যাঙ্গালুরু টেস্টে ৭৫ রানের দারণ জয় পেয়েছে ভারত। চার ম্যাচের সিরিজে ১-১এ সমতা ফিরিয়েছে বিরাট কোহলির দল। চতুর্থদিনে ১৮৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ১১২ রানে অলআউট। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের সংগ্রহ ছিল ২৭৬/১০। ভারত ১৮৯/১০ ও ২৭৪/১০। দুরন্ত বোলিং উপহার দিয়ে স্বাগতকিদের মনে রাখার মতো জয় এনে দেন অশ্বিন। ৪১ রান দিয়ে ৬ অসি ব্যাটসম্যানের প্রাণ বধ করেন তুখোড় এই অফস্পিনার। ম্যাচে তার শিকার সংখ্যা ৮। তবে বোলারদের দাপটের মাঝে ৯০ ও ৫১ রানের চমৎকার দুটি ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যাচসেরা ওপেনার লোকেশ রাহুল। পুনের প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের লজ্জার হারের পর সিরিজ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখতে এখানে জিততেই হতো, সুপার কোহলিবাহিনী সেটি করে দেখাল। চারদিনে ফল, ভারতের জয় ৭৫ রানেÑ মনে হতে পারে ম্যাচটা একতরফা। তবে বাস্তব চিত্র মোটেই তেমন নয়। ব্যাঙ্গালুরু টেস্টের পরতে পরতে ছিল রোমাঞ্চ। চার ইনিংসে একাধিকবার ম্যাচের লাগাম বদল হয়েছে। কখনও অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেছে, কখনও ভারত। তবে শেষ হাসিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল কোহলিরা। চিড়ধরা এম চিন্মাস্বামীর উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে এসে ১৮৮ রানের লক্ষ্যটা যে মোটেও সহজ ছিল না। স্টিভেন স্মিথদের ১১২ রানে গুঁড়িয়ে যওয়াই তার চূড়ান্ত প্রমাণ। প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানে পিছিয়ে থাকার পর এমন উইকেট বিবেচনায় নিলে ভারতের এই জয় সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা। ৪ উইকেটে ২১৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে ২৭৪-এ নিয়ে যাওয়ার রূপকার রাহুল ও চেতেশ্বর পুজারা। ব্যক্তিগত ৫১ রানে রাহুল ও পুজারা ৯২ রানে ফেরার পর দ্বিতীয় নতুন বলে স্বাগতিক লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেন দুই পেসার মিচেল স্টার্ক ও জস হ্যাজলউড। মরা পিচেও গতির ঝড় তুলে ৬ উইকেট নেন হেজলউড, যার একটি পুজারার। ক্যারিয়ারে প্রথমবার নব্বইয়ে আউট হন পুজারা (৯২)। বাকি গল্পটা কেবলই অশ্বিনের। শুরুটা ডেভিড ওয়ার্নারকে (১৭) ফিরিয়ে দেন তিনি। আউট হওয়ার পাশাপাশি একটি রিভিউ নষ্ট করেন ওয়ার্নার। যেটির খেসারতও দিতে হয় সফরকারীদের। উমেশ যাদবের বলে শন মার্শের (৯) এলবিডব্লিউ নিয়ে সংশয় ছিল। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে অনেক আলোচনার পর রিভিউ নেননি মার্শ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ছিল অনেক বাইরে। ওই সময় দুটি রিভিউ হাতে থাকলে হয়ত রিভিউ নিতেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার ভরসা হয়ে তবু ছিলেন স্মিথ (২৮)। অধিনায়ক খেলছিলেনও দারুণ। কিন্তু এমন এক বলে আউট হন, যেটিতে আসলে করার ছিল সামান্যই। পিচ করা যাদবের বল তার গোড়ালিতে আঘাত করে, এলবিডব্লিউ। ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। চা বিরতির পর দ্রুতই সব শেষ করে দেন অশ্বিন। ১১ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া হারায় শেষ ৬ উইকেট। ৪১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। ইনিংসে ২৫তম বারের মতো ৫ উইকেট নিয়ে ছুঁয়েছেন হরভজন সিংকে। ভাজ্জির লেগেছিল ১০৩ টেস্ট, অশ্বিনের ৪৭। ২৬৯ উইকেট নিয়ে ৪৭ টেস্টেই ছাড়িয়ে গেছেন বিষেন সিং বেদিকে (৬৭ টেস্টে ২৬৬ উইকেট)। মাত্র ৩০ টেস্টেই দেশের মাটিতে পূর্ণ করেছেন ২০০ উইকেটের মাইলফলক। স্কোর ॥ ভারত প্রথম ইনংস ১৮৯/১০ (৭১.২ ওভার; রাহুল ৯০, মুকুন্দ ০, পুজারা ১৭, কোহলি ১২, রাহানে ১৭, নায়ার ২৬, অশ্বিন ৭, সাহা ১, জাদেজা ৩, যাদব ০*, ইশান্ত ০; লেয়ন ৮/৫০, স্টার্ক ১/৩৯, ও’কেফে ১/৪০, হ্যাজলউড ০/৪২) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৭৪/১০ (৯৭.১ ওভার; রাহুল ৫১, মুকুন্দ ১৬, পুজারা ৯২, কোহলি ১৫, জাদেজা ২, রাহানে ৫২, নায়ার ০, ঋদ্ধিমান ২০*, অশ্বিন ৪, উমেশ ১, ইশান্ত ৬; স্টার্ক ২/৭৪, হ্যাজলউড ৬/৬৭, লেয়ন ০/৮২, ও’কেফে ২/৩৬, মিচেল মার্শ ০/৪)। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ২৭৬/১০ (১২২.৪ ওভার; ওয়ার্নার ৩৩, রেন শ’ ৬০, স্মিথ ৮, শন মার্শ ৬৬, হ্যান্ডসকম্ব ১৬, মিচেল মার্শ ০, ওয়েড ৪০, স্টার্ক ২৬, ও’কেফে ৪*, লেয়ন ০, হ্যাজলউড ১; ইশান্ত ১/৪৮, যাদব ১/৫৭, অশ্বিন ২/৮৪, জাদেজা ৬/৬৩, নায়ার ০/৭) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১১২/১০, লক্ষ্য ১৮৮ (৩৫.৪ ওভার; ওয়ার্নার ১৭, রেন শ’ ৫, স্মিথ ২৮, শন মার্শ ৯, হ্যান্ডসকম্ব ২৪, মিচেল মার্শ ১৩, ওয়েড ০, স্টার্ক ১, ও’কেফে ২, লেয়ন ২, হেজলউড ০*; ইশান্ত ১/২৮, অশ্বিন ৬/৪১, উমেশ ২/৩০, জাদেজা ১/৩)। ফল ॥ ভারত ৭৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ লোকেশ রাহুল (ভারত)। সিরিজ ॥ চার টেস্টের সিরিজ ১-১এ চলমান।
×