ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গলে বড় সংগ্রহের পথে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৮ মার্চ ২০১৭

গলে বড় সংগ্রহের পথে শ্রীলঙ্কা

মিথুন আশরাফ ॥ দুই বন্ধু মুস্তাফিজ-মিরাজ। দুইজনই আবার এ মুহূর্তে বাংলাদেশের বোলিং কান্ডারি। পেস আক্রমণের আসল ভরসা আঠারো মাস পর টেস্ট খেলতে নামা মুস্তাফিজ। আর স্পিন আক্রমণের প্রাণ মিরাজ। দুইজনই এক উইকেট করে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বিপাকে ফেললেন। সঙ্গে পেসার শুভাশীষ রায় শ্রীলঙ্কাকে বিপত্তিতে ফেলার শুরুটা করলেন। কিন্তু দিন শেষে তা আর বজায় থাকল না। শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়াল। সেই ঘুরে দাঁড়ানর পুরো কৃতিত্বটাই নিয়ে নিলেন কুশল মেন্ডিস। ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৬৬ রান করে দিনটি নিজের করে নিলেন। ধ্বংসস্তূপে পড়া শ্রীলঙ্কাকে জাগিয়ে তুললেন। রানের পাহাড় গড়ার পথে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নিয়ে চললেন। শেষ পর্যন্ত দিন শেষ হওয়ার আগে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রান করল স্বাগতিক লঙ্কানরা। আসেলা গুনারত্মের ব্যাট থেকে এসেছে ৮৫ রান। অথচ গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার মঙ্গলবার শুরু হওয়া প্রথম টেস্টের প্রথমদিনটি বাংলাদেশেরই হতে পারত। যদি মেন্ডিস রানের খাতা খোলার আগেই ‘নতুন জীবন’ না পেতেন। টস হেরে ফিল্ডিং করে বাংলাদেশ। মুস্তাফিজ দীর্ঘদিন পর আবার টেস্টে বল হাতে নেন। এরপর তাসকিন আহমেদ শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের শুরুর দিকে কাঁপিয়ে তোলেন। কিন্তু উইকেট ধরা দিচ্ছিল না। শুভাশীষ নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই সফল হয়ে যান। ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারের সময় শুভাশীষের হাতে বল তুলে দেন এ ম্যাচটি থেকেই উইকেটরক্ষকের ভূমিকা হারিয়ে ফেলা অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। চতুর্থ বলেই শ্রীলঙ্কা দুর্গে আঘাত হানেন শুভাশীষ। তার দেয়া অতিরিক্ত গতির কাছে নত হয়ে বোল্ড হয়ে যান উপুল থারাঙ্গা (৪)। ১৫ রানেই শ্রীলঙ্কা প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে। থারাঙ্গা আউট হতেই ব্যাট হাতে নামেন মেন্ডিস। পরের বলেই মেন্ডিসকেও বোকা বানান শুভাশীষ। মেন্ডিসের ব্যাট ছুঁয়ে বল উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাসের তালুবন্দী হয়। সে কি আনন্দ! মুহূর্তেই দুই উইকেট নেই। কিন্তু না। দুর্ভাগ্য ঘিরে ধরে। মেন্ডিস আউট হননি। কেন? ‘নো’ হয়। শুভাশীষ ‘ওভার স্টেপ’ করেন। ক্রিজ থেকে পা বের হয়ে যায়। তাই ‘নো’ হয়। মেন্ডিসও বেঁচে যান। সেই যে ‘নতুন জীবন’ পান। এরপর তরতর করে এগিয়ে যেতে থাকেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট শতকটিও করে ফেলেন। মেন্ডিস এগিয়ে যেতে থাকলেও আরেকদিকে ঠিকই বাংলাদেশ পেসার ও স্পিনাররা আঘাত চালিয়ে যান। শুভাশীষের পর মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার এক ওভার আগে করুনারত্মেকে আউট করে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। করুনারত্মে যেন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তাতে থামিয়ে দেন মিরাজ। টেস্ট মেজাজে খেলতে থেকে হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে বাজে শট খেলেন। তাতেই আউট করুনারত্মে (৩০)। মিরাজের অফস্ট্যাম্পের বাইরে ফেলা বলটি সোজাই যাচ্ছিল। বলটি কাট করতে গিয়েই পড়লেন বিপদে। ব্যাটে লেগে বল স্ট্যাম্পে লাগল। মধ্যাহ্ন বিরতির পর যেন বাংলাদেশ বোলাররা আরও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে শুরু করলেন। ৬০ রানে ২ উইকেট হারাল শ্রীলঙ্কা। আর ১ রান যোগে মধ্যাহ্ন বিরতিও পড়ল। এরপর বাংলাদেশ বোলাররা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে থাকলেন। কিন্তু উইকেট মিলছিল না। যেটি খুব জরুরী ছিল। মেন্ডিস ও চান্দিমাল মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, তিলকারত্মে দিলশানরা না থাকায় চান্দিমালই এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার ভরসা। সেই চান্দিমাল অপরদিক আগলে রাখতে থাকেন। আর মেন্ডিস এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে চান্দিমালকে ঠেকিয়ে দিলেন মুস্তাফিজ। টেস্ট মেজাজে খেলতে থাকেন চান্দিমাল। ৫৪ বলে মাত্র ৫ রান করেন। অফ কাটারে চান্দিমালকে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। মেন্ডিস-চান্দিমালের জুটিও ভেঙ্গে যায় ৩২ রানে। বাংলাদেশকে পেলে সবসময়ই চান্দিমাল যেন বিশেষ ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ ৫ ইনিংসের তিনটিতেই শতক করেন। এবার প্রথম ইনিংসে আর পারলেন না চান্দিমাল। তাকে ঠেকিয়ে দিলেন বাংলাদেশ দলের এ মুহূর্তের সেরা পেসার মুস্তাফিজ। ৯২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল শ্রীলঙ্কা। মনে হলো দিনটি বাংলাদেশেরই হতে চলেছে। কিন্তু মেন্ডিস ততক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে গেলেন। এমনভাবে খেলতে থাকলেন, এ টেস্টের প্রথমদিনটিতে শুধু নিজের নামটিই গেঁথে রাখলেন। যে ব্যাটসম্যান কোন রান না করেই সাজঘরে ফিরত। সেই ব্যাটসম্যান ২৪২ বলে ১৮ চার ও ২ ছক্কায় ১৬৬ রান করে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করলেন। তার সঙ্গে যিনি দিনের শেষভাগ পর্যন্ত ছিলেন, তিনিও বড় ইনিংস খেলে দিলেন। আসেলা গুনারত্মে। খুব পরিচিত নাম নন। তবে অস্ট্রেলিয়ায় বিপক্ষে টি২০ সিরিজে টানা দুই ম্যাচে অর্ধশতক করে পরিচিতের তালিকায় চলে আসেন। এরও আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলে, দুই ম্যাচেরই প্রথম ইনিংসে ৫০ উর্ধ রান করে দেখান। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৪ রান করার পর তো দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১৬ রানের ইনিংসই খেলে বসেন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে এসে টানা তিন টেস্টে কোন না কোন ইনিংসে ৫০ উর্ধ রানও করে ফেললেন গুনারত্মে। ১৩৪ বলে ৭ চারে ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন গুনারত্মে। মেন্ডিস ও গুনারত্মে মিলে আবার চতুর্থ উইকেটে ১৯৬ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। এ জুটিই শ্রীলঙ্কাকে প্রথমদিনে ২৮৮ রানে নিয়ে যায়। এমন সময় তাসকিনের বলে আউট হয়ে যান গুনারত্মে। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ৮৮ ওভারে ৪ উইকেটে ৩২১ রান করে। মেন্ডিসের সঙ্গে ১৪ রানে ব্যাট করছেন নিরোশান ডিকওয়েলা। মনে করা হচ্ছিল, শ্রীলঙ্কা তারুণ্যনির্ভর দল। তাতে বাংলাদেশ ভালই সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু সেই তরুণরাই কিনা ডুবিয়ে দিচ্ছেন। ক্যারিয়ারের ১৫তম টেস্ট খেলতে নেমে মেন্ডিস ও তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা গুনারত্মে মিলে বুঝিয়ে দিলেন, নৈপুণ্য তরুণদের দাঁড়াও সম্ভব! আর সেই সম্ভব কাজটিই শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। রানের পাহাড় গড়ার পথেই এগিয়ে চলেছে শ্রীলঙ্কা।
×