ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকারের রায় যে কোন দিন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৮ মার্চ ২০১৭

কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকারের রায় যে কোন দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন (৫৪) ও মোঃ মোসলেম প্রধানের (৬৬) মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণার জন্য সিএভি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছে। এটি হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ২৮তম রায়। এ দুই রাজাকারের মধ্যে মোসলেম প্রধান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও মোঃ হোসাইন পলাতক রয়েছে। সে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। সে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি হাসান আলীর ছোট ভাই। ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্কে ছিলেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও আসামিপক্ষে আব্দুস ছাত্তার পালোয়ান। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে মোসলেম প্রধান ও সৈয়দ হোসাইনকে ছয়টি অভিযোগেই অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ মামলায় আমরা ধর্ষণ ও ধর্মান্তরকরণকে গণহত্যার সমতুল্য হিসেবে ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আর্জি জানিয়েছি। সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত বিভিন্ন বিচারের নজির তুলে ধরেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের মৃত্যুদ-ই হবে একমাত্র শাস্তি, সে কথাও আমরা আদালতে বলেছি।’ অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস ছাত্তার পালোয়ান বলেন, ‘মোসলেম প্রধান একজন কৃষক এবং সৈয়দ মোঃ হোসাইন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এ দুজন রাজাকার ছিলেন না। তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হলে ইতিহাস বিকৃতির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। এজন্য আমরা আদালতে তাদের খালাস চেয়েছি।’ ২০১৪ সালের ১৩ নবেম্বর থেকে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলার তদন্তকাজ শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হরি দেবনাথ। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয় ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর। চার্জ আমলে নেয় ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি। ট্রাইব্যুনাল চার্জ গঠন করে ২০১৬ সালের ৯ মে। প্রসিকিউশনপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন মোট ২৩ জন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন একজন। হুসাইনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কিশোরগঞ্জে ছিলেন। মোসলেম কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিকলীতে। হোসাইন ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান ওরফে হাছেন আলীর ছোট ভাই। ২০১৫ সালের ৯ জুন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে তার মৃত্যুদ- কার্যকরের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে ৬ অভিযোগ ॥ অভিযোগ-১ : নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশ্মশান এলাকায় ’৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোসাইনের বিরুদ্ধে ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সূত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মণসহ চারজনকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ-২ : নিকলী বাজার ও থানা কম্পাউন্ড এলাকায় হোসাইন ও মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে ’৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন। অভিযোগ-৩ : নিকলীর গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়ায় ’৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং ২৫০টি বাড়িঘরে আগুন দেয়া। অভিযোগ-৪ : নিকলীর নানশ্রী গ্রামে ’৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে অপহরণসহ নির্যাতনের অভিযোগ হোসাইনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ-৫ : হোসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে ’৭১ সালের ১০ অক্টোবর নিকলী সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেকের নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ। অভিযোগ-৬ : ’৭১ সালের ২৬ নবেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মোঃ সেলিমকে হত্যা করে তাদের মরদেহ রাজাকার হোসাইন কিশোরগঞ্জ পৌর সদর, প্যারাভাঙ্গা ও শোলাকিয়ায় রিক্সা দিয়ে ঘুরিয়েছিল এবং মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বীভৎসতা প্রর্দশন করেছিল।
×