ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছুঁইবারে নহে সে...

বহু কামনার কামিনী, সাদা ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মাতোয়ারা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ মার্চ ২০১৭

বহু কামনার কামিনী, সাদা ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মাতোয়ারা

মোরসালিন মিজান ॥ হঠাৎ কামিনী দেখে দারুণ একটা অনুভূতি হলো! বসন্তে ‘এত ফুল ফুটে’, কামিনী ফুটে কি? মনে পড়ছিল না। বাসার টবে স্থাপন করা বনসাই সে কথা মনে করিয়ে দিল। গত কয়েক দিন আগের কথা। সকালে ঘুম থেকে বাগানের দিকে তাকাতেই শুভ্র সুন্দর ফুলটি দৃশ্যমান হলো। আকারে ছোট। এই টুকুন ফুল। ঘন সবুজ পাতার আড়াল ঠেলে দিব্যি বের হয়ে এসেছে। সাদা ফুল ঠিকই। একদমই সাদামাটা নয়। অরূপ সৌন্দর্য। আর মিষ্টি ঘ্রাণের তো কোন তুলনা হয় না। কাছে যেতেই নাকে এসে লাগছিল। নুইয়ে সেই ঘ্রাণ নিতেই দিনের শুরুটা অন্যরকম হয়ে গেল! তো, সেই কামিনীর গল্পটা আবার হোক। মজার ব্যাপার এই যে, রবীন্দ্রনাথ ফুলটি থেকে একটু দূরেই থাকতে বলেছিলেন। অবশ্য দূরত্ব অর্থে দূর নয়। আরও কাছে আসার স্বার্থে দূরে থাকা। কবিগুরুর বলাটি এরকম- জান ত কামিনী সতী কোমল কুসুম অতি/ দূর হ’তে দেখিবারে, ছুঁইবারে নহে সেÑ/ দূর হ’তে মৃদু বায়, গন্ধ তার দিয়ে যায়...। আরও অনেকে লিখেছেন কামিনীর কথা। গল্প উপন্যাসে বার বার এসেছে। বছরে একাধিকবার এ ফুল ফোটে। এখন বসন্ত। অজস্র ফুলের সঙ্গে ফুটছে কামিনীও। শখের বাগান, বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় দেখা যাচ্ছে কামিনী। ফাল্গুনের বৃষ্টিতে ধোয়া শ্বেতশুভ্র কামিনী দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। কামিনীর বৈজ্ঞানিক নাম ম্যুরায়া প্যানিকুলাটা। আদি নিবাস বাংলা-ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, মালয়, চীন ও অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশে বহুকাল ধরে আছে। গুল্ম জাতীয় গাছ উপরের দিকে তেমন বাড়ে না। লম্বায় ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেখতে ঝোঁপের মতো অনেকটা। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা সুন্দর ফুল যেন হাসি হয়ে ফোটে। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা থেকে বললে, কামিনী চিরসবুজ ক্ষুদ্র বৃক্ষ। এর অসংখ্য শাখা প্রশাখা। ঠাসবুনন। এটি লেবু গোত্রীয়। গোষ্ঠীবৈশিষ্ট্যে পাতাও ফুলের অংশ বিশেষ। ফুলের পাঁচ থেকে সাতটি পত্রিকা। মাঝে হলুদ দেখতে একটি পরাগকেশর। ফুলগুলো সবুজ পাতার মাঝে মঞ্জরিবদ্ধ হয়ে ফোটে থাকে। মিষ্টি ঘ্রাণ বিশেষ করে রাতে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিষন্ন মনও তখন ভাল হয়ে যায়। অবশ্য শুধু ফুল নয়, কামিনীর পাতার সৌন্দর্যও উল্লেখ করার মতো। ছোট ছোট পাতা। ঘন বিন্যস্ত। সবুজ এই পাতা বিয়ের গাড়ি, বাসর ঘর সাজাতে ব্যবহার করে দোকানীরা। অন্য ফুলের তোড়া সাজাতেও কামিনীর পাতা ব্যবহার করা হয়। কামিনী থেকে কলম করে কেটেছেঁটে নানা আকৃতি তৈরি করা যায়। একই কারণে এ গাছে ভাল বনসাই হয়। কামিনীর গোল দেখতে ফল হয়। রক্তিম ফল পাখির, বিশেষ করে বুলবুলির প্রিয় খাদ্য। ঔষধি গুণও আছে। গাছটি থেকে তৈরি ওষুধ শরীরের জ্বর সারাতে ব্যবহার করা হয়। ব্যাথানাশক হিসেবেও কাজ করে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কামিনীর রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে কওমারিন্স ও এ্যালকানয়েডস। রয়েছে কারবোবেঞ্জল ও ক্যারটিনয়েডস। এর মূল, বীজ ও ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। গাছটির বিভিন্ন অংশ থেকে সংগ্রহ করা লিপিড, কওমারিন্স ও তেল জাতীয় পদার্থ বায়োলজি ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যতেœ বড় হচ্ছে কামিনী। বাসাবাড়ির বারান্দায় ছাদে হাসি হয়ে ফুটছে। শহরের মূল সড়কের পাশে এখন অনেক নার্সারি। একটু খেয়াল করলে সেখানেও চোখে পড়বে কামিনীর ফুটে থাকা। সবাই খুব কামনা করেন। বহু কামনার কামিনী। এ কারণেই হয়ত অল্প সময়ের জন্য ফুটে। তবে একটি ঝরে পড়তে পড়তে অন্যটি প্রাণ পায়। এভাবে কিছুদিন কামিনীর সঙ্গে সুন্দর কাটিয়ে দেয়া যায়।
×