ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নতুন ইসি, কোন অভিযোগ নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৮ মার্চ ২০১৭

প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নতুন ইসি, কোন অভিযোগ নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গেই উত্তীর্ণ হতে পেরেছে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত হুদা কমিশন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিলেও তাদের অধীনে প্রথম এক সঙ্গে একাধিক স্থানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সোমবার। এদিন ১৪ উপজেলা ও ৪ পৌরসভার ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে তিন উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বাকিগুলো উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কিছুটা নিরুত্তাপ হলেও শেষ পর্যন্ত সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সফলতার সঙ্গেই সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে তারা। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি। এ নির্বাচন নিয়ে কোন মহল থেকে উঠেনি কোন অভিযোগও। যদিও প্রথম থেকে এ ইসির প্রতি অনাস্থাজ্ঞাপন করে আসছে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত সোমবার নির্বাচনের আগ থেকে এ নির্বাচন নিয়ে ইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও করা হয়েছে দল থেকে। তবে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় ফলাফল অনেকটা বিএনপির পক্ষেও গেছে। বিশেষ করে সোমবার যেসব উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন হয়েছে সে সসব উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করতে পারেননি। ১৪ উপজেলার মধ্যে সিলেটের ওসমানীনগর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ফলে দেখা গেছে তিনটির মধ্যে সিলেটের ওসমানীনগর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছে। অপরদিকে খাগড়াছড়ির গুইমারায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে পাস করেছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের উপনির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেছে। এছাড়া পৌরসভায় বগুড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেছে। এদিকে তিনটি উপজেলার সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী জয়লাভ করতে না পারলেও ১১ উপজেলার উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। এছাড়া পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভায় উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ১১টি উপজেলার বিভিন্ন পদে উপনির্বাচনে ভোটার সংখ্যা কম থাকলেও তিনটি উপজেলার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে দেখানো হয়েছে তিনটি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪৮.৩৩ শতাংশ। এছাড়া পৌরসভার উপনির্বাচনসমূহের ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ৬৪.৬৮ শতাংশ। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসির প্রথম পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেও প্রথম থেকে এ ইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছে বিএনপি। তাদের দাবি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের আদর্শের হওয়ার কারণে কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ফলে এই ইসির অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানানো বিএনপির পক্ষ থেকে। ১৪ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এ ইসির বিরুদ্ধে ইসির পদাঙ্কও অনুসরণের অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। নির্বাচনের আগে তিনি বলেন, ১৮টি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা দেয়া, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-নির্যাতন চালানোসহ নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক তা-ব চালানোর অভিযোগ করেন। বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা ‘হাসিনা মার্কা’ নির্বাচন বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীকে চিরদিন ক্ষমতায় রাখার জন্য ভোটারবিহীন নির্বাচন। রিজভী বলেন, এই আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার দিয়ে শাসকদলের প্রভাবমুক্ত, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন কখনই সম্ভব নয়। তবে বিএনপি এই আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে ইসির প্রথম পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। নির্বাচনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি যে ঢালাওভাবে পক্ষপাতিত্বে অভিযোগ সুষ্ঠু নির্বাচনে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে এ নির্বাচনের মাধমে তার কিছুটা হলেও উপশম হয়েছে। তবে এটাই ইসির আসল পরীক্ষা নয়, এ ইসির সামন্যে এখনও সব নির্বাচন রয়েছে। সামন্যের নির্বাচনগুলোতেই প্রমাণ হয়ে তারা কতাটা আস্থার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন। ইসি কর্মকর্তা বলছেন দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বর্তমান ইসি ভিন্ন কৌশল অবলম্বর করে। বিশেষ করে তারা গতানুগতি কোন নির্দেশনার পরিবর্তে ক্ষমতা নিয়েই তারা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন করেন। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিও কঠোর নির্দেশনা দেন। এছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতেও যাবতীয় ব্যবস্থা ইসির পক্ষ থেকে নেয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারও নির্বাচনের ভোট গ্রহণ মনিটরিং করেন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের দিন বিভিন্ন টিভি চ্যালেনের খবর ও মনিটরিং করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য কমিশন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যম হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেও নির্বাচনে অনিয়মের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে সোমবারের অনুষ্ঠিত ১৪ উপজেলা এবং ৪টি পৌরসভার নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে কমিশন বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছিল। তাই কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। কোন অভিযোগও আসেনি। কোথাও নির্বাচনী পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। এজন্য নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভোটারদের উপস্থিতির হার কম ছিল উল্লেখ করে বলেন, যেহেতু উপজেলা নির্বাচন এবং এর মধ্যে উপনির্বাচন ছিল বেশি, তাই ভোটার উপস্থিতিও ৬০ শতাংশের কম হয়েছে। তবে সামনের কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন হবে প্রতিযোগিতামূলক। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ যেমন থাকবে, তেমনি ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি হবে। আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কমিশন খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান ইসি সচিব। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটির বাছাইয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাসহ অপর চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. শাহাদত হোসেন চৌধুরীকে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নিয়েই তারা রাঙ্গামাটির একটি পৗরসভা নির্বাচন পরিচালনা করেন। তবে একসঙ্গে একাধিক স্থানের নির্বাচন হয় গত সোমবারে। যেখানে ১৪ উপজেলায় নির্বাচন ও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই অধীনে আগামী ২২ মার্চ হবে গাইবান্ধা উপনির্বাচন। এছাড়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিহ হবে ৩০ মার্চে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ইসির অধীনে আসল নির্বাচন হবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে ইসির আস্থার পরীক্ষা দিতে হবে।
×