ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ বছরে সাড়ে ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৮ মার্চ ২০১৭

পাঁচ বছরে সাড়ে ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে একের পর এক নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নানাবিধ নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশ উৎকণ্ঠিত। বাংলাদেশে সহিংসতার শিকার নারীর বিচারপ্রাপ্তির জন্য বিশেষ আইন ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩’ রয়েছে। এ আইনের অধীনে বিগত পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের মোট ছয়টি জেলার ৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১১ হাজার ৮৬৪টি মামলার মধ্যে ৩ হাজার ৫৮৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তিকৃত মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ১৮টি, খালাস হয়েছে ১ হাজার ৪৭টি, অব্যহতি পেয়েছে ২ হাজার ৫২৩টি এবং ৮ হাজার ২৭৬টি মামলা এখনও বিচারাধীন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নারীপক্ষ আয়োজিত নারী ও শিশুর প্রতি ন্যায়বিচার : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রেক্ষিত গবেষণার ফলাফল নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমনই তথ্য বেরিয়ে আসে। নারীপক্ষ ১৯৯৮ সাল থেকে পুলিশ, স্বাস্থ্য ও বিচার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০০৩’ প্রয়োগের কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় নারীপক্ষ ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও নোয়াখালীসহ মোট ৬টি জেলায় ৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১১ হাজার ৮৬৪টি মামলা পর্যবেক্ষণ করে। নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম এবং জনগণের অংশগ্রহণ জোরদারকরণ প্রকল্পের অধীনে ৬০টি মামলা পর্যবেক্ষণ করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও জবাবদিহিতা তৈরির মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সহিংসতার শিকার নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্র তৈরি করা। গবেষণায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় দায়েরকৃত ২৯টি ধর্ষণ, ২৫টি যৌতুক, ২টি অপহরণ, ১টি এসিড আক্রমণ, ৩টি দাহ্যপদার্থ দ্বারা আক্রমণসহ মোট ৬০টি মামলা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ২৭ জন সহিংসতার শিকার নারী ও ৯ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে নিবিড় সাক্ষাতকারের মাধ্যমে মামলা দায়ের থেকে বিচারকার্য পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায় সম্পর্কে মতামত গ্রহণ করা হয়। এ থেকে জানা যায়, ভুক্তোভোগী কেউই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। তারা ভীতসন্ত্রস্ত। ঘুমাতে পারে না, লজ্জায় ঘরের বাইরে যেতে পারে না, অন্যদের সঙ্গে মিশতে পারে না। সেই সঙ্গে পরিবার এসব নির্যাতিতকে বোঝা মনে করে। এমনকি থানা, হাসপাতাল ও আদালতের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারীর প্রতি অপমানসূচক ব্যবহার করে থাকেন। যেমন- থানায় মামলা করতে গেলে ‘মেয়েরা আসলেই খারাপ। একটি ছেলে দৈহিক মেলামেশা করতে চাইতেই পারে কিন্তু মেয়েরা সহজেই মেলামেশায় লিপ্ত হয় এবং পরে বিয়ে করতে না চাইলে ধর্ষণের মামলা করে।’ হাসপাতালে মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষার সময় ‘বেহায়া মেয়ে, আগেই শরীর পাইতা দেয়, ...’ ইত্যাদি মন্তব্য করা হয়। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী সহিংসতার শিকার নারীকে ‘খারাপ মেয়ে’ বা ‘দেহ ব্যবসায়ী’ হিসেবে প্রমাণ করতে সচেষ্ট থাকে। সহিংসতার শিকার নারীকে মামলা পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োজিত আইনজীবীকেও (পিপি) প্রতি হাজিরায় টাকা দিতে হয়েছে। মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে সহিংসতার শিকার নারী ও তার পরিবার মানসিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৬০টি মামলার মধ্যে ধর্ষণ ৭টি ও যৌতুক সংক্রান্ত ৬টিসহ মোট ১৩টি মামলায় আপোস হয়েছে। উল্লেখ্য, ধর্ষণের মামলা কখনও আপোসযোগ্য নয়। নারীর ওপর সহিংসতা বা যে কোন ধরনের নির্যাতন গুরুতর অপরাধ। প্রতিটি অপরাধের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং মানসম্পন্ন বিচার দেখার দাবি জানিয়ে প্রশাসনকে ইঙ্গিত করেন নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রওশন আরা। এ সময় তিনি বলেন, ‘সরকারকে মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ, চিকিৎসক, আইনজীবী ও অন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। সেজন্য বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের আস্থা ও আশ্রয়ের স্থলে উন্নীত করতে হবে।’
×