ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গল টেস্ট

প্রথম দিনটি শ্রীলঙ্কার

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৮ মার্চ ২০১৭

প্রথম দিনটি শ্রীলঙ্কার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তারুণ্যনির্ভর দল শ্রীলঙ্কা। অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা নেই। তাই এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের কিছু করার সুযোগ। কিন্তু গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দুই দলের মধ্যকার মঙ্গলবার শুরু হওয়া প্রথম টেস্টের প্রথমদিনটি তো শ্রীলঙ্কা নিজেদের করে নিল। সেই তরুণদের ওপর ভর দিয়েই। দুই তরুণ ক্রিকেটার কুশল মেন্ডিস (১৬৬*) ও আসেলা গুনারতেœর (৮৫) ১৯৬ রানের জুটিতেই তো প্রথম ইনিংসে প্রথমদিনে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রান করে ফেলল শ্রীলঙ্কা। এক এক করে সাত বোলার কাজে লাগানর চেষ্টা করল বাংলাদেশ। কিন্তু কোন কাজ হলো কী? শুরুতে ৯২ রানেই ৩ উইকেট তুলে নেয়া গেছে। পেসার শুভাশীষ রায়ের পর স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও এরপর ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান শ্রীলঙ্কা শিবিরে আতঙ্ক তৈরি করেন। কিন্তু মেন্ডিস ও গুনারতেœ মিলে সেই আতঙ্ক এমনভাবে দূর করেন, এখন বাংলাদেশ শিবিরেই আতঙ্ক। শুভাশীসের গতির কাছে হার মেনে দলের ১৫ রানের সময় উপুল থারাঙ্গা (৪) সাজঘরে ফেরেন। এরপর মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে মিরাজের সোজা বলে বোল্ড হয়ে যান করুনারতেœ (৩০)। মধ্যাহ্ন বিরতির পর অফ কাটারে দিনেশ চান্দিমালকে (৫) আউট করে দেন মুস্তাফিজ। তখন মনে হয়েছিল, দিনটি বুঝি বাংলাদেশের হতে চলেছে। কিন্তু কে জানত, রানের খাতা খোলার আগেই দলের ১৫ রানের সময়ই ‘নতুন জীবন’ পাওয়া মেন্ডিসই ভোগাবেন। থারাঙ্গাকে আউট করার পরের বলেই মেন্ডিসও সাজঘরে ফিরতে পারতেন। শুভাশীষের বলটি মেন্ডিসের ব্যাটের ছোঁয়া লেগে উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাসের হাতেও জমে। কিন্তু বলটি শুভাশীষের পা ক্রিজ থেকে বের হয়ে থাকায় ‘নো’ হয়ে যায়। মেন্ডিসও বেঁচে যান। সেই বাঁচা যে বাংলাদেশের জন্য ‘মরা’র হয়ে উঠবে তা তখন কেউ বোঝেনি। শেষ পর্যন্ত বুঝি তাই হলো। দিনটির শুরুতে শ্রীলঙ্কাকে এত চাপে রেখেও শেষটাতে নিজেদেরই চাপে থেকে শেষ করতে হলো। মেন্ডিস একাই ২৪২ বলে ১৮ চার ও ২ ছক্কায় ১৬৬ রান করে বসলেন। অপরাজিতও আছেন। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া গুনারতেœ ১৩৪ বলে ৭ চারে ৮৫ রান করে আউট হন। আজ দ্বিতীয়দিনে দলকে আরও বড় কিছু উপহার দিতে ব্যাট হাতে নামবেন গুনারতেœ। তার সঙ্গে থাকবেন নিরোশান ডিকওয়েলা (১৪*)। টস হেরে ফিল্ডিং করে বাংলাদেশ। তখন মনে হয়েছিল, শুরুতেই বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের আশা পূরণ হতে চলেছে। কি সেই আশা? টেস্ট শুরুর আগে মুশফিক বলেছিলেন, ‘দলে মুস্তাফিজ, সাকিব ও মিরাজ থাকা মানে আমাদের বোলিং লাইনআপ আরও শক্ত হওয়া। তাদের ভাল করার সামর্থ্য রয়েছে। তাদের মোকাবেলা করা যে কোন ব্যাটসম্যানের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং।’ এ তিনজন বল করা মানে হচ্ছে দল অনেকটাই এগিয়ে থাকা। কিন্তু কোথায়? এ তিনজন কি এমন করতে পারলেন? মুস্তাফিজ ১৮ মাস পর টেস্ট খেলতে নামলেন। শুরুতেই তাই তার হাতে বল তুলে দেয়া হলো। ‘কাটার মাস্টার’ একটি উইকেটও নিলেন। কিন্তু বল হাতে দিনশেষে যে তার বোলিং পরিসংখ্যান (১৫-৩-৫০-১) তাকে বর্ণনা করতে পারছে না। স্পিনে এখন সাকিবের চেয়েও বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছেন মিরাজ। তিনিই বা প্রথমদিনে কতটা কি করতে পারলেন? ১২ ওভার বল করে ৬৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেন। খুবই মুমূর্ষু বোলিং। আর সাকিবকে তো কোন সুযোগই দেয়নি শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা (২৪-৩-৭১-০)। গলে শুরুতে ব্যাটসম্যানরাই আধিপত্য বিস্তার করবে। সঙ্গে পেসারদেরও সুযোগ থাকবে। ধীরে ধীরে দুইদিন যেতেই স্পিনাররা ম্যাচের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবেন। এমনই ধারণা। তাতে তো বাংলাদেশের বিপদই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ পেসাররা তেমন সাড়া ফেলতে পারলেন না। হিসেব অনুযায়ী স্পিনারদের খুব বেশি আলোড়ন জাগানোর সুযোগ টেস্টের দুইদিনে নেই। তাই শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরাই নিজেদের মেলে ধরতে পারলেন। তাতে করে যদি শ্রীলঙ্কা বড় স্কোর গড়ে ফেলে, আজও ব্যাটিং করে; তাহলে দুইদিন শেষ হয়ে যাবে। তৃতীয়দিন থেকে যে স্পিনাররা ম্যাচের রাজা হয়ে উঠবেন, সেই সুবিধা তো লঙ্কানরাই বেশি পাবে। সেই ভাবনা থেকে শ্রীলঙ্কা তিন স্পিনার নিয়েও খেলছে। আর বাংলাদেশ খেলছে তিন পেসার নিয়ে। যদি শুরুতে পেস আক্রমণ দিয়ে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলা যায়। সেই কাজটি হচ্ছিলও। কিন্তু সময় যতই গড়ায়, ততই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ে উজ্জ্বলতা ছড়াতে থাকে। সেই উজ্জ্বলতায় প্রথমদিনটি শ্রীলঙ্কারই হয়ে গেল।
×