ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৮ মার্চ ২০১৭

কুমিল্লায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ৭ মার্চ ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় যাত্রীবাহী একটি বাসে তল্লাশিকালে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে জঙ্গীরা বোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় বাস থেকে নেমে পলায়নকালে পুলিশ-জনতা ধাওয়া করে গুলিবিব্ধ অবস্থায় একজনসহ দুই জঙ্গীকে আহতাবস্থায় আটক করে। পুলিশ ২৪ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার তীরচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আটক জঙ্গীদের মধ্যে একজন হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হোসাইন ছেলে হাসান এবং অপর জঙ্গী জসিমের পরিচয় পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা, র‌্যাব, ডিবি, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। হাইওয়ে পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির এসআই মনিরুল ইসলাম জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত অধিক গতিসম্পন্ন গাড়ি চিহ্নিতকরণে মঙ্গলবার মহাসড়কের জেলার চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের অভিযান চলছিল। এ সময় সার্জেন্ট কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ওই অভিযান চলাকালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী শ্যামলী পরিবহনের অধিক গতিসম্পন্ন একটি বাস বেলা ১১টার দিকে কুটুম্বপুর এলাকায় পৌঁছে। পুলিশ বাসটিকে থামানোর চেষ্টা করলে বাসটি পুলিশের সংকেত অমান্য করে দ্রুতগতিতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া করে বাসটি থামানোর পর ব্যাগসহ বাস থেকে নেমে আসা যাত্রীবেশী দুই জঙ্গী ‘আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। কিন্তু ওই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়নি। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের ধাওয়ার মুখে ২ জঙ্গি তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগটি ফেলে দৌড়ে পার্শ¦বর্তী দেবীদ্বার উপজেলার খাদঘর গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে পুলিশ ২৪ রাউন্ড গুলি চালিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জঙ্গি জহির প্রকাশে জসিম (২৫) এবং হাসানকে (২৪) আটক করে। চান্দিনা থানার ওসি নাছির উদ্দিন মৃধা জানান, খবর পেয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত জঙ্গীদের উদ্ধার করে প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল ও চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মোঃ আতিকুল ইসলাম, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন, হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম, র‌্যাব, পিবিআই, ডিবিসহ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সেখান থেকে কড়া পুলিশ প্রহরায় দেড়টার দিকে জঙ্গীদের চোখ বেঁধে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ জসিম ওরফে জহিরকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহত হাসানকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানা গেছে। চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ নাজমা আক্তার জানান, হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে জসিম প্রকাশ জহিরের পরিচয় অজ্ঞাত হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তার গলা ও শরীরের একাধিক স্থানে গুলি লেগেছে। অপর আহত হাসান চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট গ্রামের মৃত হোসাইন মিয়ার পুত্র বলে রেজিস্ট্রারে লেখা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট কামাল হোসেন জানান, আমরা গতি নিয়ন্ত্রণে গাড়িটি ধাওয়া করলেও বাসে থাকা জঙ্গী সদস্যরা তাদের আটকের করা হবে এমন সন্দেহ থেকে আমাদের (পুলিশ) ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। কিন্তু বোমাটি বিস্ফোরণ না হওয়ায় আমরা বেঁচে যাই। হাইওয়ে পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, জঙ্গীদের কাছ থেকে ৬টি বোমা ও ১টি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি বোমা নিষ্ক্রিয় করলে তা বিকট আওয়াজে বিস্ফোরিত হয়, এতে বোঝা যায়, ওইসব বোমা অতিমাত্রায় শক্তিশালী। তিনি আরও জানান, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
×