ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩৯ বেসরকারী ভার্সিটি আরও পাঁচ মাস সময় পেল

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৮ মার্চ ২০১৭

৩৯ বেসরকারী ভার্সিটি আরও পাঁচ মাস সময় পেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালগুলোর নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়াসহ অন্য সমস্যা খুঁজে বের করতে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে। যার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির যৌথ সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া আল্টিমেটামের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ ৩৯ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত পাঁচ মাস সময় পেল। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া নিয়ে সরকারের দেয়া আল্টিমেটাম ৩০ জানুয়ারি শেষ হওয়ার পর সমস্যা সমাধানেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে সভায় বসেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা ঠিক করতেই সভা আহ্বান করা হয়েছিল। তবে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সভার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালগুলোর নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়াসহ অন্য যে সমস্যা আছে তা খুঁজে বের করতে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। চার সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑ ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক এম শাহ নওয়াজ আলী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী, ইউজিসির উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন। জেসমিন পারভীনকে কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে। তবে এর আগেও তারা সময়ে সময়ে জরুরী ভিত্তিতে সুপারিশ করবে। এর ভিত্তিতেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন অমান্যকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পদক্ষেপ আমরা নেব না। আমরা সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই। দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে। আমরা শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলতে চাই না। তাদের কথা চিন্তা করেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য এগুলো আরও ভালভাবে চলুক। তবে আজকেই তো কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য কমিটি করা হয়েছে। জানা গেছে, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গত ৬ বছরে চার দফায় সময় দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুসারে নিজস্ব ক্যাম্পাসে মাত্র ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় গেছে। কিন্তু পুরনো ৫১ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টি এখনও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। তবে কেউ কেউ আংশিক স্থানান্তর করেছে। আবার কেউ কেউ জমি কিনে নক্সা করেছে। এদিকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসির চেয়ারম্যান বরাবর স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফেরার বিষয়ে আইন ও বিধি সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। ওই আবেদনে বলা হয়, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অনুসরণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সরকারের আইন, বিধি ও নীতিমালা অনুসরণও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে পারছে না আইনী জটিলতার কারণে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে বেশির ভাগ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এরইমধ্যে জমি কিনেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলছেন, অনেকে ইতোমধ্যে জমি কিনেছে, রাজউক থেকে নক্সাও অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু সরকারী বিভিন্ন সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিধিমালার বিভিন্ন শর্তের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করতে পারছে না। একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে যে ব্যয় তা যোগাতে ব্যাংক ঋণের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নিতে পারে না। কোন ব্যক্তির একক প্রচেষ্টায় অখ- এক একর নিষ্কণ্টক জমি সীমাহীন উচ্চমূল্যে কিনে আবার একক প্রচেষ্টায় ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। সংশ্লিষ্ট আইনের প্রযোজ্য ধারা সংশোধন করে ক্যাম্পাস নির্মাণের স্বার্থে দেশের প্রচলিতে আইনে ঋণ গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা দূর করা খুব জরুরী। চিঠিতে শেখ কবির হোসেন আরও বলেন, স্থায়ী শিক্ষার মানের একমাত্র নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা এই খাতের অব্যাহত বিকাশের জন্য সহায়ক নয়। কেন আন্তরিকতা থাকার পরও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি তার কারণ অনুধাবনও জরুরী।
×