ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জমাট সার ভেঙ্গে বাজারজাত ॥ প্রতারিত কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৮ মার্চ ২০১৭

জমাট সার ভেঙ্গে বাজারজাত ॥ প্রতারিত কৃষক

সংবাদদাতা, বেড়া, পাবনা, ৭ মার্চ ॥ বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাটে বাফার গুদামের অভাবে দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে লাখ লাখ টন ইউরিয়া সার অযতেœ-অবহেলায় পড়ে আছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জমাটবাধা এসব সার হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে ভাল সারের সঙ্গে মিশিয়ে রিপ্যাকিং করে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বাজারজাত করে চলেছেন। কৃষকদের অভিযোগ, এই সার প্রয়োগ করায় জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তারা সার কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। জানা যায়, বিসিআইসি আমদানিকারকদের মাধ্যমে চীন, মিসর, সৌদি আরব, মরক্কো, তিউনিশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি ও টিএসপি সার আমদানি করে। আমদানি করা রাসায়নিক সার সরকারীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ আমদানিকারকরা সব নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বেশিরভাগ রাসায়নিক সার কমিশন এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এদিকে বিদেশী হাজার হাজার বস্তা ডিএপি, পটাশ, এমওপি, টিএসপি সার নগরবাড়ী ঘাটের কমিশন এজেন্ট ও সার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নগরবাড়ী ঘাটে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমদানিকৃত সার গভীর সাগরে মাদার ভেসেল থেকে আনলোড করে লাইটারেজ জাহাজের মাধমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। লাইটারেজ জাহাজে পরিবহনের সময় সার ভিজে যায়। সরেজমিনে নগরবাড়ী ঘাটে জাহাজ থেকে ভেজা জমাটবাঁধা সার আনলোড করতে দেখা যায়। এই ভেজা জমাটবাঁধা সার কমিশন এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনে নেন। জমাটবাঁধা এই সার ভেঙ্গে রোদে শুকিয়ে ভাল সারের সঙ্গে মিশিয়ে রিপ্যাকিং করা হয়। পরে তারা সড়কপথে ওই সার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে আসছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নগরবাড়ী ঘাটের শেখ ব্রাদার্স, হক ট্রেডার্স, অগ্রণী ট্রেডার্স, অভি ট্রেডার্র্স, এএম ট্রেডার্স, এআর ট্রেডার্স, আমান ট্রেডার্সসহ কয়েক কমিশন এজেন্ট ও ব্যবসায়ী নিম্নমানের রাসায়নিক সার রিপ্যাকিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এ ব্যবসা নিরাপদে চালাতে তারা শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে কৃষি বিভাগের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আব্দুল মমিন নামের এক কৃষক জানান, এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী আগে থেকেই কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে সার নিজেদের গোডাউনে মজুদ করে রাখে। তারপর ইরি মৌসুমে সেসব চড়া দামে কৃষকের নিকট বিক্রি করে থাকে। এসব সারের বেশিরভাগ বস্তাই জটলা বাঁধার কারণে নতুন করে বস্তায় প্যাকেট করা হয়। আব্দুল মজিদ খান নামের আরেক কৃষক বলেন, আমরা বাজারে গেলে সার পাই না। কিন্তু এদের গোডাউনে রাখার জায়গা না থাকার কারণে সারের বস্তাগুলো রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। আবার এসব সার পানি পড়ার কারণে গলে জটলা বেঁধে যায়, তা আবার নতুন বস্তায় বাজারজাত করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের তদারকি না থাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুন নাহার সুমি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×