ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে কালোজিরা চাষের অপার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৮ মার্চ ২০১৭

মাদারীপুরে কালোজিরা চাষের অপার সম্ভাবনা

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ কালোজিরা শুধু মসলা জাতীয় ফসল নয়- মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের মহৌষধ। জেলায় চলতি মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭ গুণ বেশি জমিতে কালোজিরা চাষ হয়েছে। এবার জেলার কালোজিরা চাষীদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে এই ‘কালো সোনা’। কম খরচে বেশি মুনাফা লাভের প্রত্যাশায় আশাতীত হারে কালোজিরা চাষ করা হয়েছে। এতে কালোজিরা চাষের অপার সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ কৃষক ও চাষীরা। এ অঞ্চলের আবহাওয়া কালোজিরা চাষের খুবই উপযোগী বলে কৃষি কর্মকর্তাদের ধারণা। সুতরাং আগামী দিনে এই কালোজিরা ‘কালো সোনা’ নামে খ্যাতি লাভ করবে বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মাদারীপুর ৪ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৯১ হেক্টর জমিতে কালোজিরা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বিগত দিনে অল্প পুঁজি বিনিয়োগে অধিক পরিমাণ মুনাফা হওয়ায় জেলায় এবার ৩ হাজার ৮১১ হেক্টর জমিতে স্থানীয় উন্নত জাতের কালোজিরা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুর সদরে ১ হাজার ৩০ হেক্টর, কালকিনিতে ৮৫ হেক্টর, রাজৈরে ৪৯৬ হেক্টর এবং শিবচরে ২ হাজার ২০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ২২০ হেক্টর অর্থাৎ প্রায় ৭ গুণ বেশি জমিতে কালোজিরা চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তারা। বর্তমান বাজার মূল্যে বিঘাপ্রতি ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন কৃষকরা। কালোজিরা চাষ করে লাভবান হয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি এলাকার এওজ গ্রামের যদুনাথ ম-লের শিক্ষিত ও চাকরিজীবী ছেলে তপন ম-ল। তপন ম-ল বলেন, ‘আমি এ বছর এক ৫৪ শতাংশ জমিতে কালোজিরা চাষ করেছি। ফলন খুব ভাল হয়েছে। খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। যদি প্রাকৃতিক কোন প্রকার সমস্যা দেখা না দেয় এবং মধ্যস্বত্বভোগী না থাকে আর যদি বাজারে ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায়, তাহলে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ হবে। গত বছর কালোজিরা চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছে। এবার আমার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই চাষে আগ্রহী হয়ে কালোজিরা চাষ করেছেন। অনেক কৃষক আমার কাছ থেকে সব ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে সরকারীভাবে যদি সকল প্রকার পরামর্শ, বীজ, সার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়, তাহলে অসহায় কৃষকরা আরও বেশি জমিতে কালোজিরা চাষ করতে আগ্রহী হবেন।’ একই ধরনের কথা বললেন ওই গ্রামের আজাহার মুন্সী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে কালোজিরার যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এ কালোজিরা আমাদের কাছে ‘কালো সোনার’ হয়ে দেখা দিবে।’ তাদের মতো একই গ্রামের রেজাউল, জীতেন হালদার, মিলন হালদার, মানিক হালদার, সুভাষ হালদারসহ শতাধিক কৃষক এ বছর কালোজিরা চাষ করেছেন। তাদের দেখাদেখি কালোজিরা চাষে এলাকার অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আগামী বছর কালোজিরার চাষী হাজারে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় চাষীরা। পেয়ারপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, ‘কম খরচে বেশি মুনাফা লাভের জন্য বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণে কৃষকদের মসলা জাতীয় ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণ করা হয়েছে বলেই এ বছর মাদারীপুরের কৃষকরা ব্যাপকহারে কালোজিরা চাষ করেছেন। এছাড়া মাদারীপুরের আবহাওয়া কালোজিরা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আগামী দিনে এ কালোজিরা চাষের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখা যাচ্ছে।’
×