ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনেশ মাহাতো

অভিমত ॥ সুন্দর হোক নারীর আগামী

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৮ মার্চ ২০১৭

অভিমত ॥ সুন্দর হোক নারীর আগামী

নারী-পুরুষ পৃথিবীর শুরু থেকেই একসঙ্গে পথচলা। কিন্তু নারীর পথ চলায় নানা প্রতিবন্ধকতা সেই প্রথম থেকেই। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না- এরকম নানা বাধা পেরিয়েই পথ চলছে নারী সমাজ। যদিও এখন ধীরে ধীরে সেসব প্রতিবন্ধকতা দূর হচ্ছে সময়ের প্রেক্ষিতে। এমনকি ভোট দেয়ার অধিকারও নারী পেয়েছে অনেক পরে। এখনও পৃথিবীর অনেক দেশে নারীর সৃজনশীলতাকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে আশার কথা, আমাদের দেশে নারীরা এখন সব ক্ষেত্রে অবদান রাখছে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে। পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতেও তারা অবদান রাখছে। নারীর অর্জনের ঝুলিতে প্রতিবছরই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাইলফলক। আর এসব কারণেই দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের দিকে। বর্তমান সময়ে কর্মক্ষেত্রের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে নারীর অংশগ্রহণ নেই। রাষ্ট্র পরিচালনায়, আইন প্রণয়নে, পাহাড় জয়ে, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও নারীরা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে তো নারীরাই এগিয়ে পুরুষের চেয়ে। এক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় গার্মেন্ট শিল্পের কথা বলা যেতে পারে। এখানে তো প্রায় ৮০ ভাগ কর্মীই নারী। তবে এখনও বেশি বঞ্চিত আমাদের দেশের আদিবাসী নারীরা। শ্রমিক পর্যায়ের বা কঠোর পরিশ্রমের কাজগুলোর সঙ্গে মূলত তারাই জড়িত। তারা মাঠে-ঘাটে পুরুষের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। একই সমান কাজ করেও মজুরির দিক থেকে এখনও পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে আছেন এসব নারী। আমাদের দেশের গারো, চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, সাঁওতালসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীরা মাঠে-ঘাটে কাজ করছেন। বিভিন্ন উৎপাদনে তারা রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আদিবাসী সমাজে এখনও কিছু সম্প্রদায় রয়েছে মাতৃতান্ত্রিক। এমনকি এদেশের অনেক বসবাসের অনুপযোগী জায়গাকে বাসযোগ্য করে তুলেছেন এদেশের আদিবাসী নারীগণ। কিন্তু সরকারী অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে যেগুলো থেকে আদিবাসী নারীরা বঞ্চিত। এত কিছু করার পরও নারীদের সমাজে চলার পথ মসৃণ নয়। বিপদসঙ্কুল। হাজার প্রতিকূলতা, বাধাবিপত্তি ডিঙ্গিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টায় চলছে নিরন্তর যুদ্ধ। এরপরও থেমে নেই নারী। চলার পথে, বাড়ি ফেরার পথে, ঘরে-বাইরে, এমনকি কর্মস্থলেও কোন না কোনভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন নারী। তাও থেমে নেই। শুধু বাইরে নয়, নিজ পরিবারেও নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। আর অফুরান এ প্রাণশক্তি নিয়ে শত বছরের বেশি সময় ধরে সমঅধিকার লড়াই আর লক্ষ্য পূরণে শক্তিশালী হওয়ার শপথ নিয়ে আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হচ্ছে। ঊনবিংশ শতক থেকে শুরু হওয়া নারীর নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার ফসল আজকের আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দীর্ঘদিনের অবদমিত অবস্থার টানাপোড়েন কাটিয়ে সেদিন নারী চেয়েছিল মুক্তি আর তার জীবনের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার। আজকের নারী দিবস একদিনের অর্জন নয়। ক্ষুদ্র পরিসর থেকে ছড়িয়ে পড়া এই বৈশ্বিক স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে ধারাবাহিক ইতিহাস। ১৯১০ সালের এইদিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত কর্মজীবী নারীদের বিশ্ব সম্মেলনে প্রতিবছর দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কোপেনহেগেন ঘোষণার ৭৫ বছর পর জাতিসংঘ দিবসটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। তাই দেশ, রাষ্ট্র, সমাজসহ পরিবারে যদি নারীরা পিছিয়ে থাকে তাহলে গোটা সমাজব্যবস্থার ওপরই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নারীকে পেছনে রেখে কোন দেশই সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। এখনও নারী নির্যাতন আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যায়। যৌতুকের জন্য নির্যাতন, কর্মক্ষেত্রে, পথে-ঘাটে ইভটিজিংসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে বহু নারী আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নেন। এমনকি অনেক উচ্চশিক্ষিত নারীও এর মধ্যে রয়েছেন। যেমন গত বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন নারী শিক্ষক আত্মহত্যা করেন, যা খুবই দুঃখজনক। নারীদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকা উচিত। আমরা বইয়ে পড়েছি ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’। তাই অতীতের সবকিছু ভুলে একটি নারীবান্ধব সমাজ গড়ে তোলাই হোক এবারের নারী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার। সুন্দর ও সুখময় হোক সমগ্র নারী জাতির আগামীর পথচলা।
×