ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিতে ধারাবাহিক সাফল্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৮ মার্চ ২০১৭

কৃষিতে ধারাবাহিক সাফল্য

বিগত বেশ ক’বছর যাবত বাংলাদেশ কৃষিতে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। দেশের দুটি জনপ্রিয় ফল আম ও পেয়ারা উৎপাদনে অভাবিত সাফল্য এসেছে। কৃষিমন্ত্রী সম্প্রতি জানান, আম উৎপাদনে আমরা বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম অবস্থানে রয়েছি। সোমবার মহাসমারোহে প্রথমবারের মতো পাট দিবস পালিত হলো। শীঘ্রই তিন ফসলী পাট পাওয়া সম্ভব হবে। পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের সুফল পেতে আমাদের খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। আমের বাম্পার ফলন হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলার চাষীরা ক্ষতিকারক কীটনাশক পরিহার করে গত বছর ফলিয়েছেন বিষ ও কীটনাশকমুক্ত আম। দেশের বাইরে আম রফতানি করার জন্য আম চাষীরা গাছের মুকুল বের হওয়া থেকে শুরু করে পুষ্ট হওয়া পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যা করেছেন। তারা সফল। সাতক্ষীরার আম বিদেশ যাচ্ছে বলে এ জেলার আম চাষীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ’ নাটোরে ১০০ কোটি টাকায় ৬০ হাজার মেট্রিকটন আম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত মৌসুমে আম সংগ্রহ ও পাল্পিং কার্যক্রম শুরু করে। নাটোরে প্রতিষ্ঠানটির কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার ফলে প্রায় ৫ হাজার লোকের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে। আমের মৌসুমে বাড়তি আরও ২-৩ হাজার মৌসুমী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে ভাল খবর। প্রতিবছর অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, নদী ভাঙ্গন ও লবণাক্ততার কারণে হ্রাস পাচ্ছে শতকরা ১ ভাগ হারে কৃষি জমি। তারপরও দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি, গমের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ, সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। বছরে ১০ লাখ টনেরও বেশি আম উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ আম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় দুই ধাপ এগিয়ে এখন সপ্তম স্থানে। ৯৬ লাখ টন আলু উৎপাদন করে পৃথিবীর শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে ১০ম স্থানে। পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশ থেকে সবজি রফতানি হচ্ছে। কৃষিতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে বাংলাদেশ কৃষকদের জন্যই। কৃষিক্ষেত হেসে ওঠে কৃষকেরই সৌজন্যে। আশার কথা হলো, কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকের স্বার্থরক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ার সুফল দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরই আশাতীত ভাল ফলন হচ্ছে। ষোলো কোটি মানুষের দেশটিতে নানা কারণে প্রতিবছর কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পেলেও মাটির উর্বরতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কুশলী কৃষকেরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতার দিকে নিয়ে গেছেন। সরকারের নীতি এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়েছে। বীজ ও সারের কোন সঙ্কট নেই। কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ফলন বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে সরবরাহে ঘাটতি থাকবে না। সেক্ষেত্রে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার একটা আশঙ্কাও উঁকি দিয়ে যায়। আবার আমদানিকৃত ফসল, বিশেষ করে চাল তুলনামূলক কম দামে বাজারে সরবরাহ করা হলে সেক্ষেত্রেও কৃষকের ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলাবাহুল্য, কৃষকদের স্বার্থরক্ষাকারী কৃষিবান্ধব সরকার এসবের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখে। কৃষিমন্ত্রী স্পষ্টভাবে ব্যবসায়ীদের বার্তা দিয়ে বলেছেন, মানহীন কৃষিপণ্য রফতানি করে দেশের সম্মান ক্ষুণœ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কৃষির ধারাবাহিক সাফল্য বজায় থাকুকÑ এটাই দেশবাসীর চাওয়া।
×