ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নজরদারিতে আরও ১৪ দেশের নাগরিক

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৮ মার্চ ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নজরদারিতে আরও ১৪ দেশের নাগরিক

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে ॥ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জারি করা সর্বশেষ সংশোধিত নির্বাহী আদেশে ৬ মুসলিম প্রধান দেশ ছাড়া আরও ১৩-১৪টি দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ব্যাপারে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় রাখা হয়েছে। ট্রাম্পের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী (অভিবাসন দফতরের দায়িত্বও তার হাতে) জন কেলি ৬ মার্চ ওই নির্বাহী আদেশ জারির কিছুক্ষণ পর সিএনএনের চলতি পরিস্থিতি শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আরও ১৩ অথবা ১৪টি দেশ বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। এগুলো শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বিশ্বের অন্য অঞ্চলেরও দেশ এবং সেগুলো শুধু মুসলিমপ্রধান দেশই নয়, অন্য জাতিগোষ্ঠীর দেশও রয়েছে। কেলি অবশ্য এসব দেশের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ইরাকের মতো যদি অপর দেশগুলোও অকৃত্রিমভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযাত্রী হয়, তাহলে তাদের ব্যাপারে কঠোর কোন পদক্ষেপ অবলম্বন করা হবে না। আর যদি তেমনটি না ঘটে, তাহলে অবশ্যই ওই সব দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদানেও কঠোর মনোভাব অবলম্বন করা হবে। জন কেলি বলেছেন, নিষিদ্ধ দেশের তালিকা বৃদ্ধির কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের নির্দেশে বাংলাদেশসহ ২৫ রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছিল। এসব দেশের নাগরিকের মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বাস করছেন, তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় বিশেষ প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে হয়েছে। একই ভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ দেশে ফেরার সময়ও একই প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে এ বিধি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কারণ মুসলিম নাগরিকরা এমন বিধির পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থী ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও একই পথে হাঁটছেন বলে বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক লীগের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার এবং ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট শাহ শহীদুল হক অভিযোগ করেছেন। এ সংবাদদাতার কাছে ৬ মার্চ তারা পৃথকভাবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতা তথা সংবিধানের পরিপন্থী পদক্ষেপ নিচ্ছেন ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে সকল জনগোষ্ঠীকে। সংশোধিত নির্বাহী আদেশেও ধর্ম-জাতিগোষ্ঠীকে টার্গেট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংস্থার নেতৃবৃন্দ। ওয়াংিশটন অঙ্গরাজ্যের এ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট ফারগুসন আবারও আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটলে অবস্থিত ফেডারেল আদালতের জজই আগের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে জাতীয়ভিত্তিক স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ইরাক ছাড়া পুরনো তালিকার বাকি ছয়টি মুসলিমপ্রধান দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকল ৬ মার্চ সোমবার সই করা নয়া আদেশে । তবে এ দেশগুলোর গ্রীন কার্ডধারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। একই ভাবে ইতোমধ্যেই যারা নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা পেয়েছেন, তারাও বাধাপ্রাপ্ত হবেন না। এছাড়া যারা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বৈঠকে অংশগ্রহণ কিংবা পেশাগতভাবে কূটনীতিক, তারা এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবেন না। সব শরণার্থীর ওপরও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ১২০ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকছে আদেশে। তবে সিরিয়ার শরণার্থীদের ওপর আর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা থাকছে না। নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে ১৬ মার্চ থেকে। এ আদেশে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র বিভাগ এরই মধ্যে যেসব শরণার্থীকে অনুমোদন দিয়েছে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। তবে এক বছরের জন্য শরণার্থী প্রবেশের এ সংখ্যা সীমিত করে ৫০ হাজার করা হয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও নতুন আদেশে কোন অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি। এর আগে ৭ মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশের ওপর আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। এরপর থেকেই নতুন করে আরেকটি নির্বাহী আদেশ দেয়ার কথা বলে আসছিলেন ট্রাম্প।
×