ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মাসে ২৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে উল্লম্ফন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৭ মার্চ ২০১৭

সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে উল্লম্ফন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসেবে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৮৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেশি। আর বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি। একক মাস হিসেবে গত জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। মূলত ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমাকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ার মূল কারণ বলে মনে করেছেন অর্থনীতিবিদরা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৪২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তার আগের মাস ডিসেম্বরে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ২৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা ৭২ শতাংশ। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল শোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যে দেখা যায়, নভেম্বর মাসে ৪ হাজার ৪০২ কোটি, অক্টোবরে ৪ হাজার ২৬৬ কোটি ৬১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৮৫৪ কোটি ৫০ লাখ, আগস্টে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। জুলাই ও জুন মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩৭ লাখ ও ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসেবে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৮৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেশি। আর বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি। জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। সেজন্য সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ধারা চলছে কয়েক বছর ধরেই। জানা যায়, দেশে বর্তমানে ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এর মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ বছর মেয়াদী ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও ৫ বছর মেয়াদী পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পরিবার সঞ্চয়পত্রের মাসিক মুনাফা ৯১২ টাকা, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ২ হাজার ৬২২ টাকা, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের তিন মাস অন্তর অন্তর মুনাফা ২ হাজার ৯৪০ টাকা। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ২ শতাংশ কমানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক দয়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার সঞ্চয়পত্রে ঋণের সুদ বাড়িয়েছে দরিদ্র মানুষের সঞ্চয়ের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া মানে সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়া। সুদ পরিশোধের কারণে সরকারে উন্নয়ন বাজেট কমে আসবে। সুদ হার কমানোর পরও ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকেই ঝুঁকছে মানুষ বলে মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জনকণ্ঠকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমলেও ব্যাংকের আমানতে সুদহারের তুলনায় অনেক বেশি। এজন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে। এই গবেষকের মতে, শেয়ার বাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকেছেন সবাই। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই উল্লম্ফনে উদ্বেগ রয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। গত ২৯ জানুয়ারি সংসদে তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ হার আমাদের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
×