ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের নির্দেশ

যেসব ট্যানারি সাভারে সরিয়ে নেয়া হয়নি সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৭ মার্চ ২০১৭

যেসব ট্যানারি সাভারে সরিয়ে নেয়া হয়নি সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার হাজারীবাগ থেকে যেসব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হয়নি সেসব ট্যানারি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব কারখানার বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। নির্দেশ বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র, শিল্প সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শককে সহযোগিতা করতে বলেছে আদালত। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মোঃ সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছে। আদেশে একই সঙ্গে আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে অস্থানান্তরিত ট্যানারি বন্ধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ বন্ধে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পাচ্ছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ছোটবড় মিলিয়ে ১৫৪ ট্যানারি রয়েছে হাজারীবাগে, যেগুলো সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল হাইকোর্টের এক রায়ে। আদালতে বেলার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন রইস উদ্দিন আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। আদেশের পর এ্যাডভোকেট রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, হাজারীবাগের সব ট্যানারি কারখানা অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব কারখানার বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ৬ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন , সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ছয় মাস সময় দিয়েছিল হাইকোর্ট। সে অনুসারে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর হাজারীবাগে ট্যানারি চালানোর অনুমোদন নেই। এর পরও সরকার চলতি বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে। সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার আদালতের অনুমতি নেয়নি। ফলে সরকারের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে জানুয়ারিতে আবেদন করি। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত হাজারীবাগের সব ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধ এবং কারখানার বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নের আদেশ দিয়েছে। আইনজীবী রইস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছি ৪৩ ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ৩১ জানুযারি শিল্প মন্ত্রণালয় হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ বন্ধে বিভিন্ন অধিদফতরের কাছে সহযোগিতা চায়। সরকারের এসব অধিদফতর থেকে শিল্প মন্ত্রণালয় কতটুকু সহযোগিতা পাচ্ছে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ৬ এপ্রিল দিতে বলেছে আদালত। এ বিষয়ে আগামী ১০ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে বলেও জানান তিনি। গত ১৬ জুন হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরানো পর্যন্ত পরিবেশের ক্ষতি হিসেবে ১৫৪ কারখানার মালিককে রোজ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। মালিকরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করলে আপীল বিভাগ দৈনিক ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেয়। ২ মার্চ রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর না করার দায়ে ১৫৪ ট্যানারি মালিককে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেদিন এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানিয়েছিলেন, পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী ১৫৪ ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর না করার ফলে আদালত থেকে মালিকদের জরিমানা বকেয়া বাবদ ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ট্যানারি মালিকরা ওই টাকা জমা দেয়ার জন্য বলেছে আদালত।
×