ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘প্রথিতযশা’ লেখকদের লেখা বাদ দেয়া কেন অবৈধ নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৭ মার্চ ২০১৭

পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘প্রথিতযশা’ লেখকদের লেখা বাদ দেয়া কেন অবৈধ নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘প্রথিতযশা ও স্বনামধন্য’ লেখকদের লেখা বাদ দিয়ে আনা পরিবর্তন কেন অবৈধ ও বেআইনী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব ও ন্যাশনাল কারিকুলাম এ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ডের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ শর্তসাপেক্ষে কমবয়সী ছেলেমেয়ের বিয়ের বিধান রেখে সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ বাতিল চেয়ে সরকারের প্রতি আইনী নোটিস দেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর নোটিসের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। স্বনামধন্য ও সুপরিচিত লেখকদের লেখা বাদ দিয়ে পাঠ্যপুস্তকে আনা পরিবর্তন কেন অবৈধ ও বেআইনী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। দুই শিক্ষাবিদের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে। শিক্ষাবিদ মমতাজ খানম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এ রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ মামুন মাহবুব ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। পরে সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, পাঠ্যপুস্তক থেকে সুপরিচিত, স্বনামধন্য, প্রথিতযশা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীদের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে সাম্প্রদায়িকীকরণ ও পাকিস্তানের দিকে ঠেলে দেয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন এখানে গোলাম মোস্তফা, হুমায়ুন আজাদ, শরৎচন্দ্র, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার দেশ চালাচ্ছে তখন এটা কিসের ষড়যন্ত্র। এ কারণে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটের পক্ষের আইনজীবীগণ জানান, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দাবির প্রেক্ষিতে প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে কিছু প্রখ্যাত লেখকের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে গোলাম মোস্তফার ‘প্রার্থনা’, একই শ্রেণীর বাংলা বইয়ে হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতা, ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা চারুপাঠ থেকে এস ওয়াজেদ আলীর ‘রাঁচি ভ্রমণ’, সানাউল হকের কবিতা ‘সভা’, আনন্দ পাঠ থেকে বাদ পড়েছে সত্যেন সেনের গল্প ‘লাল গরুটা’, একই বই থেকে শরৎচন্দ্রের গল্প ‘লালু’ ও উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘রামায়ণ কাহিনী’ বাদ দেয়া হয়েছে। রিট আবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে প্রথম শ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে সুপরিচিত লেখকদের লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়; যাতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সামাজিক, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়াও যেখানে সব ধর্মের স্বনামধন্য লেখকের লেখা ছিল। কিন্তু গত বছর ৮ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের দেয়া একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসে ১২টি বিষয় বাদ দিতে বলা হয়। যার মধ্যে হুমায়ুন আজাদসহ বিশিষ্ট লেখক রয়েছেন। ২০১৭ সালে এসে এনসিটিবি হেফাজতে ইসলামের দাবি অনুযায়ী অনেক বিষয় বাদ দিয়ে এবং হেফাজতের আবেদনমতো বিষয় যুক্ত করে। এর মধ্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীসহ বিখ্যাতদের লেখা বাদ দেয়া হয় অথচ তদের লেখা পাঠ্যপুস্তকে পাকিস্তান আমলে ছিল। আইনী নোটিস ॥ ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ শর্তসাপেক্ষে কমবয়সী ছেলেমেয়ের বিয়ের বিধান রেখে সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ বাতিল চেয়ে সরকারের প্রতি আইনী নোটিস দেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর নোটিসের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিসটি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনটি বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হাইাকোর্টে রিট দায়ের করা হবে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ চূড়ান্তভাবে পাস করে সরকার। সংসদে নতুন পাস হওয়া আইনটি সংবিধানের ৭, ১১, ১৫, ২৬, ২৭ ও ৩১ ধারারর পরিপন্থী উল্লেখ করে নোটিসে বলা হয়েছে, এটি মুসলিম বিবাহ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পরিপন্থী। এ আইনের ফলে দেশে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বাড়বে। এমনিতেই বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। নতুন এ আইনে জনগণ এটি অপব্যবহার করবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এতে চরম আকারে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে বলেও ইউনুছ তার নোটিসে উল্লেখ করেন।
×