ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদের চলতি অধিবেশনেই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৭ মার্চ ২০১৭

সংসদের চলতি অধিবেশনেই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। সোমবার ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক বৈঠকে ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা এ দাবি জানান। গণহত্যা দিবস হিসেবে ২৫ মার্চে ১৪ দল একটি জনসভা করতে পারে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘বৈঠকে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তোলেন নেতারা। আগামী ১১ মার্চ সংসদের অধিবেশনেই প্রস্তাবটি উত্থাপিত হবে। আর সেদিনই এটি গণহত্যা দিবস হিসেবে গৃহীত হবে বলে আমরা আশা করি।’ মোহাম্মদ নাসিম বলেন, পি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে জনগণ থেকে আরও দূরে সরে গেছে। যারা নির্বাচন বর্জন করে তারা জনগণ থেকে দূরে চলে যায়। বিএনপি আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমাদের সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি নানা ধরনের কথা বলছে। ‘শেখ হাসিনার অধীনে কেয়ামত পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যাবে না’- বিএনপি নেতা গয়েশ^র চন্দ্র রায়ের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে আসা না আসা কোন রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে এখনই ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সংবিধানের বাইরে অসাংবিধানিক যে কোন শক্তিকে প্রতিহত করতে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। কিন্তু এখন ড. ইউনূস সাহেবকে ক্রেডিট দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় তাদের প্রতি করুণা ছাড়া কিছুই করার নেই। সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি করছি। আশা করি ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে গণহত্যা দিবস হিসেবে গৃহীত হবে। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম এবং সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াও চলতি সংসদ অধিবেশনে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে গ্রহীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এর আগে বৈঠকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৪ দলের কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়। ৭ ও ১৭ মার্চ ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতি, ২৫ মার্চ রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং ২৬ মার্চ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন ১৪ দল নেতারা। এছাড়া ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৈঠক সূত্র আরও জানায়, ৩০ মার্চ অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন প্রসঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হয়। মোহাম্মদ নাসিম কুসিক নির্বাচনের মেয়র পদে ১৪ দলের শরিক আওয়ামী লীগ ও জাসদের প্রার্থী রয়েছে জানিয়ে বলেন, এ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ১৪ দল ছিল, আছে এবং থাকবে। আগামী নির্বাচনেও ১৪ দল একসঙ্গে অংশ নেবে এবং বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে একসঙ্গেই সরকার গঠন করবে। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার প্রশংসা করে দেয়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য প্রসঙ্গেও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এই ড. ইউনূসরাই পদ্মা সেতুতে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়ন আটকে দিয়েছিলেন। যারা দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করবেন, তাদের বিষয়ে ১৪ দলের কঠোর অবস্থান থাকতে হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নির্দেশে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছিল বলে অভিযোগ এনে মন্ত্রীর সমালোচনা করেন শরিক দলের কয়েকজন নেতা। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বৈঠকে মোহাম্মদ নাসিম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেনÑ আওয়ামী লীগের মুকুল বোস, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, আফজাল হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এসএম কামাল হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের (ইনু) শাহ জিকরুল আহমেদ, জাসদের (আম্বিয়া) শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাৎ হোসেন, শহীদুল্লাহ সিকদার, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) শেখ শহীদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ডাঃ অসীত বরণ রায়, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির জাকির হোসেন, গণআজাদী লীগের এসকে শিকদার, তরিকত ফেডারেশনের এমএ আউয়াল, বাসদের (বিএসডি) রেজাউর রশীদ খান প্রমুখ।
×