ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ‘দশ টাকা কেজি চাল’ পাচ্ছে আড়াই কোটি মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৭ মার্চ ২০১৭

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ‘দশ টাকা কেজি চাল’ পাচ্ছে আড়াই কোটি মানুষ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে হতদরিদ্রদের মধ্যে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ কর্মসূচী আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অর্জনের সহায়ক হবে বলে মনে করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি সরকারের একটি বড় সাফল্য। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা দশ টাকা কেজি দরে দেশের আড়াই কোটির বেশি মানুষকে চাল খাওয়াচ্ছি। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, টিআর (টেস্ট রিলিফ), কাবিখা (কাজের বিনিময় খাদ্য) কর্মসূচীতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এখন কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা) দিতে হচ্ছে। মানুষ এখন খাদ্যের জন্য কাজ করে না। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন এমন পর্যায়ে পৌঁচ্ছে যে, রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে এখন রঙিন টেলিভিশন দেখা যায়। হতদরিদ্রদের দশ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত ৫০ লাখ উপকারভোগীর তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ অনুষ্ঠাতে তাঁরা এ কথা বলেন। পরে উপকারভোগীদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। খাদ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে সোমবার এক অনুষ্ঠানে উপকারভোগীদের তালিকা খাদ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে (িি.িফমভড়ড়ফ.মড়া.নফ) প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত ’৯৬ আমলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করে। ক্ষমতা ছাড়ার সময় এই সরকার ২৬ লাখ খাদ্য উদ্ধৃত্ব রেখে যায়। পরে ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে দেখি ১৬ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি। সেই খাদ্য ঘাটতি মিটিয়ে আমরা বিদেশে চাল রফতানি শুরু করি। হতদরিদ্রের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে এসেছি। অবশ্য এ সকল কৃতিত্ব হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে দেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেনমাত্র। আর প্রধানমন্ত্রীর ডান হাত হিসেবে খ্যাত মতিয়া চৌধুরী তা বাস্তবায়ন করেন। তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় উপকারভোগীদের তালিকা খাদ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এখন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যে কোন অঞ্চলের তালিকা দেখা যাবে। ডিলারদের তালিকা দেখা যাবে। আপলোড করা তালিকায় কোন স্বচ্ছল ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকলে তা সহজেই সকলের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হবে। কোন অভিযোগ থাকলে তা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে মোবাইল, এসএমএস, ই-মেইল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবহিত করা যাবে। তালিকায় হতদরিদ্র ছাড়া স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম বাতিল করে তালিকা সংশোধন করা সম্ভব হবে। রাজনৈতিক কোন ব্যক্তি যদি এ কর্মসূচীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন তিনি যে দলেরই হোক এমনকি আমার নিজের দলের হলেও আমরা তাকে ছাড় দেব না। এ কর্মসূচীকে আমরা বিতর্কিত হতে দেব না। কোন কারসাজি চলবে না। এ সময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, কাউকে ছাড় দিতে চাইলে আমার দলিল-দস্তাবেজ খুলে বসতাম না। কামরুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা মনে করি এ কর্মসূচীটাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমাদের বিজয় অর্জনে সবচেয়ে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আমাদের বিজয় আনতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর এ কর্মসূচী শুরুর পর থেকে পত্রিকা ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত ২ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৫টি কার্ড ও ১৩০ জনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। ৩৭ জন ডিলারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০ লাখ ৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। ইতোমধ্যে অনিয়মের জন্য খাদ্য বিভাগের দুইজনকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও দুইজন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, এখন কোন অভিযোগ উঠলেও আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ কর্মসূচী আরও সুসংহত ও সময়োপযোগী করতে ‘খাদ্যবান্ধব নীতিমালা, ২০১৭’ প্রণয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে ইউনিয়ন খাদ্যবান্ধব কমিটি এবং জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে জেলা খাদ্যবান্ধব মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। উপজেলা কমিটিতে সিটিজেন জার্নালিস্ট গ্রুপের প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে রাখা হবে। আগামী মে মাসের মধ্যে মাইক্রোসফট এক্সেলে তালিকার সফট কপি সংগ্রহ করে ডাটাবেইজ প্রণয়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ওয়েবসাইটে বা তথ্য বাতায়নে ও খাদ্য বিভাগের নির্ধারিত ওয়েবপেইজে ইউনিয়নভিত্তিক তালিকা আপলোড করা হবে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর সুবিধাভোগী নির্বাচনে ইতোপূর্বে উপজেলা পর্যায়ে একজন কর্মকর্তাকে সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবকে সদস্য সচিব করে তালিকা প্রণয়ন কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সদস্য সচিব করে তালিকা যাচাই কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে এ পর্যন্ত ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৭ সুবিধাভোগীকে তালিকাভুক্ত করেছে। পল্লী অঞ্চলের কর্মাভাবকালীন বছরে ৫ মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নবেম্বর এবং মার্চ, এপ্রিলে প্রতি মাসে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর প্রান্তিকে এ কর্মসূচীতে মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে গত ১ মার্চ থেকেই চাল বিতরণ শুরু হয়েছে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা পাঁচ মাস ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল দেব। সারা বছর দিলে চালের দাম পড়ে যাবে, ধানের দাম পড়ে যাবে। অগ্রহায়ণে চাল দিলে ধানের দাম তো কৃষক পাবে না। এ সময় মৃদু হেসে মতিয়া চৌধুরী বলেন, কাজেই এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আঁতাত করতে হবে। উনি যদি সহযোগিতা না করেন, চাল সংগ্রহ না করেন আমি আর পরের সিজনে কৃষিকাজে কৃষককে উৎসাহিত করতে পারব না। তাই এটা সহযোগিতার সম্মিলিত কর্মসূচী। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সরস’ পদক পান। পর পর তিন বছর খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করলেই কেবল এই পদক পাওয়া যায়। তিনি বলেন, কৃষিতে সাফল্যের জন্য আমাদের উৎপাদন অনেক বাড়াতে হয়েছে। আমাদের দেশের কৃষি জমি কমছে। কেউ কেউ আবার খাদ্য শস্য আবাদ করতে চান না। তারপরও আমরা খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করছি। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত বা চীনের মতো এত বিশাল ভূখ- পেলে আমরা কোথায় যেতাম তা দেখতে পারতেন। গবেষণা ও চিন্তার মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় দেশকে নিয়ে চিন্তা করেন। পারলে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টাই চিন্তা করতেন। ভারপ্রাপ্ত খাদ্য সচিব মোঃ কায়কোবাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ বদরুল হাসান বক্তব্য দেন।
×