ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ॥ তারুণ্যের মূল্যায়ন

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৭ মার্চ ২০১৭

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ॥ তারুণ্যের মূল্যায়ন

মার্চ, উনিশ শ’ একাত্তর। সাড়ে চার দশক আগের সে কথা। নতুন ইতিহাস রচনার বার্তা গর্ভে ধারণ করে আবির্ভূত হয়েছিল সে মাস, অগ্নিঝরা সেই ‘উত্তাল মার্চ’। এ দেশের ইতিহাসে গণমানুষের সর্বাত্মক ও একতাবদ্ধ গণজাগরণের এরূপ দ্রুত ও পর্যায়ক্রমিক উল্লম্ফনের ঘটনা দ্বিতীয়টি আর ঘটেনি। ইতিপূর্বে এ দেশের মানুষ সুদীর্ঘকাল ধরে গণসংগ্রাম ও গণ-আন্দোলনের অক্ষয়-অমর অনেক কীর্তি রচনা করেছিল। সেসব নিয়ে আলাদা আলাদা অনেক বীরত্বগাথা রচিত হতে পারে, হয়েছেও। অমর সেসব কীর্তির চূড়ান্ত সংশ্লেষণ ও উল্লম্ফন ঘটেছিল একাত্তরের ‘উত্তাল মার্চের’ ঘটনাপ্রবাহ ও তার প্রতিটি দিন-ঘণ্টা-মিনিটের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। দেশবাসীর সংগ্রাম উত্তরিত হয়েছিল স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য সশস্ত্র জনযুদ্ধে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ছিল বাঙালীর জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। এ দিনে সকলের দৃষ্টি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকে। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনতে উদগ্রীব সমগ্র জাতি। সকলেই একটি দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সমগ্র বাঙালীর কাছে এ দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আসুন জেনে নেই এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা কি ভাবছেন এই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে। অদিতি মহারতœ, সবে মাত্র একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়েছেন তার ভবনায়- ‘৭ মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণা, এই ভাষণই আমাদের পথ দেখিয়ে গেছে। ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই ভাষণ আমাদের সেই প্রেরণাটা এনে দেয়-মাথা উঁচু করে চলার। মনে সাহস দেয় যে কোন অবস্থা মোকাবেলা করার, শত্রুকে দমন করার।.. এই ভাষণের আবেদন কোনদিন শেষ হবে না।’ সুমনা রহমান, পড়ছেন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে তার ভাবনায়- ‘৭ মার্চের ভাষণ আর আমাদের পিতার হাত ধরে একাত্তর তরুণ প্রজন্মের কাছে কেবল শোনা গল্প। মা, বাবার কিংবা যুদ্ধে অংশ নেয়া স্বজনের স্মৃতিগল্প। সেদিন আমাদের জন্ম হয়নি। দেখিনি ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো। শুনিনি সেদিন কবির কণ্ঠে সেই কবিতাখানি, অবাক হইনি তাঁর দৃপ্ত স্বাভাবিক পথচলায়। ভাবতেও পারি না, মাত্র একজন লোক কী করে কোটি কোটি বাঙালেিক মোহিত করেছিলেন। হোক না তা আমাদের কাছে অন্যের মুখে শোনা গল্প। তবু তো বাস্তব। তাই উপলব্ধি করি কেবল একজন শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে নাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন সারা দেশের তরুণ-যুবাদের। নাড়া দিয়েছিলেন পুরো বাংলাকে। ইংরেজী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুস্মিতা ভট্টাচার্য তার ভাবনায়- ৭ মার্চের বক্তৃতার ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে এক সিদ্ধান্তে অটল এক রাজনৈতিক নেতার পরিচয়। কেননা তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ‘শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে, পাড়া দিয়ে আরটিসিতে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। এ্যাসেম্বলি কল করেছেন, আমার দাবি মানতে হবে প্রথম। সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে। ...আমি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ সেই অধিকার তিনি এনে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষকে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকে বিশ্বের বিখ্যাত ভাষণগুলোর পাশাপাশি তুলনা করা হয়েছে গ্যাটিসবার্গ এ্যাড্রেসের সঙ্গে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দীর্ঘদিনের শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল একটি কণ্ঠ। এই প্রজন্মের আমরা যখন এখনকার রাজনীতিবিদদের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরতে চাই, তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের তাঁর দেখানো পথে চলতে উৎসাহ জাগায়।’ একজনের মতে, ‘বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য যা করেছেন কিংবা তাঁর অবদান কোনভাবেই অস্বীকার করার নয়। আমি যে তাঁর দেশে জন্ম নিয়েছি, এটাই আমার জন্য গর্বের বিষয়।’ মাফুজ আহমেদ, পড়ছেন ব্যবসা প্রশাসনে তার চোখে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আজও এক অদ্ভুতভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করে। যখনই কোন অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়তে যাই আমি বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ থেকে অনুপ্রাণিত হই। বিশ্বাস করুন বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ যখনই শুনি আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ইচ্ছে করে নিজের সবকিছু নিয়ে অপশক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সর্বোপরি অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদে অনুপ্রাণিত হই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে। সুস্মিতা পূজা, পড়াশোনা করছেন ইতিহাস তৃতীয় বর্ষে তার ভাবনায়- ৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা অবিস্মরণীয় একটি দিন। আমার জন্ম ওই সময় হয়নি। দিনটি ছিল বসন্তের এক পাতাঝরা শুকনো টান টান দিন। কিন্তু আর দশটি দিনের চেয়ে আলাদা ছিল একাত্তরের ৭ মার্চ, একটু ভিন্ন রকম। একজন তরুণ নেতা দিনে দিনে নিজেকে চালকের আসনে এনে একটি আন্দোলনকে জনগণের প্রাণের দাবিতে পরিণত করলেন। একটি ভাষণ একটি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে যেভাবে উজ্জীবিত করেছিল, তার তুলনা আর কোন কিছুর সঙ্গে হতে পারে না।
×