ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই তদন্ত কমিটি

হজ লাইসেন্স ভাড়া ও প্রি-রেজিস্ট্রেশনে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৭ মার্চ ২০১৭

হজ লাইসেন্স ভাড়া ও প্রি-রেজিস্ট্রেশনে অনিয়মের অভিযোগ

আজাদ সুলায়মান ॥ সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী দেশে গত বছর ই-হজ প্রক্রিয়া চালু হলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল তা অকার্যকর করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। ই-ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে হজ ও ওমরাহ চালুর বিষয়টি দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হলেও নাখোশ অসাধু কয়েকটি হজ এজেন্সি। বিশেষ করে মানব পাচারের অভিযোগে যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তারাই এখন ই-হজ ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি ঘোলাটের চেষ্টা করছে। চক্রটি এখন আগের মতো কোটাওয়ারি হজযাত্রী পাওয়ার জন্য কৌশলে চাপও সৃষ্টি করছে। ই-হজ প্রক্রিয়ায় তারা দুর্নীতি ও সাইবার ক্রাইমের ধুয়া তুলে মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ উপস্থাপন করতে পারেনি। তারপরও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে পৃথক দুটো তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। এ সম্পর্কে ধর্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল জলিল জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশের প্রতিটি সেক্টরে ই-ম্যানেজমেন্ট চালু করা। আর হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ধর্মীয় বিষয়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখেই বর্তমানে হজ যাত্রীদের প্রি রেজিস্ট্রেশন চলছে। এরই মধ্যে সৌদি সরকারের দেয়া হজযাত্রীর সুনির্দিষ্ট কোটা পেরিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে পৌনে দুই লাখের মতো। এ অবস্থায় স্বার্থাস্বেষী মহল পরিস্থিতি ঘোলা করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এটা হতে দেয়া যাবে না। যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিষয়েই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীকেও চিহ্নিত করা হবে। প্রতিবছর হজ নিয়ে ঘুরেফিরে একটি মহলই নানা অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে নিজের ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। জানা যায়, সর্বশেষ সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট এক লাখ ৭৯ হাজার ১ শত হজযাত্রী প্রি রেজিস্ট্রেশন করেছে। চলতি বছর বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবে হজে পাঠানোর জন্য কোটা বরাদ্দ রয়েছে মোট এক লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ জনের। এতে বেসরকারী কোটার নির্ধারিত অতিরিক্ত ৬১ হাজার হাজি প্রাকনিবন্ধন করা হয়েছে। এ হিসেবে প্রাকনিবন্ধনের পরও হজ করতে হলে তাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী বছরের জন্য। কিন্তু এই অতিরিক্ত কোটার প্রাক রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র করেই কয়েকটি হজ এজেন্সি পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব এজেন্সির অভিযোগ-গতবারের মতো এবারও প্রি রেজিস্ট্রেশনে অনিয়ম করা হয়েছে। কাজেই এদের সবাইকে বিশেষ ব্যবস্থায় হজ করার সুযোগ দিতে হবে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাব মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ বলেন, ঢালাওভাবে প্রাক রেজিস্ট্রেশনে অনিয়মের অভিযোগ না করে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি এজেন্সির এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্যই দাবি করেছি। সেটার সত্যতা দেখার জন্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। তারাই দেখুকÑ কোথায় কে, কিভাবে প্রাক রেজিস্ট্রেশনে অনিয়ম করেছে কিনা। হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব’র অভিযোগ, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রি- রেজিস্ট্রেশন শুরু হবার পর হঠাৎ একদিন কিছু সময় সার্ভার বন্ধ ছিল। এ সময় অনেকেই ব্যাংকের কাউন্টারে আগে দাঁড়িয়েও টাকা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি। আবার পেছনে পরে দাঁড়িয়ে অনেক এজেন্সি টাকা জমা দিয়েছে। এ অভিযোগ সম্পর্কে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মর্যাদার এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, এ বছর যে প্রক্রিয়ায় প্রি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, সেটাকে নজিরবিহীন স্বচ্ছতা বলা যায়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও বুয়েট বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ কমিটির সর্বক্ষণিক নজরদারিতে প্রি রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলছে। সব প্রতিনিধির সামনে প্রতিদিন সকাল নয়টায় সার্ভার ওপেন ও সন্ধ্যায় বন্ধ করা হয়। আগেরদিন যেই সিরিয়াল পর্যন্ত বন্ধ করা হয় পরদিন আবার সেই সিরিয়াল থেকেই চালু করা হয়। এটা এমনভাবে সিলগালা করা হয় যা ইচ্ছে করলেও আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশন একক কর্তত্ব নিয়ে গোপনে কিছু করতে পারবে না। তাহলে কেন এ অভিযোগ জানতে চাইলে বিজনেস অটোমেশনের সিইও বজলুল হক বিশ্বাস জানান, প্রথমে হাব থেকেই দাবি এসেছে-এবার কোন এজেন্সিকে কমপক্ষে ১৫০ হাজী থাকলে তাকে রেজিস্ট্রেশনের পাসওয়ার্ড দেয়া হবে। এর কম হলে যেন কাউকে না দেয়া হয়। তাদের দাবি ও চাপের মুখে ধর্ম মন্ত্রণালয় তাতেই রাজি হয়। কিন্তু প্রি রেজিস্ট্রেশন চালুর পরদিন আবার এই হাবের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে, অনেক ছোট্ট এজেন্সি ১৫০ হজযাত্রী সংগ্রহ করতে পারেনি। তাদেরও সুযোগ দিতে হবে। এজন্য দুই বা তিনটা এজেন্সি মিলেও যদি ১৫০ হয় তবুও যেন রেজিস্ট্রেশনের জন্য পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। তাদের এ দাবিও মেনে নেয়া হয়। এর পর কয়েকটি এজেন্সির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠে। এই দাবি মেনে নেয়ার ফলে নিজেদের অতিরিক্ত লাইসেন্স ভাড়া দিয়ে বাণিজ্য করে । ১৯ টি হজ এজেন্সির একই মালিক থাকায় তিনি তো একটির বেশি এজেন্সি কাজে লাগাতে পারেননি। এতে বাকি ১৮ এজেন্সি তিনি অন্যের কাছে ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।
×