পরিবারকে সময় দিন : যান্ত্রিক এই যুগে আপনার দম ফেলবার সময় নেই। বাসা থেকে অফিস আবার অফিস থেকে বাসা। আপনি যেন কোন যাঁতাকলে বাধা পড়ে আছেন। এদিকে আপনার পরিবার ও সন্তানরা আপনাকে সময়মতো না পেয়ে দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকে অস্থির। এতে কিন্তু আপনিও ভাল নেই আর আপনার ছোট ছেলে মেয়েরাও। তাই আপনার এবং আপনার সন্তানদের সুস্থ রাখতে চাইলে তাদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন।
ধূমপান : ধূমপান একটি বদঅভ্যাস। যা একজন মানুষের মন ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপানের কারণে হৃৎপি-ে উত্তেজনা বাড়ে যা মনকে অশান্ত করে। এই ধূমপানের ফলে মানুষের আয়ু প্রায় ১৫ থেকে ২৫ বছর কমে যায়। ধূমপানে স্বাস্থ্য গ্রাস করে মনকে অস্থির করে তোলে। তাছাড়া একজন ধূমপায়ীর হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা একজন অধূমপায়ীর ব্যক্তির তুলনায় দ্বিগুণ। ধূমপান বন্ধকরার মুহূর্ত থেকেই হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা।
অতিরিক্ত লবণ : অতিরিক্ত লবণ স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। কারণ অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। এর ফলে মানুষের হৃৎপি-ের রক্ত সরবরাহকারী ধমনি সম্পর্কিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে যার আর মনকে করে তুলে অশান্ত। তাছাড়া ডায়েট মেনে চলে সব সময় সুষম খাবার খাওয়া উচিত। এতে স্বাস্থ্য ও মন উভয় ভাল থাকে। আরও তাজা ফল, শাক-সবজি, শস্য জাতীয় খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
এ্যালকোহল : এ্যালকোহল মানুষের শরীরের অনেক ক্ষতি করে। মনের উত্তেজনাকে অত্যাধিক জাগিয়ে তোলে। তাই এ্যালকোহল পান না করা স্বাস্থ্য ও মনের জন্য ভাল। কারণ অতিরিক্ত এ্যালকোহল হৃৎপেশির ব্যাপক ক্ষতি করে। এর ফলে রক্ত চাপ বাড়ে এবং পাশাপাশি ওজনও বৃদ্ধি করে। স্বাস্থ্যকে খারাপ করে মনকে অশান্ত করে। এ্যালকোহল যদি একেবারে বাদ দেয়া সম্ভব না হয় তবে প্রতিদিন একটু একটু করে কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
সহযোগিতা করুন : আপনি কি ক্লান্ত বা অশান্ত অথবা আপনার কি মন খারাপ? তাহলে আপনার আশপাশের কাউকে কিছু এগিয়ে দিন, দরজা খুলে দিন, কোন কাজে সাহায্য করুন অথবা বাজারটা করে দিন। দেখবেন এতে করে শরীরের হরমোনগুলো কেমন ছড়িয়ে গিয়ে মন ও শরীরকে শান্ত করেছে। এই তথ্যটি খুঁজে বের করেছেন আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী গবেষক। তাই নিজের মনকে ভাল রাখতে অন্যায় কাজে একটু সাহায্য করুন।
শরীর পরীক্ষা : নিয়মিত শরীর পরীক্ষা করলে দেহের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনাকে সাহায্য করে। এতে শরীরকে সুস্থ রাখে আর মনকে শান্ত করে। তাই নিয়মমাফিক অনুসারে রক্তচাপ, শর্করা এবং কোলেস্টেরলের পরীক্ষা করা শরীর ও মনের উভয়ের জন্য ভাল। তাছাড়া কোমড়ের মাপ নিয়ন্ত্রণ করা স্বাস্থ্যের জন্য খুব জরুরী। কারণ রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা হয়ে অনেক ক্ষতি করে এতে ওজন বৃদ্ধি পায়, আর অতিরিক্ত ওজন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
যোগ ব্যায়াম : পরিশ্রম করা শরীরের জন্য ভাল। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় পরিশ্রম করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কারণ অতি পরিশ্রমের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই যোগ ব্যায়াম নিজের জন্য ভাল এতে মন শান্ত থাকে। তাছাড়া যদি দেখা যায় আপনি ঠিকমতো খেতে পারছেন না ধূমপান বা মদ্যপান বেশি করছেন। তাহলে বুঝতে হবে আপনার ভেতরে অবসাদ চলছে। যা শরীরের ক্ষতি করে ও মনকে অশান্ত রাখে। এসব অবসাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য যোগ ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে।
হাসিখুশি থাকুন : হাসিখুশি মানুষ সবসময় সুস্থ থাকে। বেশি বেশি হাসা স্বাস্থ্য ও মন উভয়ের জন্য ভাল। কারণ হাসির মাধ্যমে হৃৎয়ন্ত্রের চাপ কমানো সম্ভব। এতে মানুষের হৃদয় সর্বদা শান্ত থাকে। আপনি যখন হাসবেন তখন আপনার হৃৎপি-ের উপর একটা অনুভূতি কাজ করে যা আপনার হৃদয়কে ভাল রাখে। তাই মনকে ভাল রাখতে হাসুন এতে আপনিও সুস্থ থাকবেন।
মেউিটেশন : মনকে ভাল রাখার অন্যতম উপায় মেউিটেশন করা। মেউিটেশন শরীরকে সুস্থ রেখে হৃদয়কে শান্ত করে। তাছাড়া যাদের কার্ডিওভাস্কুলার বা হার্টের সমস্যা আছে, তাদের জন্য যে কোন ধরনের মেউটেশন খুব উপকারী। এই যেমন চিগং বা তাইচির মতো চীনের জনপ্রিয় মেউিটেশন উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে।
অতিরিক্ত সুখ এবং দুঃখ : আপনার হৃৎপি-ের স্পন্দন বাড়িয়ে দেয় এমন কাজ মনকে ভাল রাখে না। বিয়ের প্রস্তাব, প্রিয়দলের বিজয় কিংবা সারপ্রাইজ পার্টির মতো কোন ইতিবাচক অভিজ্ঞতাও নার্ভাসকে সক্রিয় করে যা হৃৎপি-কে নাড়া দেয় প্রচ-ভাবে। অর্থাৎ অতিরিক্ত সুখ এবং দুঃখ দুটোতেই একই রকম বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, এমনকি হার্ট এ্যাটাক হতে পাড়ে। তাই হৃৎপি-কে নাড়া দেয় এমন কিছু না করাই স্বাস্থ্য ও মনের জন্য ভাল।
হাঁটুন : হেঁটে মনকে ভাল রাখা যায়। আমেরিকার ‘ওহিও স্টেট’ বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণায় জানা যায়, মন খারাপে কষ্ট পাচ্ছেন এতে হাঁটলে মন ভাল হয়ে যায়। এছাড়া কোন বিষণœ মানুষ যদি মুক্ত বাতাসে হাঁটে তবে তার মন ভাল হয়ে যায়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপরে এই গবেষণাটি করা হয়।
মন আর হৃৎপি- সুস্থ রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন ধূমপান থেকে বিরত থাকুন, মুক্ত বাতাসে ব্যায়াম করুন আর সবসময় হাসিখুশি থাকুন। দেখবেন আপনার মন আর শরীর দুটোই ভাল থাকবে।
মডেল : অন্তরা মনিরা
ছবি : তানভির হোসেন
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: