দলীয় ভিত্তিতে আজ ১৮ উপজেলায় নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলীয়ভিত্তিতে দেশে প্রথমবারের মতো ১৮ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আজ সোমবার। এর মধ্যে তিনটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাধারণ নির্বাচন হবে। বাকি ১৫ উপজেলায় বিভিন্ন শূন্যপদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। এছাড়াও আজ চারটি পৌরসভার মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচনেও ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে এসব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। সকাল আটটায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে। কোন বিরতি ছাড়াই শেষ হবে বেলা চারটায়। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে সিলেটের ওসমানীনগর, খাগড়াছড়ির গুইমারা ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় নির্বাচন হবে। এর মধ্যে সিলেটের ওসমানীনগর ও খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলা নবগঠিত হওয়ায় প্রথমবারের মতো ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাধারণ নির্বাচনে এই তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের মোট ২৮ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নির্বাচন দলীয়ভিত্তিক হওয়ায় প্রার্থীর দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও কুড়িগ্রাম সদরে, বরিশালে বানরীপাড়ায় ও গৌরনদী, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কুমিল্লার আদর্শ সদর, পাবনার সুজানগর, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকায় এসব পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। মূলত মৃত্যুজনিত ও পদত্যাগজনিত কারণে এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদ শূন্য হওয়ায় ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। অপরদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাটোরের বরাইগ্রাম, নীলফামারী জলঢাকায়, সাতক্ষীরা কলারোয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং কুমিল্লার সদর দক্ষিণ ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে। মৃত্যু ও পদত্যাগজনিত কারণে এসব পদ শূন্য হওয়ায় নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে মৃত্যুর কারণে পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার মেয়র পদে, রাজশাহীর আড়ানীর পৌরসভার ১ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে, টাঙ্গাইলের সখিপুর পৌরসভার ২নং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে এবং বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার ৭নং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন এসব উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন ও শূন্য পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীরা গত ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করে। ১০ ফেব্রুয়ারি রিটার্নিং কর্মকর্তারা এসব মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করেন। প্রার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচনে প্রচার শুরু করেন। কমিশন জানিয়েছে ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় সফর করে আইনশৃঙ্খলাসহ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ভোটের দুইদিন আগ থেকেই মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা ভোটের পরদিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মাঠে থাকবেন। নির্বাচন মনিটরিংয়ের জন্য আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল গঠন করেছে ইসি। আজ ভোটের দিন ইসি সচিবালয়ে এ টিম কাজ করবে। তারা নির্বাচন কমিশনকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করবে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব উপজেলায় উপনির্বাচন আছে, সেসব উপজেলায় দুজন নির্বাহী ও একজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিন উপজেলার সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যেক উপজেলার জন্য চারজন নির্বাহী ও একজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ ভোট কেন্দ্রের জন্য ১৫ এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৬ জন সদস্য নিয়োজিত থাকছে। দলভিত্তিক এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে সমালোচনা করা হলেও তারাও এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় উপজেলায় নির্বাচনও হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এদিকে কমিশনও নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে নির্বাচনে বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে নতুন ইসিকে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য উপজেলা পরিষদের এই নির্বাচন অনেকটা চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে তারা কতটা আস্থার সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন তার অনেকটাই নির্ভর করছে আজকে এই নির্বাচনের ওপর। উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের নিরপেক্ষতা ধরে রাখাতেও পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে তাদের। কমিশন জানিয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতিই নেয়া হয়েছে। নতুন ইসি কতটা আস্থার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করবেন তার পরীক্ষাও হবে আজকের নির্বাচনের মাধ্যমে।