ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে অস্ত্রপাতি, গোলাবারুদ নিয়ে আসছে

সন্ত্রাসী জামায়াত শিবির ফিরছে সীমান্তের ওপার থেকে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৬ মার্চ ২০১৭

সন্ত্রাসী জামায়াত শিবির ফিরছে সীমান্তের ওপার থেকে

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জ আবার অশান্ত হওয়ার সব ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই শিবগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবারের ওপর হামলা, জুলুম, নির্যাতন ও লুটপাট শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তজুড়ে সন্ত্রাসী চোরাকাবারিরা অর্ডার মোতাবেক গান পাউডার ও অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে আসছে। এমনকি সোনামসজিদ স্থলবন্দর হয়ে আসা অবৈধ পণ্যের আড়ালে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক আসা শুরু হয়েছে। ঘোষণার বাইরে আসা এসব অবৈধ পণ্য আসার ব্যাপারে সহযোগিতা দিচ্ছে বন্দরে কর্মরত রাজস্ব বিভাগের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা। এমনকি বছর তিনেক আগে পলাতক সন্ত্রাসীরা আবারও দল বেঁধে সীমান্তের ওপার থেকে ফিরতে শুরু করেছে। সূত্র জানায় পলাতক সন্ত্রাসীরা এবার ভারতীয় এলাকায় তাদের অবস্থান অনেকটাই পোক্ত করে ফিরে এসেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতীয় সন্ত্রাসীরা। তারাই অর্ডার মোতাবেক অবৈধ পণ্য পাঠাচ্ছে এদের কাছে। সেসব অবৈধ পণ্য, বিস্ফোরক ও ছোট ছোট সেফ অস্ত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে মজুদ করছে। এসব অবৈধ পণ্য ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। যে কোন সময় দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারলেই এসব অবৈধ পণ্য বা বিস্ফোরক অস্ত্র তারা ব্যবহার করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী বড় মাপের এক অস্ত্র ব্যবসায়ী রবিউলকে র‌্যাব আটক করেছে শুক্রবার। তার কাছে একটি পিস্তল ও ম্যাগজিন পাওয়া গেছে। স্বীকার করেছে এক বছরে অস্ত্রের বারোটি চালান সে এনেছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি সমর্থকদের তা-বে গ্রামছাড়া ২৫ পরিবারের পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন করে মিজানুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে। তারা দীর্ঘদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামছাড়া হয়ে নিরাপদ দূরত্বে বসবাস করছে। মিজান বলেন ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থক চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আনু মিঞা ও ইউপি সদস্য ইয়াশিন আলী ফিটুর পক্ষে কাজ করায় জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়। তারই জের ধরে ২০১৬ সালের ১ জুন সংঘর্ষে সফিকুল নামের এক বিএনপি জামায়াত সমর্থক প্রথমে জখম হয় এবং পরে মারা যায়। এতে ক্ষিপ্ত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ও স্বাধীনতা পক্ষের প্রায় ২০ জনকে আসামি করে মামলা করে। এর মধ্যে রেখা খাতুন নামের এক অসহায় নিরাপরাধ মহিলাকে পর্যন্ত আসামি করা হয়। সন্ত্রাসীরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে প্রথমেই আমবাগানের গাছপালা কাটা থেকে শুরু করে আখ ও ফসলি জমির ফসল লুটপাট করা শুরু করে। এমনকি বাড়িঘরের মালপত্র লুটপাট, এমনকি দরজা জানালা ও ঘরের টিন খুলে নিয়ে যায়। একাত্তরের স্টাইলে মহিলাদের বেইজ্জত করা সাধারণ ব্যাপারে পরিণত করেছে তারা। বিএনপি-জামায়াত বেপরোয়া হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর নানা নির্যাতন চালানোর পরেও প্রশাসনের সরাসরি কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। শুধু ৫নং চককীর্তি ইউনিয়নের নির্যাতনের বিষয়টিই উপজেলার ১৫ ইউপিতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও নানা কারণে কেউ কিছু বলছে না। সীমান্তে নানা ধরনের গুজব রয়েছে। সন্ত্রাসীরা তাদের ‘ম্যানেজ‘ করেই এসব করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে গত তিন মাসে এই সীমান্ত পথে প্রায় আশি কেজি গান পাউডার এসেছে নির্বিঘেœ। আগামী ১২ মাসে তাদের (সন্ত্রাসীদের) এই ধরনের বিস্ফোরক আসার কথা রয়েছে প্রয়ে সাড়ে তিনশ’ কেজির। তারা ওপারে এসব ম্যানেজ করে রেখেছে। একই সঙ্গে আসবে ৪১ অস্ত্রের বড় চালান। ইতোমধ্যেই আবার অস্ত্র আসা শুরু হয়েছে। গান পাউডার বহনকারীরা খুবই চিহ্নিত। তাদের সকলেই চেনে। শিবগঞ্জ থেকে পালিয়ে যাওয়া জামায়াত-বিএনপি সন্ত্রাসীরা পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ ও মুর্শিদাবাদে অবস্তান নিয়ে অবৈধভাবে চোরাচালান ব্যবসা করছে। এদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে কানসাট পল্লীবিদ্যুত পোড়ানোসহ একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মামলা রয়েছে অথচ তিন বছরেও এ বিচার শুরু হয়নি। তাই তারা সরে রয়েছে নিরাপদ দূরত্বে। ভারতীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা এখন বিনা পুঁজির চোরাকারবারি সেজে নানা অবৈধপথে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে নানা ভারতীয় পণ্য। এদের সঙ্গে শিবগঞ্জ এলাকার বিএনপি, জামায়াত নেতাকর্মীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তারা ‘ম্যানেজ’ করে নির্বিঘেœ সীমান্তের এপার-ওপার চলাচল করে। সূত্র জানায়, জামায়াতের মহিলা কর্মীরা তাদের প্রতিদিন ও রাতের উঠান বৈঠক করে চলেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে শতাধিক কওমি ও সাধারণ মাদ্রাসা। সেখানে শিক্ষার্থী ও ভোলাহাট অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষকরা সমানে গোপনে সংগঠন হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
×