ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে আদ-দ্বীন নার্সিংয়ে জিন আতঙ্কে অসুস্থ ৩০ ॥ বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৬ মার্চ ২০১৭

যশোরে আদ-দ্বীন নার্সিংয়ে জিন আতঙ্কে অসুস্থ ৩০ ॥ বন্ধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের আদ-দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রীদের মধ্যে ‘জিন’ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে শনিবার রাতে ৩০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে রবিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থা বিবেচনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত নার্সিং ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথমে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করেন। পরে অবশ্য তারা মুখ খুলেছেন। জানিয়েছেন, নার্সিং ইনস্টিটিউটের দুই শিক্ষার্থীর সাইকোলজিক্যাল ইলনেসের কারণে অন্যরা ম্যাস হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়। তবে তারা এখন বিপন্মুক্ত। যশোর শহরতলীর চাঁচড়া এলাকায় অবস্থিত বেসরকারী আদ দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউটে এই ঘটনা ঘটে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক শিক্ষার্থী জানান, ইনস্টিটিউটের দোতলার যে রুমে শিক্ষার্থীরা থাকেন, সেগুলোর একটিরও দরজা নেই। আর নিচতলায় তাদের শেখানোর জন্যে একটি লাশ কাটা ঘর রয়েছে। এই কক্ষেরও দরজা নেই। এই কক্ষে তাদের শেখানোর জন্যে মরদেহের ব্যবচ্ছেদ করা হয়। এ কারণে কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রায় রাতেই ভয় পান। শিক্ষার্থীরা জানান, দিন ১৪ আগে তাদের মধ্যে একজন রাতে প্রচ- ভয় পান। বিষয়টি তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। পরদিন সকালে বিষয়টি তাদের হাউসকিপারকে জানালে তিনি তাদের দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দেন। তিনি বিষয়টি বাইরে প্রকাশে নিষেধ করেন। ছাত্রীরা জানান, শনিবার রাত ৯টার দিকে তাদের মধ্যে দুজন হঠাৎ করে ‘জিন জিন’ বলে চিৎকার করে উঠেন। একপর্যায়ে রুমে থাকা অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চার হয় এবং একে অপরের গলা টিপে ধরেন। একপর্যায়ে ওইরুমে থাকা ২৯ জনসহ পাশের রুমের মেয়েদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ে। ওইসময় ভয়ে অনেকের মুখ দিয়ে ফেনাও বের হয়। হুড়োহুড়িতে কয়েকজন পায়ের নিচেও চাপা পড়েন। এতে পাঁচ শিক্ষার্থীর অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। পরে তাদের নিজস্ব চিকিৎসা কেন্দ্র শহরের রেল রোডে অবস্থিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, এসব বিষয় যাতে বাইরে না বলা হয়, তার জন্য হাউস কিপার তাদের অনেকের মোবাইল ফোন সেট সিজ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ খান শাকিল আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নার্সিং ইনস্টিটিউটে মোট ১৯০ ছাত্রী রয়েছে। এদের মধ্যে দুটি মেয়ের সাইকোলজিক্যাল প্রবলেমে আছে। এদের অবস্থা মাইনর এবং মেজরের মাঝামাঝি। তারা প্রায়ই এ ধরনের আচরণ করে; অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়ে।’ ‘বিষয়টি হাউসকিপার আমাকে কখনও জানাননি। শনিবার রাতে এ বিষয়টি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ইনস্টিটিউটের পাঁচটি কক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আমাদের নিজস্ব হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারা এখন আশঙ্কামুক্ত।’ তিনি বলেন, রবিবার সকালে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ভবনের কিছু কাজ সংস্কার করার ব্যবস্থা নিয়েছি। সেকারণে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত নার্সিং ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মেয়েরা হল ত্যাগ করেছে। আগামী ১১ মার্চ ফের কার্যক্রম শুরু হবে।
×