ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০২০ সালে আরও পাল্টে যাবে পৃথিবী!

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৬ মার্চ ২০১৭

২০২০ সালে আরও পাল্টে  যাবে পৃথিবী!

এক সপ্তাহ ধরে স্পেনের বার্সেলোনায় আছি। আছি শব্দটা ব্যবহার করলাম এই কারণে যে, একটা ঘোরের ভেতর আছি- আর অন্য কিছুতেই নেই। অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, বাসার সঙ্গে তেমন একটা নেই, ঢাকার সঙ্গে নেই, বন্ধুদের সঙ্গে নেই- এই শহরটির বাইরে আর কারও সঙ্গেই তেমন কোন সম্পর্ক নেই। কালই চলে যাব এই শহরটা ছেড়ে। কিন্তু ঘোর থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি। প্রথম প্রেমে পড়লে যেমন একটা ঘোর থাকে, আমারও যেন সেই একই অবস্থা। এসেছিলাম, মোবাইল ওয়ার্ল্ড কনগ্রেস ২০১৭-এ। কিন্তু ঘোরটা তৈরি হয়েছে দুটি কারণে। প্রথমটি হলো বার্সেলোনা শহর; আর দ্বিতীয়টি হলো কোথায় যাচ্ছে এই পৃথিবী, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। আগামী তিন বছরের মধ্যেই এই গ্রহের বিশাল কিছু পরিবর্তন হবে। সেটা এখন আর কল্পনায় নয়, ঘটতেই যাচ্ছে বিষয়গুলো। আবারও পাল্টে যাবে এই পৃথিবী। প্রিয় বার্সেলোনা ঢাকা আমার প্রিয় শহর। অনেক ঝামেলা আছে ঢাকার। তারপরেও আমার ভাললাগার শীর্ষে আছে এই শহরটি। এরপর প্রেমে পড়েছি সিলিকন ভ্যালির। দ্বিতীয় প্রেমের শহর এটি। ওখানে নিঃশ্বাস নিলেই ভাললাগে। ওই শহরের রোদ, বৃষ্টি, পাহাড়, ঠা-া, প্রশান্ত মহাসাগর- সবকিছুর সঙ্গে এক ধরনের ভাললাগা কাজ করে। পাশাপাশি অসংখ্য হাইটেক কোম্পানি। রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই ভাললাগে। সেই তালিকায় এবারে যুক্ত হলো বার্সেলোনা। ইউরোপে খুব একটা আসা হয়নি আমার। পুরো একটা সপ্তাহ থাকার কোন ইতিহাস নেই। আমি নিশ্চিত ইউরোপের শহরগুলো আমেরিকার মতো নয়। পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো দেশ, তাদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাপন। আমার ধারণা, ইউরোপের অন্য শহরগুলোও প্রেমে পড়ার মতো। কিন্তু কেন যেন বার্সেলোনার জন্য আলাদা একটা টান তৈরি হয়ে গেছে। এই শহরে এমন কিছু আছে, যা আমাকে টেনে ধরছে, যা আমাকে পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ক্ষমতা রাখছে। আমি বার্সেলোনার ইতিহাস লিখতে যাচ্ছি না। কিন্তু একটি শহরকে ভাললাগার যে প্রধান কারণগুলো থাকতে পারে, তার কিছু বিষয় উল্লেখ করি। তাহলে আমার ভাললাগার বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ হয়ে থাকল। বার্সেলোনা সমুদ্রের পাড়ের একটি শহর। মেডিটেরিয়ান সাগরের পাড়ে সুন্দর ছিমছাম একটি শহর। কিন্তু শহরটির দারুণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা মানুষকে মুগ্ধ করবে। শহরটিতে মানুষের সংখ্যা কম। পুরো শহরে মাত্র ১৭ লাখের মতো মানুষ বসবাস করে। সেই কারণে লোকজনের ধাক্কাধাক্কি নেই। তবে শহরটির নিজস্বতা আছে। প্রথমেই যে বিষয়টি আমাকে মুগ্ধ করেছে তাহলো স্পেস- অনেক খোলা জায়গা, বিশাল চওড়া রাস্তা এবং গাড়ি চলাচলের জন্য যে পরিমাণ জায়গা, হাঁটার জন্য তার চেয়ে বেশি জায়গা। অর্থাৎ ফুটপাথ হলো বিশাল- কিছু স্থানে গাড়ি চলাচলের সড়কের চেয়ে ফুটপাথে জায়গা বেশি। অর্থাৎ শহরটি যখন থেকে গোড়াপত্তন হয়, তখন থেকে নিশ্চয়ই তারা এভাবে শহরটিকে দেখতে চেয়েছে। এমন নিশ্চয়ই নয় যে, গত কয়েক দশকে জিনিসগুলো করেছে। এটা ভেবে আমার ভাল লাগছে যে, কেউ না কেউ অনেক আগে থেকেই এই শহরটির পরিকল্পনা করে রেখেছিল এবং তারা জানত, একটি শহরে থাকতে গেলে কি কি জিনিসের প্রয়োজন থাকে এবং কিভাবে সেগুলো তৈরি করতে হয়। এই শহরে এমন সুন্দর ফুটপাথ যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু হেঁটেই কাটাচ্ছি। এই শহরের দুই বাড়ির ভেতর কোন ফাঁকা জায়গা নেই। এমনটা আরও অনেক শহরেই আছে। তবে এখানে খুব চোখে পড়ার মতো। ঢাকা শহর (কিংবা বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোতেও) সীমানার চারপাশে জায়গা ছেড়ে তারপর বাড়ি তৈরি করা হয়। এই বাড়ির জানালা পাশের বাড়ির জানালার সঙ্গে গিয়ে ধাক্কা লাগে। এই বাড়ির রান্নার ঘ্রাণ পাশের বাড়ির ড্রয়িং রুমে গিয়ে ক্ষুধার মাত্রা বাড়ায়। এখানে জায়গাটুকু নষ্ট না করে সেটা ফুটপাথকে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে সেই জায়গাটুকু মানুষ ব্যবহার করতে পারছে। একবার ভাবুন তো, বাড়িগুলো যদি হতো লাইন দিয়ে এবং দুই বাড়ির মাঝখানে জায়গা ছাড়তে না হতো, তাহলে কতগুলো বেশি জায়গা ব্যবহার হতো। দুই বাড়ির মাঝখানের চিপাগলি কার কাজে লাগে? সেই জায়গাটুকু যদি বাড়ির সামনের দিকে ছেড়ে দেয়া হতো, তাহলে রাস্তাগুলো আরও অনেক বেশি চওড়া হতো। আমরা এভাবে ভাবি না কেন! আমি নিশ্চিত, আমাদের যারা নগর পরিকল্পনা করেন, তাদের ভিন্ন ধ্যান-ধারণা রয়েছে। কিন্তু ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা অন্য শহরগুলো যে দিনকে দিন একটি অসহনীয় শহরে পরিণত হচ্ছে, সেটা থেকেই বুঝতে পারি আমরা সঠিক পথে নেই। এই শহরের আবহাওয়া প্রেমে পড়ার মতো। সারা বছরের গড় তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই সময়ে যদিও তাপমাত্রা আরেকটু কম এবং বেশ ঠা-াই লাগছে। কিন্তু আমার সঙ্গী আবির বারবার বলছে, এই রকম ঠা-াই তো ভাল লাগছে। আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে থাকি। ও মুচকি হাসি দিয়ে বলে, আমি তো ঢাকায় শীতকালেও শীতের কাপড় পরতে পারি না, এখন একটু পরতে পারছি। শহরটিতে একটু পরপরই মেট্রোস্টেশন। মাটির নিচ দিয়ে পুরো শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই এই ১৭ লাখ মানুষকে কখনই মাটির ওপরে দেখা যায় না। আর এই মেট্রো দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে আপনাকে যে পরিমাণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে, তাতে আপনার জীবনে রোগবালাই থাকার কোন কারণ নেই। আমরা অনেকটা সময় বসে থাকি পানির ধারে। বুড়িগঙ্গার মতো কালো পানি নয়, টলমলে পানি। ওখানে বসে বারবার বুড়িগঙ্গার কথা মনে হচ্ছিল। আমরা এই নদীটাকে বাঁচাতে পারলাম না। এটা তো আমাদের চোখের সামনেই মারা গেল। এখন যে কালো পানি বয়ে যায় বুড়িগঙ্গায়, তা আর কখনই ঠিক হবে না। এই নদীকে ঘিরে যে সুন্দর একটি বাসযোগ্য শহর হতে পারত ঢাকা, এই শহরটি সেটা পেল না। আমি তোমাকে মিস করব, প্রিয় শহর বার্সেলোনা। ফাইভ জি নেটওয়ার্ক বার্সেলোনা শহর যেমন আমাকে মুগ্ধ করে টেনে ধরছে, একইভাবে মাথা ঘুরছে নতুন প্রজন্মের ওয়্যারলেস যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি দেখে। ২০২০ সালে এই পৃথিবী ফাইভ-জি উপভোগ করবে। বাংলাদেশের মানুষ থ্রি-জি পেয়েছে। যদিও সেটা সবাই ব্যবহার করছে না এবং পুরোমাত্রায় সুবিধা নিতে পারছে না। পৃথিবীর বেশ বড় একটি অংশ চলে গেছে ফোর-জি নেটওয়ার্কে। আর এখন সবাই তৈরি হয়ে গেছে ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য। বার্সেলোনার মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে এবারে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বিষয় ছিল পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক, যাকে বলা হচ্ছে ফাইভ-জি। আমি ইচ্ছে করেই ইংরেজী শব্দগুলো রাখছি, কারণ মানুষ এভাবেই এগুলোকে চিনতে শিখবে। যেসব দেশ ফোর-জি (আরেক নামে আছে, এলটিই) নিয়ে এগিয়ে গেছে, সেসব দেশের সার্বিক অর্থনীতিও আগানো। তারা এত দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে সমাজকে সামনে এগিয়ে নিতে পারছে। কিন্তু ফাইভ-জি এলে পাল্টে যাবে এই গ্রহ। আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে আরও বেশি। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে মোট ৮টি বিশাল হলরুমে যে প্রদর্শনী হচ্ছিল, তার বিশাল অংশজুড়ে ছিল ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের প্রদর্শনী। যেসব প্রতিষ্ঠান ফাইভ-জি তৈরি করে ফেলেছে, সেগুলো তারা দেখাতে নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি এই ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যে সকল পণ্য সুবিধা পাবে, তারাও তাদের পণ্য এবং সেবাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে। এখন সঙ্গত কারণেই কেউ প্রশ্ন করতে পারেন কী থাকছে এই ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে? সাধারণ ভাষায় যদি বলি তাহলে বলতে হয় ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে একজন গ্রাহক ৫ গিগাবিটস/সেকেন্ড গতির ডাউনলোড ইন্টারনেট সেবা পেতে পারেন। যারা বুঝতে পারছেন না এটা কত বিশাল গতির ইন্টারনেট, তাদের জন্য নিচে একটি গ্রাফ দিয়ে দিচ্ছি (চিত্র-১)। এটা যদি একটু খেয়াল করেন আমরা থ্রি-জি (এখানে ৩.৫ জি দেখানো হয়েছে) নেটওয়ার্ক সর্বোচ্চ ৪২.২ মেগাবিটস/সে. গতি পেতে পারি। সেখানে ফোর-জি হলে ১০০ থেকে ১৫০ মেগাবিটস/সে. গতির ইন্টারনেট পাওয়া সম্ভব। ফোর-জি নেটওয়ার্কের একটি এ্যাডভান্সড মোড আছে, যেখানে ১,০০০ মেগাবিটস/সে. গতির ইন্টারনেট দেয়া সম্ভব। আর সেখানে ফাইভ-জি হলে ১০ হাজার মেগাবিটস/সে. গতির ইন্টারনেট দেয়া সম্ভব হবে। গ্রাফটির শেষ বারটি দেখলেই মাথা ঘোরাতে থাকে। অনেকেই ভাবতে পারেন, এত গতির ইন্টারনেট দিয়ে আমরা কি করব? আমরা তো এখনও ঠিকমতো থ্রি-জি ব্যবহার করতে পারছি না। এখানে শুধু বলে রাখা ভাল, ইন্টারনেট কিন্তু শুধু মানুষ ব্যবহার করে না, ইন্টারনেট এখন অনেক যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করে। ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী হবে আগামী দিনের গাড়ি। আমাদের সবগুলো গাড়ি ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, ঘরের ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতিগুলো যুক্ত থাকবে, আপনার পরিধেয় অনেক কিছুই ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করবে, যা আপনি বুঝতে পারবেন না। শুধু মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখা এবং ফেসবুক করাই ইন্টারনেট নয়। এতদিন সবাই মনে করত ফাইভ-জি হলো থিউরি, বাস্তবে নেই। কিন্তু অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এবার মেলাতে দেখে গেল ফাইভ-জি এখন বাস্তব। আমরা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের ফাইভ-জি নিজের চোখে দেখলাম। তাদের ডাউনলোড স্পিড, গাড়ির ভেতর, ড্রাইভারবিহীন গাড়ির ভেতর এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পণ্যগুলোতে। সবাই তাক করে আছে ২০২০ সালে এগুলো বাজারে পাওয়া যাবে, মানুষ ব্যবহার করতে পারবে। টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। বিশ্বের অনেক দেশ, অনেক জাতি ২০২০ সালে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে চলে যাবে এবং এই গতির ইন্টারনেটকে ঘিরে যা হবে তা আরেকবার পাল্টে দেবে এই গ্রহককে। ২০২০-এর পৃথিবী ১৯৮০ সালের পর থেকে প্রতি ১০ বছরে মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশাল পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। একটা সময়ে বাংলাদেশের মানুষ সিটিসেলের বিশাল আকারের মোবাইল ফোন দেখতে পেয়েছিল। ১৯৯০ সালের পর থেকেই কিন্তু মোবাইলের আসল বিপ্লব শুরু হয়। মানুষ ছোট আকারের মোবাইল হেন্ডসেট পেতে শুরু করে। দাম চলে আসে নাগালের ভেতর। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে শুরু করে। তখন মূলত জিএসএম নেটওয়ার্ক বিস্তার পেতে শুরু করে। ২০০০ সালে এই গ্রহ দুটি বিশাল পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায়। একটি হলো বিগত সেঞ্চুরিকে পেছনে ফেলে আসে; তার সঙ্গে কম্পিউটারের মিলেনিয়াম বাগ (‘০০’) বলে যে বিশাল ঝুঁকি ছিল সেটা কাটিয়ে ওঠে। আগে কম্পিউটারে শেষের দুই ডিজিট দিয়ে বছর লিখত। এরপর থেকে পুরো চার ডিজিট চালু করতে হলো। কিন্তু তারচেয়েও বড় পরিবর্তন হয় মোবাইল নেটওয়ার্কে। মানুষ থ্রি-জি পেতে শুরু করে এবং হাতের মুঠোয় এত ক্ষমতা আগে মানুষ পায়নি। ২০১০ সালের দিকে মানুষ ফোর-জি পেতে শুরু করে। ফলে মানুষের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা চলে আসে। এখন ছোট মোবাইল ফোনে যে পরিমাণ কম্পিউটিং ক্ষমতা থাকে, যে পরিমাণ তথ্যের সরবরাহ থাকে, তা আগে পায়নি মানুষ। ফলে রাস্তায় কিংবা গাড়িতে কিংবা বাসায় সোফায় বসে মানুষ যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ পেতে শুরু করে, তাতে নতুন ধরনের অর্থনীতি এসে যোগ হয়। ই-কমার্সের পাশাপাশি ভিডিও স্ট্রিমিং ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু ২০২০ সালের পরিবর্তন অনেক বড়। এত বিশাল পরিমাণের ডাটা/ইন্টারনেট মানুষ খুব একটা চিন্তা করেনি। বর্তমান সময়ে একটি ভাল বড় এইচডি সিনেমা ডাউনলোড করতে ফোর-জি নেটওয়ার্কে কয়েক মিনিট সময় লাগে। মুহূর্তেই ছবিটি চলে আসে আপনার কাছে। কিন্তু ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে সেটা কেউ ডাউনলোড করাটা টের পাবে কিনা সেটাই সন্দেহ আছে। বর্তমান সময়ে একটি ফটো ডাইনলোড করতে যেমন অনুভূতি হয়, তখন একটি পুরো সিনেমা ডাউনলোড করতে একই রকম অনুভূতি হবে। তবে আমি আগেই বলেছি, এত দ্রুত গতির ইন্টারনেট কিন্তু শুধু ডাউনলোড করার জন্য ব্যবহার হবে না। আমাদের চারপাশের সকল যন্ত্র যেহেতু ধীরে ধীরে ইন্টারনেটে চলে আসবে, তাই তাদের গতির প্রয়োজন হবে। আপনার গাড়িটি যত বেগে চলবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দ্রুত গতির ইন্টারনেট লাগবে, আপনার বাসায় ফ্রিজ, বাচ্চাদের খেলনা, টিভি স্ক্রিন, মাইক্রওয়েভ, পানি গরম করার গিজার, রান্নাঘরের যন্ত্রপাতি- সব কিছুই যখন যুক্ত হয়ে যাবে, তখন প্রয়োজন হবে আরও অনেক বেশি গতির, আরও অনেক বেশি ক্যাপাসিটির। সেইদিকেই পা বাড়িয়ে দিয়েছে এই গ্রহ। ২০২০ সালের পর আসলেই ভিন্ন এক জগতে প্রবেশ করতে যাচ্ছি আমরা। এখন মনে হচ্ছে মরার আগে অনেক কিছুই দেখে যেতে পারব। বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের মানুষ এখনও থ্রি-জির সুবিধা পায়নি। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মূল্য এখনও অনেক বেশি। ছোট একটা উদাহরণ দেই, তাহলেই বুঝতে পারবেন। আমি সাধারণত বিভিন্ন প্যাকেজ কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। গত মাসে হঠাৎ করেই ব্যবহার একটু বেড়ে গিয়েছিল এবং প্যাকেজটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। খেয়াল করিনি। কিন্তু মুহূর্তেই দেখি আমার কাছে পরপর দুটি এসএমএস। প্যাকেজের বাইরে আমি কয়েক মিনিট ইন্টারনেট ব্যবহার করেছিলাম এবং আমার প্রি-পেইড এ্যাকাউন্ট থেকে ৬৮ টাকা কেটে নিয়েছে। প্যাকেজের বাইরে ইন্টারনেটের দাম ভয়াবহ রকমের বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে খুব বেশি হলে ১ কোটি মানুষ আছে যারা মাসে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ৫০ টাকার একটি প্যাকেজ কিনে। সরকারী যে হিসাবে আমরা বলি ৫ কোটি মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় রয়েছে, সেই তথ্য আসল চিত্রকে তুলে ধরে না। এগুলো মোবাইল ফোন কোম্পানির মাসে যে রিপোর্ট জমা দিতে হয় তার ভিত্তিতে করা, যার বেশিরভাগটাই ভুল। এভাবে একটি দেশে ইন্টারনেটের বিকাশ হয় না। ৯০-এর দশকে আমরা ইন্টারনেট নিয়ে যে লাফালাফি করতাম, বাংলাদেশ এখনও সেই জায়গাটিতেই রয়ে গেছে। খুব একটা এগোয়নি। কিন্তু পৃথিবী তো আর বসে থাকেনি কারও জন্য। বাংলাদেশের মানুষও একদিন ভাল থ্রি-জি পাবে, ফোর-জি পাবে, এমনকি ফাইভ-জি পাবে। কিন্তু ততদিনে পৃথিবী ১০-জি নেটওয়ার্কে চলে যাবে। বর্তমান বাংলাদেশে যে গ্রোথ আমরা দেখতে পাই, সেটার চেয়ে পৃথিবীর গ্রোথ অনেক বেশি। দূরত্ব অনেকগুণ। এটাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে। তবে অন্যদের উন্নয়ন যেহেতু অনেকগুণ বেশি, তখন আমরা তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের দেশের একজন ১৮ বছরের যুবকের যে জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকার প্রয়োজন ছিল, বিশ্বের মাপকাঠিতে সেটা অনেক পিছিয়ে। এই সহজ বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি না কিংবা পারলেও ঠিকমতো এড্রেস করতে পারছি না। একটা সময়ে আমরা ডিজিটাল ডিভাইড নিয়ে কথা বলতাম। আমরা বলতাম, এই বিশ্ব হবে ‘যার কাছে সংযোগ আছে’ আর ‘যার কাছে নেই’- এই দুইয়ের পৃথিবী। কিন্তু বর্তমান পৃথিবী আরও বেশি কঠিন বাস্তবতায় পড়ে গেছে। শুধু সংযোগ থাকলেই হচ্ছে না, আপনাকে দেখতে হচ্ছে পুরো সমাজ কতটা যুক্ত হলো, কিভাবে যুক্ত হলো। সেই গ্যাপটা যত বাড়বে আমরা ততই পিছিয়ে পড়া একটি জাতি হব। সেই কারণে বাংলাদেশে একটি লিপ-ফ্রগ করতে পারে। বাংলাদেশ এখন ফোর-জি নেটওয়ার্কে যাবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ দ্রুত ফাইভ-জির প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে পারে। তাহলে একটা বড় ধাক্কায় অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে পারে এই দেশ এই জনপদ। ৪ মার্চ ২০১৭ বার্সেলোনা, স্পেন থেকে ুং@ঢ়ৎরুড়.পড়স
×