ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর চার কোনায় ৪ মিনি পুলিশ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৫ মার্চ ২০১৭

রাজধানীর চার কোনায় ৪ মিনি পুলিশ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর চার কোনায় চারটি মিনি পুলিশ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। পুলিশের আবাসন সঙ্কট নিরসনে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর পুলিশ সদস্যদের আবাসিক সঙ্কট এখন খুবই প্রকট। পুলিশের আবাসিক সঙ্কট এতই প্রকট যে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ সদস্যদের অনেকেরই এক বিছানায় একাধিক জন কিংবা পালা করে ঘুমাতে হয়। পুলিশের আবাসন সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে প্রতিটি পুলিশ লাইন ১০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে। এ জন্য রাজধানীর উপকণ্ঠ এলাকা কাটাসুর, পূর্বাচল, ডেমরা ও উত্তরা এলাকায় ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের আবাসন সমস্যা সমাধানের অংশ হিসাবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিএমপি সূত্র জানান, বর্তমানে ঢাকা মহানগরে প্রায় ৪০ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন, যার মধ্যে কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টরের সংখ্যা সর্বাধিক। এর মধ্যে আবার প্রতিবছর এরসঙ্গে আরও দেড় হাজার সদস্য যোগ হয়। অনেক পুলিশ সদস্যই আবার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সরকারী কোয়ার্টারে ক্ষমতার গুণে ভাগ্যবান যারা তাদের স্থান হলেও নিরীহদের ভাড়া বাসার ওপর নির্ভর করতে হয়। বেশি বিপাকে পড়েন ব্যাচেলর পুলিশ কনস্টেলবরা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাচেলর হিসাবে ৪৯টি থানায় প্রায় ৮ হাজার পুলিশ সদস্যের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বাকি সদস্যদের রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিএমও) বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এসব স্থানে বসবাসকারী পুলিশ সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডিউটি করেন। রাস্তায় যানজটের কারণে তারা সঠিক সময় কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের হয়ে অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করেন কর্তব্যরতরা। ডিএমপি সূত্র জানান, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের আবাসন সঙ্কট দীর্ঘদিনের। তবে ঢাকায় এর অবস্থা আরও নাজুক। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পালা করে ঘুমাতে হয় পুলিশ সদস্যদের। বেশি কষ্টে থাকেন কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টররা। অনেক সময় ডিউটি শেষ করে ব্যারাকে ফিরতে দেরি হলে জায়গা দখল হয়ে যায়। ফলে না ঘুমিয়েই রাত কাটিয়ে পরেরদিন দায়িত্ব পালনে বের হতে হয় অনেক পুলিশ সদস্যের। এসব কথা মাথায় রেখেই দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীতে মিনি পুলিশ লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এতদিন পর্যাপ্ত জমির অভাবে এসব উদ্যোগ আশার মুখ দেখছিল না। তবে সরকারের আন্তরিকতার কারণে সম্প্রতি পুলিশের জমি সঙ্কট কেটে গেছে। এরই মধ্যে পূর্বাচলের কাঞ্চন ব্রিজের পাশে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে ওই জমি পুলিশের দখলে রয়েছে। এছাড়া ডেমরা এলাকায় আরও ১০ একর জমি পুলিশের দখলে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই জমি অধিগ্রহণের পর পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। খুব শীঘ্রই এই দুইস্থানে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। সেখানে জেলা পর্যায়ে পুলিশ লাইনের মত সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে। ডিএমপি সূত্র জানান, ২০০৯ সালে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উত্তরা, ডেমরা, রায়েরবাজার বধ্যভূমির পাশে ও মিলব্যারাক এলাকায় ৪টি মিনি পুলিশ লাইন করার নির্দেশ দেন। পুলিশের দীর্ঘদিনের আবাসন সঙ্কট নিরসনকল্পে পুলিশের চারটি মিনি পুলিশ লাইন নির্মাণের নির্দেশ দেন তিনি। এতদিন নানা জটিলতায় মিনি পুলিশ লাইনের কাজ এগোতে পারেনি। খুব শীঘ্রই রাজধানীতে চারটি পুলিশ লাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। রাজধানীর চার কোনায় চারটি পুলিশ লাইন নির্মাণের কারণ হচ্ছে, যানজটের কারণে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পুলিশ সদস্যদের গিয়ে ডিউটি করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের আবাসন সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। এর অংশ হিসাবে সম্প্রতি চারটি মিনি পুলিশ লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আধুনিক এই মিনি পুলিশ লাইনের প্রতিটিতে প্রায় ৫ হাজার ব্যাচেলর পুলিশ সদস্য থাকার সুবিধা পাবেন। মোহাম্মদপুরের কাটাসুর ও উত্তরার শেষপ্রান্তে আরও ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পূর্বাচলের কাঞ্চন ব্রিজের পাশে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই জমি পুলিশের দখলেই আছে। এ ছাড়া ডেমরা এলাকায় আরও ১০ একর জমি দখলে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই জমি অধিগ্রহণের পর পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। জরুরী প্রয়োজনে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে ঢাকার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ফোর্স পাঠাতে সময় লেগে যায়। সে বিবেচনায় ঢাকার চার কোণায় ৪টি মিনি পুলিশ লাইন করার উদ্যোগ নেয়া হলেও বরাদ্দ ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় কার্যক্রম এত দিন এগোয়নি। জটিলতা কাটিয়ে খুব শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে, যেখানে থাকবে জেলা পুলিশ লাইনের সব সুযোগ-সুবিধাই।
×