ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সিরিজ

আসল লড়াইয়ের অপেক্ষায় মুশফিকরা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৫ মার্চ ২০১৭

আসল লড়াইয়ের অপেক্ষায় মুশফিকরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে শনিবার বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম একটি ছবি তুলেছেন। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তার অফিসিয়াল পেজে পোস্টও করেছেন। তাতে লিখেছেনও, ‘এখানে আবার এসেছি। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’ এ স্টেডিয়ামে ছবি তুলে মুশফিকের দোয়া চাওয়ার কারণও আছে। এ স্টেডিয়ামেই যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মঙ্গলবার থেকে সফরের আসল টেস্ট (পরীক্ষা) শুরু হবে মুশফিকদের। প্রথম টেস্ট দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজের যাত্রা শুরু হবে। হাতে আছে আর মাত্র ২দিন। এরপরই শুরু হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। ৭ মার্চ গলে প্রথম টেস্ট শুরু হবে। এরপর ১৫ মার্চ কলম্বোয় শুরু হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দ্বিতীয় ও সিরিজের শেষ টেস্ট। গল টেস্টকেই বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ এই টেস্টে ভাল করলে সামনে পুরো সফরজুড়েই ভাল করার অনুপ্রেরণা মিলে যাবে। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ সিরিজে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই টেস্টের সিরিজের একটি ম্যাচে ড্র করেছিল। তিন ওয়ানডের একটিতে জিতেছিল। একটি টি২০তে হেরেছিল। গল থেকেই ২০১৩ সালে হওয়া সেই সিরিজের শুরুটা হয়েছিল। প্রথম টেস্টেই ড্র করেছিল বাংলাদেশ দাপটের সঙ্গে খেলেই। তিলকারতেœ দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা, লাহিরু থিরিমান্নে, এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দিনেশ চান্দিমাল, নুয়ান কুলাসেকারা, রঙ্গনা হেরাথ, অজন্থা মেন্ডিসকে নিয়ে গড়া দলও বাংলাদেশকে গল টেস্টে হারাতে পারেনি। এবার তো সেই তুলনায় অনেক অনভিজ্ঞ ও তারুণ্যনির্ভর দল শ্রীলঙ্কা। তাই ভাল কিছু করার সুযোগও আছে। আবার ২০১৩ সালে গল টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহীম। বিদেশের মাটিতে টেস্টে প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব করেছিলেন তিনি। বিদেশের মাটিতে নেতৃত্ব দেয়া প্রথম টেস্টেই আবার ইতিহাস গড়েছিলেন। দেশের হয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়। তাই মুশফিকের কাছে গল টেস্টটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অনুপ্রেরণাদায়ক ও আবেগেরও। তাইতো গল স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে মুশফিক ফেসবুকে ছবিও পোস্ট করেছেন। দোয়াও চেয়েছেন। তিনি ভাল করেই জানেন। এখানে ভাল খেলা মানে সফরজুড়ে ভাল খেলার অনুপ্রেরণা পেয়ে যাওয়া। এ সিরিজে অংশ নিতে গতমাসের ২৭ তারিখে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দল। শুরুতে টেস্ট সিরিজ হবে। তাই টেস্ট দল গেছে খেলতে। টেস্ট সিরিজ শেষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে। দুই দলের মধ্যকার ডাম্বুলায় ২৫ ও ২৮ মার্চ যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় এবং ১ এপ্রিল কলম্বোতে তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে কলম্বোতেই ৪ ও ৬ এপ্রিল যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ হবে। হাতে থাকা অল্প কয়েকটা দিন তাই বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা ভালভাবে প্রস্তুতি সেরে নিতে চান। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে ড্র হওয়া দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে যেখানে দুর্বলতা ছিল, সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে চায়। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং ও পেস আক্রমণে ভালই করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। কিন্তু স্পিনে দুর্বলতা ধরা পড়েছে। শুধু শ্রীলঙ্কা জাতীয় দল থেকে ম্যাচটিতে দিনেশ চান্দিমাল খেলেছেন। তিনি একাই পাল্টা জবাব দিয়েছেন। যে জবাব বাংলাদেশের সামনে হুমকি হয়েই ধরা দিয়েছে। কারণ প্রস্তুতি ম্যাচে ‘জয়-পরাজয়’ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা যখন (তামিম ইকবাল ১৩৬ রি.হা., মুমিনুল হক ৭৩ রি. হা., মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪৩, লিটন কুমার দাস ৫৭*) ভাল করেছেন, নিজেদের প্রমাণ করেছেন; সেখানে বোলারদেরও ভাল করা দরকার ছিল। কিন্তু বোলারদের মধ্যে পেসাররা (তাসকিন আহমেদ ৩/৪১, মুস্তাফিজুর রহমান ২/২৮) ভাল করলেও স্পিনাররা ছিলেন নিষ্প্রভ (মেহেদী হাসান মিরাজ ১/৬৮, তাইজুল ০/৭৯, সাকিব ০/৪৯)। তাইতো এক চান্দিমালই (১৯০*) কাঁপিয়ে দিয়েছেন। এটি টেস্টে দলকে ভাবনায় ফেলতে পারে। টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে অনভিজ্ঞ দল ধরা হচ্ছে। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের পুরো শক্তির দল খেলেছে। সেখানে শ্রীলঙ্কার শুধু চান্দিমাল খেলেছেন। তাতেই বাংলাদেশ দাপট দেখাতে পারেনি। আর টেস্টে তো ওপেনার করুণারতœ, কুশল মেন্ডিস, চান্দিমাল, থারাঙ্গা, হেরাথরা রয়েছেন। প্রস্ততি ম্যাচে যে অবস্থা দেখা গেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা দলটিকে কোনভাবেই হেলাফেলা করা উচিত হচ্ছে না। কারণ তরুণ হলেও টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ভরপুর হচ্ছে তাদের। সেই খেলার অভিজ্ঞতাই তারা কাজে লাগাতে পারে। তাই তো মুশফিক কিংবা বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে সাবধানী পথে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। মুশফিক যেমন ‘আমাদের পক্ষেই রেজাল্ট আসবে’ বলার সঙ্গে একটু সাবধানও ছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমাদের ভুললে চলবে না যে, এটা তাদেরই দেশে খেলা। তারা যদিও চাপে থাকবে। টেস্টে এখনও আমরা কোন দলকে বলে কয়ে হারিয়ে দেয়ার মতো জায়গায় নেই।’ হাতুরাসিংহে বলেছিলেন, ‘সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় শ্রীলঙ্কানদের পারফর্মেন্স দেখেছেন নিশ্চয়ই। কাজেই এখানে ওদের হাল্কাভাবে নেয়ার কোন সুযোগই নেই।’ এরপরও আশা থাকে। ভাল খেলতে পারলে জেতার স্বপ্নও দেখা হয়। গলে টেস্ট দিয়েই যেহেতু সিরিজ শুরু। তাই মুশফিকও ভাল কিছুর স্বপ্ন দেখবেন এটাই স্বাভাবিক। সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আসল টেস্টে নামার অপেক্ষাতেই আছে বাংলাদেশ।
×