ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে পরিচ্ছন্নতা-কর্মীর মজুরি ৩৭ টাকা দিন!

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৫ মার্চ ২০১৭

যশোরে পরিচ্ছন্নতা-কর্মীর মজুরি ৩৭ টাকা দিন!

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ সবচেয়ে নোংরা কাজে শ্রম দিলেও ‘জীবন বাঁচানোর মতো’ মজুরি থেকে বঞ্চিত যশোর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। প্রতিদিন তারা মজুরি পায় ৩৭ টাকা, যা দিয়ে একটি পরিবার প্রতিপালন অসম্ভব। এজন্য তারা পৌরসভার চাকরি শেষে শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ল্যাট্রিন ও ড্রেন পরিষ্কারের কাজ করে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যশোর পৌরসভার এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখনও তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত তাদের চাকরি হারানোর ভয়ে থাকতে হয়। পার্বতী বিশ্বাসের লিকলিকে চেহারা দেখে ঠাওর করার উপায় নেই তার বয়স ৩৫ পেরিয়েছে। মনে হবে ঢের বেশি। শনিবার ঢাকা রোডের হরিজনপল্লীর বাসিন্দা পার্বতীর সঙ্গে দেখা হয় যশোর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বারান্দিপাড়া আমতলা এলাকায়। ভরদুপুরে কোদাল কাঁধে তিনি ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। উদ্দেশ্য যদি মেলে কারও বাড়ির ল্যাট্রিন কিংবা ড্রেন পরিষ্কারের কাজ। পার্বতী জানান, চার সদস্যের পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঝাড়ুদার হিসেবে চাকরি করছেন যশোর পৌরসভায়। এখন তিনি বেতন পান প্রতিদিন ৩৭ টাকা। তবে তার চাকরি এখনও স্থায়ী হয়নি। অসুস্থ অথবা অন্য কোন কারণে একদিন কাজে যোগ দিতে না পারলে সে দিনের বেতন কেটে রাখা হয়। পৌরসভার চাকরি আর অন্যের বাড়ির ময়লা সাফ করে সব মিলে মাসে পার্বতীর রোজগার হাজার তিনেক টাকা, যা দিয়ে কোনমতে চলছে চার সদস্যের পরিবার। শুধু পার্বতী নয়, একই সমস্যায় আছেন যশোর পৌর এলাকায় ঢাকা রোডের হরিজনপল্লী, পুরাতন পৌরসভা হরিজনপল্লী ও রেলস্টেশন এলাকার হরিজনপল্লীর হাজার তিনেক বাসিন্দা। এসব পল্লীর প্রায় প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ যশোর পৌরসভার শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিভাগে চাকরি করে। পৌরসভার সচিব আব্দুল্লাহ জানান, পৌর এলাকার ময়লা পরিবহন ও ড্রেন পরিষ্কারের জন্য ৫১৬ পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে, যাদের হাজিরা ভিত্তিতে মজুরি দেয়া হয়। কাজে যোগ দিলে দিনে পায় ৩৭ টাকা। এছাড়া এরা পৌরসভার জায়গায় থাকে। বিদ্যুত ও পানির বিল দেয় না। অর্ধযুগ আগে এদের একবার বেতন বাড়ানো হয়েছিল। পৌরসভা হরিজন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির জন্য আমরা বিভিন্ন সময় পৌরসভার কাছে দাবি জানিয়েছি। তবে অর্ধযুগেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কোন বেতন বাড়েনি। বর্তমানে যে টাকা দেয়া হয় তা দিয়ে কোনভাবেই সংসার চলে না। এজন্য পৌরসভার কাজ শেষে সুইপাররা বাড়তি কাজের সন্ধানে মানুষের বাড়ি বাড়ি যায়। তবে সবার সব দিন কাজ মেলে না। এজন্য তারা চরম কষ্টে আছে।’
×