ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জমি নিয়ে বিরোধের জের ॥ হাসপাতালে কাতরাচ্ছে অসহায় মালেকা

সিঁধ কেটে সৎ বোনকে এ্যাসিডে ঝলসে দিল ভাই ও ভাতিজা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৫ মার্চ ২০১৭

সিঁধ কেটে সৎ বোনকে এ্যাসিডে ঝলসে দিল ভাই ও ভাতিজা

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হত্যা চেষ্টার পর গভীর রাতে ঘরে সিঁধ কেটে ঢুকে বিমাতা বোনকে এ্যাসিড মেরে ঝলসে দিয়েছে ভাই ও ভাতিজা। ঘটনা ঘটেছে নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের পূর্ব রামখানা তালুকদারপাড়া গ্রামে। এ্যাসিডে আহত নারী রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগে ২০০৯ সালে ওই নারীকে হত্যা চেষ্টা করে তারা। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, শনিবার ভোরে মালেকা বানুর শোবার ঘরে সিঁধ কেটে প্রবেশ করে তার বিমাতা ভাই হায়দার আলী, তার দুই ছেলে দুলাল হোসেন ও মিঠু, বোনজামাই গাজীউর রহমান মাস্টার, ফুফাত ভাই রুহুল আমিন। এ সময় হায়দার আলী মালেকার মুখ চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে বিছানা থেকে মেঝেয় নামিয়ে তাকে চেপে ধরে। পরে দুলাল ও গাজী তার দুই হাত চেপে ধরে। হায়দার বোতল থেকে এ্যাসিড তার শরীরে ঢেলে দেয়। এ সময় দরজায় পাহারা দিচ্ছিল মিঠু ও রুহুল আমিন। মালেকা চিৎকার দিলে সবাই পালিয়ে যায়। চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ছুটে আসে। দীর্ঘক্ষণ পুড়ে যাওয়া শরীরে পানি ঢেলে সকালে থানায় নিয়ে এলে পুলিশ তাকে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। বেলা ১১টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠায়। মালেকা বানু বলেন, তারা যখন ঘরে ঢোকে তখন টের পাই। এ সময় হায়দার মুখ চেপে ধরে মাটিতে নামায়। দুলাল ও গাজী দুই হাত ও পা চেপে ধরে। হায়দার বোতল থেকে পানির মতোন জিনিসগুলা ঢালি দেয়। মিঠু ও রুহুল দরজায় ছিল। আমার শরীর যখন পুড়ে যাচ্ছিল তখন জোরে চিৎকার দেই। সবাই পালায়। আমি চিৎকার দিতে থাকি। পরে অনেকে এসে আমার গায় পানি দেয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, পৈতৃকসূত্রে পাওয়া জমি নিয়ে হায়দার আলী ও মালেকা বানুর বিরোধ চলে আসছে ২০০৯ সাল থেকে। সে সময় মালেকাকে হত্যার উদ্দেশে হায়দার আলী বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বাইরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সারা শরীরে আঘাত করে। কুঠার দিয়ে তার দুই পা থেঁতলে দেয়। দীর্ঘ এক বছর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসে মালেকা। তার স্বামীর নামও হায়দার আলী। তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী। ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালায় সে। ২০১৩ সালে তার ভাইয়েরা নিজেরা মারামারি করে একজনকে হত্যা করে সে মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়। এভাবেই তার ওপর চলছে একর পর এক হয়রানি ও নির্যাতন। নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জিআরএম মোকসেদুর রহমান জানান, মালেকার শরীরের প্রায় ২৭ ভাগ পুড়ে গেছে। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এছাড়া কি ধরনের এ্যাসিড ছোড়া হয়েছে তা শনাক্তের উপায় এখানে নেই। এজন্য তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নাগেশ্বরী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত বিরোধে বিমাতা ভাই ও ভাতিজারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ দোষীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে।
×